Exclusive: Kiyan Nassiri: ছেলের হ্যাটট্রিকের ভিডিও প্রিয় বন্ধু মাজিদ বিসকারকে দেখাবেন গর্বিত বাবা জামসিদ
‘ডার্বি হিরো’ কিয়ানের খেলা শুরু।
সব্যসাচী বাগচী: একটা সময় লাল-হলুদের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ডার্বি যুদ্ধ মাতিয়েছেন। তাঁর গোলে জেতার জন্য হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গিয়েছে অগণিত সমর্থক। অথচ সেই প্রিয় দলের হার ঘরে বসে দেখলেন জামসিদ নাসিরি। তবে প্রিয় লাল-হলুদ মর্যাদার বড় ম্যাচে হেরে গেলেও, তাঁর মন খারাপ নয়। বরং উত্তেজনায় ফুটছেন। প্রাক্তন স্ট্রাইকারের বুক চওড়া হয়ে গিয়েছে। কারণ তাঁর ছোট ছেলে যে প্রথম ডার্বিতে মাঠে নেমেই হ্যাটট্রিক করে দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ফিরতি ডার্বি শেষ হতেই জি ২৪ ঘন্টার সঙ্গে ‘হ্যাটট্রিক হিরো’কে নিয়ে কথা বলতে বসে পড়লেন এই প্রাক্তন স্ট্রাইকার। জানিয়ে দিলেন যে তিনটি গোলের ভিডিও প্রিয় বন্ধু ও এক সময় ময়দানের ‘বেতাজ বাদশা’ মজিদ বিসকারকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেবেন তিনি।
আবেগতাড়িত হয়ে জামসিদ বলতে শুরু করলেন, “কিয়ান তো খুব ছোটবেলা থেকে মোহনবাগানের জুনিয়র দলে খেলছে। ফলে ময়দান, ডার্বি কালচার এগুলো ওর সব কিছুই জানা। তাই এই ম্যাচের আগে ওকে আলাদা ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হয়নি। কারণ ছোট থেকেই তো এই আবহে বড় হয়েছে। আমিও তো নিজের ফুটবল কেরিয়ার নিয়ে অনেক কথা বলেছি।“
ডার্বি ম্যাচে রাতারাতি নায়কের জন্ম হয়। তেমনই সেই ৯০ মিনিটের যুদ্ধে পারফর্ম না করতে পারলে সমর্থকদের চোখে ভিলেন হয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সেটা অনেক আগেই ছেলের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন জামসিদ। সেটাই আমাদেরও জানিয়ে দিলেন। প্রাক্তন স্ট্রাইকার যোগ করেন, “একবার কিয়ানকে বলেছিলাম ডার্বি খেলার সুযোগ পেলে বাড়তি চাপ একদম নিবি না। ছেলেটা আমার কথাগুলো মনে রেখে দিয়েছে। বাবা বলে বলছি না। একজন প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে বলছি প্রতিটি গোল অসাধারণ। চাপের মুখে মোক্ষম সময় সঠিক জায়গায় বল রাখা কিন্তু মুখের কথা নয়। ওর বয়স কম হলেও একেবারে পাকা মাথার ছেলে। সেটা এত বড় মঞ্চে কিয়ান দেখিয়ে দিয়ে চলে গেল।“
আরও পড়ুন: ISL 2021-22: প্রথম আবির্ভাবেই হ্যাটট্রিক, ডার্বির রঙ সবুজ-মেরুন করে দিলেন কিয়ান নাসিরি
আরও পড়ুন: বড় ম্যাচে SC East Bengal-এর দ্বাদশ ব্যাক্তি প্রয়াত সুভাষ ভৌমিক
জামসিদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে আলোচনা হবে,বহু বিতর্কিত মজিদকে নিয়ে আলোচনা হবে না! সেটা কি হয়! কয়েক বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন মজিদ। সেই সময় তরুণ কিয়ানের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। ছেলের এমন সাফল্যর দিনে বন্ধুর প্রসঙ্গও টেনে আনলেন তিনি। জামসিদ যোগ করলেন, “জানি না মজিদ এখন নিয়মিত ফুটবলের খবর রাখে কিনা। তবে কলকাতায় শেষ বার এসে কিয়ানের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছিল। তাই মজিদকে ছেলের তিনটি গোলের ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপ করে দেব। মজিদ বড্ড খুশি হবে।“
শনিবাসরীয় ডার্বি যুদ্ধে দীপক টাঙ্গরির পরিবর্তে ৬১ মিনিটে কিয়ানকে মাঠে নামিয়ে দেন সবুজ-মেরুনের হেড কোচ জুয়ান ফেরান্দো। ব্যস ‘খেলা শুরু’। একটা সময় পিছিয়ে থাকলেও কিয়ান সমতা ফেরান। আবার খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে ফের জ্বলে ওঠেন ২১ বছরের এই তরুণ।
কোন গোলটা আপনার কাছে সেরা? এই প্রশ্ন করতেই জামসিদ বাবা-র জোব্বা নামিয়ে একেবারে ফুটবল পন্ডিতের মতো বলে দিলেন, “হ্যাটট্রিক সব সময় স্পেশ্যাল ফিলিং। সবাই জীবনে এমন মুহূর্তের স্বাদ পায়না। এরমধ্যে আবার ডার্বির মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে হ্যাটট্রিক বলে কথা। তবে আমার কাছে দ্বিতীয় ও শেষ গোলটা দেখার মতো। কিয়ান যে লম্বা রেসের ঘোড়া সেটা শেষ দুটি গোলে দেখিয়ে দিয়েছে। দুটি গোলের ক্ষেত্রেই দেখলাম ওর বল কন্ট্রোল অন্য পর্যায়ের। শেষ মুহূর্তে বিপক্ষের একাধিক ডিফেন্ডার ওকে আটকানোর চেষ্টা করলেও কিয়ান কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে জালে বল জড়িয়ে দিল। তবে প্রথম গোলের সময়ও ওর পজিশন ছিল চোখে পড়ার মতো। যে জায়গা থেকে ও শট মেরেছিল সেখান থেকে গোল বাঁচানো সম্ভব নয়।“
জামসিদ স্বপ্নেও ভাবেননি যে তাঁর সুযোগ্য সন্তান ডার্বি কেরিয়ারের আবির্ভাবেই হ্যাটট্রিক করে দেবেন। তবে সেটাই বাস্তবে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন। ফিরে গিয়েছেন নিজের সোনালি অতীতে। খেলোয়াড় জীবনে জামসিদ লাল-হলুদ জার্সি পরে ৬৪টি গোল করেছেন। খেলেছেন মহমেডানের হয়েও। কিন্তু সবুজ মেরুন জার্সিতে কখনও খেলা হয়নি তাঁর। তবে ছেলে যে দলের হয়েই খেলুক খুশি জামসিদ।
তাই শেষে যোগ করলেন, “সবাই বলে ভারতীয় স্ত্রাইকারের আকাল পড়েছে। বাইচুং ভুটিয়া ও সুনীল ছেত্রীর পর আর স্ট্রাইকার উঠে আসছে না। তবে মিলিয়ে নেবেন আমার কিয়ান খুব দ্রুত নীল জার্সি গায়ে চাপাবে। আর সেই দিনটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।“
কিয়ানের ফুটবল খেলা শুরু ওঁর বাবাকে দেখেই। সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেছেন। অনুশীলন করেছেন মোহনবাগান অ্যাকাডেমিতে। এরপর থেকে একাধিক যুব দলে খেলে নজর কেড়েছিলেন ‘ডার্বি হিরো’। ২০১৯ সালে মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলার সময়ই আই লিগ জয়ী কোচ কিবু ভিকুনার নজরে চলে আসেন এই তরুণ। তাঁর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে সিনিয়র দলের পাকাপাকি সদস্য করে দেন। আই লিগে ২০২০-র ১ মার্চ ট্রাউ এফসি-র বিরুদ্ধে পরিবর্ত হিসেবে প্রথম বার মাঠে নামা কিয়ানের।
তারপর এটিকে মোহনবাগানে নাম লেখানো। তবে তেমন সুযোগ আসছিল না। কিন্তু কথায় আছে ‘পারফর্মাররা বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠেন।‘ কিয়ানও তো লম্বা রেসের ঘোড়া। তাই তিনিও মর্যাদার ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে নিজের দৌড় শুরু করে দিলেন।