Exclusive, Deepa Malik: সাফল্য পেলেও কোন বিশেষ কারণে আক্ষেপ করছেন এই প্যারালিম্পিয়ান? জানতে পড়ুন
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত প্যারালিম্পিক্সকে কেউ বিশেষ পাত্তা দিতেন না। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। তবে পুরোপুরি সম্মান এখনও পর্যন্ত বিশেষ ভাবে সক্ষম অ্যাথলিটরা এখনও পর্যন্ত পাননি।
অর্কদীপ্ত মুখোপাধ্যায়: তিনি ভারতের গর্ব। তিনি একদিকে দুই কন্যার মা। তিনিই আবার ভারতের (India) হয়ে প্যারালিম্পিক্সে (Paralympics) প্রথম পদকজয়ী মহিলা অ্যাথলিট। এহেন ১ বছরের দীপা মালিক (Deepa Malik) এখনও দেশের পতাকা নিয়ে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখেন!কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে একেবারে আলাদা। ২০১৬ সালের রিও প্যারালিম্পিক্সের (Rio) শট পাট বিভাগে রূপো জেতা দীপা এখন আর ক্রীড়াবিদ নন। বরং তিনি এখন ক্রীড়া প্রশাসক। তিনি এখন প্যারালিম্পিক্স কমিটি অফ ইন্ডিয়া সভাপতি। তাই দেশের বিশেষ ভাবে সক্ষমদের আরও বেশি করে খেলার জগতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মাঠে নেমে খেলতে না পারার আক্ষেপ এখনও তাঁর মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। সেটা অকপটে জানিয়ে দিলেন এই অ্যাথলিট।
সব মিলিয়ে কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত ৫৮টি জাতীয় ও ২৩টি আন্তর্জাতিক পদক জেতা দীপা জি ২৪ ঘণ্টাকে বলছিলেন, "সবাইকে একটা সময় থামতে হয়। সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আমি খেলা ছেড়ে দিলেও, ক্রীড়া প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। এটাও বড় প্রাপ্তি। কিন্তু মাঠে নেমে পারফর্ম না করার আক্ষেপ কিন্তু রয়েই যাবে।"
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত প্যারালিম্পিক্সকে কেউ বিশেষ পাত্তা দিতেন না। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে চিত্র কিছুটা হলেও বদলেছে। তবে পুরোপুরি সম্মান এখনও পর্যন্ত বিশেষ ভাবে সক্ষম অ্যাথলিটরা এখনও পর্যন্ত পাননি। এই যেমন গত বছর অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে পিভি সিন্ধু ও অন্যান্য অ্যাথলিটরা টোকিও অলিম্পিক্সে উড়ে গেলেও ভারতের পদক সংখ্যা ছিল মাত্র ৭। সেখানে প্যারালিম্পিক্সে যাওয়া অ্যাথলিটরা নুন্যতম সুযোগ পাননি। টিভি সম্প্রচার তো অনেক দুরের কথা। তবুও সব বাধা ফুৎকারে উড়িয়ে ১৯টি পদক জিতেছে ভারত। এরমধ্যে রয়েছে ৫টি সোনা, ৮টি রুপো ও ৯টি ব্রোঞ্জ।
তবে প্রশাসক দীপা এখানেই থামতে রাজি নন। বরং তাঁর জীবনের মন্ত্র হল 'ইয়েহ দিল মাঙ্গে মোর'। তাই তিনি যোগ করেন, " বার প্যারালিম্পিক্সের আগে বলেছিলাম, পদক দুই অঙ্কের সংখ্যায় যাবে। সেটা করে দেখিয়েছি। ২০২৪ সালের প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে আমাদের লক্ষ্য প্রথম দশে থাকা। সেই টার্গেটকে সামনে রেখে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।"
তাঁর জীবনের অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে কলকাতা। তাই পদ্মশ্রী, অর্জুন পুরস্কার এবং খেলরত্ন পুরস্কার দীপা ফের তিলোত্তমার টানে ফের পা রেখেছিলেন। শনিবার সাইতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব ১৯ ও ১৪ জাতীয় প্যারা পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপে ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি।
তাঁর ছোটবেলার শহরের প্রসঙ্গ আসতেই নস্টালজিক হয়ে পড়লেন দীপা। তিনি বলেন, "কলকাতার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েছি। প্রথমে সল্টলেকে, পরে ফোর্ট উইলিয়ামে। তখন ক্লাসে সব থেকে লম্বা ছিলাম। কারণ আমি হাঁটতে পারতাম। এখানে পড়ার সময়ই প্রথম স্কুল দলের অধিনায়ক হই। প্রথম ইংরেজি ছবি দেখা, ফুচকা খাওয়া, ট্রামে চড়়া, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিউ মার্কেট ঘুরতে যাওয়া। এই শহরকে ঘিরে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে।"
লেখাপড়া শেষ করার পর আর পাঁচটা মেয়ের মতো বিয়ে করেন। স্বামী ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান বিক্রম সিং মালিক। দুই কন্যা ঘরে আলো করে আসার পর তাঁদের জীবনে সবকিছু বেশ ভালভাবেই চলছিল। কিন্তু দীপার বয়স যখন ২৯, তখন তাঁর জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। দ্বিতীয় বারের জন্য মেরুদণ্ডের টিউমারে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। অস্ত্রোপচার করে টিউমার বাদ দেওয়া গেলেও কোমরের নীচ থেকে বাকি অঙ্গ অসার হয়ে যায়। সেখানেই থেমে যেতে পারত তাঁর জীবন। কিন্তু তিনি থামলেন না।
বরং প্রবল যন্ত্রণার সঙ্গে যোগ করলেন জেদ। এবং ইচ্ছাশক্তি। আর সেই জন্য শুধু এই প্যারালিম্পিয়ান শুধু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পদক নয়, আট দিন ধরে গাড়ি চালিয়ে হিমালয়ের ১৮ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উঠেছেন।
কারণ লড়াই যে তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ICC Women's World Cup 2022, INDWvsAUSW : কোন অঙ্কে শেষ চারে Mithali Raj-এর ভারত? জানতে পড়ুন
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)