Exclusive, Pullela Gopichand: ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ের থেকেও Thomas Cup-কে এগিয়ে রাখলেন জাতীয় কোচ
দীর্ঘ ৭৩ বছর পর অবশেষে খরা কাটল। প্রথম বার থমাস কাপের ফাইনাল (Thomas Cup) জিতল ভারত (India)। সৈয়দ মোদী (Syed Modi), প্রকাশ পাড়ুকোন (Prakash Padukone), পুল্লেলা গোপীচাঁদরা (Pullela Gopichand) কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকার সময়েও যা করতে পারেননি সেটাই করে দেখিয়েছেন এইএচএস প্রণয় (HS Prannoy) ও সাত্যিক সাইরাজ রানকিরেড্ডি-চিরাগ শেট্টিরা (Satwiksairaj Rankireddy-Chirag Shetty)।
সব্যসাচী বাগচী
মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান। নিজের মন্তব্যকে বদলে ফেললেন পুল্লেলা গোপীচাঁদ (Pullela Gopichand)। কারণ তাঁর হাতে গড়া ছেলেরা ইতিহাস গড়ে দীর্ঘ ৭৩ বছরের খরা কাটিয়ে থমাস কাপে (Thomas Cup 2022) ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে মেগা ফাইনালে নামার আগে তাঁর বক্তব্য ছিল, "প্রণয়,সাত্যিকদের এই যাত্রা আমার কাছে অনেকটা ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে যাওয়ার মতো।" তবে ১৪বারের চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে দিতেই নিজের অবস্থান পাল্টে ফেললেন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন জয়ী এই তারকা। কিদাম্বি শ্রীকান্ত (Kidambi Srikanth), লক্ষ্য সেনরা (Lakshya Sen) ব্যাংককে সোনা জেতার পর থেকে নাগাড়ে তাঁকে চেষ্টা করলেও অধরা ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত রাতের দিকে জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন গোপী। জানিয়ে দিলেন, টিম ইন্ডিয়ার (Team India) এই জয় 'কপিলস ডেভিলস'-এর (Kapils Devlis) ১৯৮৩ সালের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের থেকেও বড়।
প্রশ্ন: ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল। পিছিয়ে থেকেও এই কামব্যাককে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
পুল্লেলা: এটা ভারতের জন্য় বিরাট বড় জয়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা জেতা অত্যন্ত স্মরণীয়। কারণ ইন্দোনেশিয়া, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়ার মতো দেশ রয়েছে, যারা অনেকবার প্রতিযোগিতা জিতেছে। এমন পরিস্থিতিতে একটা দেশ প্রথমবার এই রকম প্রতিযোগিতা জিতেছে, এটা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের জন্য বিরাট মুহূর্ত। এটা ভারতের ক্রীড়াজগতেও অন্যতম বড় মুহূর্ত। বলা যায় সবচেয়ে বড় মুহূর্ত।
প্রশ্ন: এই ফাইনাল তো ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ের মতো! নাকি তার থেকেও বড়?
পুল্লেলা: আমি মনে করি, ব্যাডমিন্টনে এই জয় ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয় থেকেও বড়।
প্রশ্ন: আজ ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল। কিন্তু অনেকেই জানেন না আপনি বিদেশ থেকে কোচ নিয়ে এসে নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন। সেই বিষয়ে কিছু বলুন?
পুল্লেলা: গত ১০-১২ বছরে চিত্রটা কিন্তু এমন ছিল না। বিদেশে কোনও প্রতিযোগিতা খেলতে নামলে আমরা খালি হাতে ফিরতাম। কিন্তু ২০১০-এর পর থেকে আজকের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ পর্যন্ত পরিস্থিতি একেবারে বদলে গিয়েছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর কোনও না কোনও মেডেল এসেছে। কমনওয়েল্থ গেমস হোক, এশিয়াড বা কমোজুবের কাপ- প্রতি বছর আমরা উত্তরোত্তর ভাল পারফরম্যান্স করেছি। তাই অত্যন্ত খুশির কথা যে আমরা এমন উন্নতি করেছি। এর নেপথ্যে কেন্দ্র সরকারের অনেক সাপোর্ট আছে। ধারাবাহিকভাবে বিদেশে আয়োজিত একাধিক প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করতে সব প্লেয়ারকে সাহায্য় করেছে সরকার। সারা বছর ক্যাম্প করে গিয়েছে সরকার। তাছাড়া এইচ এস প্রনয়, সাত্ত্বিক, কিদাম্বি শ্রীকান্তরা ২০০৮ সাল থেকে অ্যাকাডেমিতে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। সেই অ্যাকাডেমি ওদের কাছে ঘড়বাড়ি হয়ে গিয়েছিল। তাই ওদের এমন আগ্রাসী পারফরম্যান্স দেখে আলাদা অনুভূতি হচ্ছে।
প্রশ্ন: আচ্ছা কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনি কী আলাদা উদ্যোগ নিয়েছিলেন?
পুল্লেলা: সবার আগে দরকার নিজেকে বদলে ফেলেছিলাম!খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে অনুশাসন ছোটবেলা থেকেই ছিল। বারো মাস আমার এক রুটিন। দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে তিনটেয়। অ্যাকাডেমিতে চলে আসি চারটে-সাড়ে চারটের দিকে। বেলা পর্যন্ত চলে অনুশীলন। মাঝের সময় কিছুটা বিরতি। আবার দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত অনুশীলন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এই নিয়মের অন্যথা হয়নি। খেলোয়াড়দের এক সময় বিরক্তি লাগত। আমার সঙ্গে ঝামেলাও করত। ওরা কিন্তু তারাও তো বুঝতে পেরেছিলেন, এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতে ফসল ফলাবে। এবং তাই হল। ভারত ইতিহাস গড়ল।
প্রশ্ন: আপনার অ্যাকাডেমিতে কী কী আধুনিক জিনিসপত্র রয়েছে?
পুল্লেলা: এই মুহূর্তে ১৭টি ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ১০০টি থাকার ঘর, জিমন্যাসিয়াম, সুইমিং পুল, আইস বাথ-স্টিম বাথ নেওয়ার ঘর, দৌড়নোর ট্র্যাক, যোগ-এয়ারোবিক্স স্টুডিও সবই রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছেন তিন জন সিনিয়র কোচ, তিন জন কোচ, দু’জন সহকারী কোচ, এক জন ফিটনেস ট্রেনার, সাইয়ের এক জন কোচ, পাঁচ জন ফিজিয়োথেরাপিস্ট, তিন জন ফিটনেস ট্রেনার, এক জন ম্যাসিয়োর। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক কালে খেলোয়াড়দের টেকনিকে উন্নতি করতে বিদেশ থেকে নামকরা প্রশিক্ষকদের নিয়ে এসেছি। এমনকি মুল্যো হান্দোয়ো এবং কিম জি হিউনের মতো প্রথম সারির বিদেশি কোচও কাজ করে গিয়েছেন।
প্রশ্ন: পুল্লেলা গোপীচাঁদের আজ ঘুম কেমন হবে?
পুল্লেলা: মনে হয় খুব ভাল ঘুম হবে। সত্যি বলতে কী, টিম যেভাবে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনালে খেলেছে এবং যে মানসিকতায় কোর্টে নেমে ফাইনালের প্রতিটা কঠিন ম্যাচ খেলেছে, সেটা খুশি হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। আমার তো ভাল ঘুম হবে, কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় অনেকে ঘুমোতে পারবে না।
প্রশ্ন: নতুন দলের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কিছু বলুন।
পুল্লেলা: এটাই তো আমাদের নতুন ভারত। আমাদের মধ্যে 'মরার আগে মরব না' ব্যাপারটা একেবারে মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে। তাই যখন মনে হচ্ছিল আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি কিংবা হেরে যেতে পারি, ঠিক তখনই ছেলেরা নিজের দমে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছে। চাপের মুখেও বেশ কিছু ভাল শট খেলেছে এবং সেখান থেকে ম্যাচ ঘুরতে শুরু করে, যেটা খুবই আনন্দের।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, এটা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে নবজাগরণ এনে দেবে?
পুল্লেলা: অবশ্যই। আমি মনে করি এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত হবে। আমার মনে হয়, এটা এমন কিছু হবে, যার কথা বহু বহু বছর ধরে মানুষ আলোচনা করবে।
আরও পড়ুন: Thomas Cup Final: ব্যাডমিন্টনে বিশ্বসেরা ভারত! ইন্দোনেশিয়াকে উড়িয়ে সোনা টিম ইন্ডিয়ার
আরও পড়ুন: Thomas Cup 2022: 'জন গণ মন' জাতীয় সঙ্গীত, চোখের জলে ইতিহাস উদযাপন করল Team India