ধোনি দিবসের এদিক ওদিক
২০৬ রানের এরকম একটা অবিশ্বাস্য অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি তখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, গোটা মাঠ দাঁড়িয়ে তাঁকে সেলাম ঠুকছে। নতুন বিশ্বরেকর্ড কায়েম করার দিনে মানুষটা দেখে কিন্তু মোটেও ক্লান্ত মনে হচ্ছিল না। সঙ্গী শুধু ঠোঁটের গোড়ায় পরিতৃপ্তির মুচকি হাসি। সেই হাসির খোঁজ করতে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির প্রথম দ্বিশতরানের ইনিংসটা একটু অন্য চোখে দেখতে এই প্রতিবেদন--
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
২০৬ রানের এরকম একটা অবিশ্বাস্য অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি তখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, গোটা মাঠ দাঁড়িয়ে তাঁকে সেলাম ঠুকছে। নতুন বিশ্বরেকর্ড কায়েম করার দিনে মানুষটা দেখে কিন্তু মোটেও ক্লান্ত মনে হচ্ছিল না। সঙ্গী শুধু ঠোঁটের গোড়ায় পরিতৃপ্তির মুচকি হাসি। সেই হাসির খোঁজ করতে আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির প্রথম দ্বিশতরানের ইনিংসটা একটু অন্য চোখে দেখতে এই প্রতিবেদন--
আজ এক নজরে ধোনির রেকর্ড-- ১) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে এটাই কোনও ভারত অধিনায়কের সর্বোচ্চ ইনিংস৷ ২) উইকেটকিপার অধিনায়ক হিসাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ রান। ৩) টেস্টে ক্রিকেটে চার হাজার রানের ক্লাবে ঢুকে পড়া।
হতাশা থেকে প্রাপ্তি-- সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১৯ রান দূরে যখন থমকে গেল সচিনের ব্যাট, স্টেডিয়ামে তখন শুধুই স্বপ্নভঙ্গের দীর্ঘশ্বাস। মাস্টার ব্লাস্টারের আউটের হতাশায় তখন কেউ খেয়ালই করলেন না ঠিক তখনই মাঠে নামলেন ধোনি। হয়তো সেটা নিজেও বুঝলেন। এবং শুরুটাও করলেন সেখান থেকেই। টেস্টের জমাটি প্রেক্ষাপটে প্রথমে ওয়ানডের মেজাজে শুরু করলেন ব্যাট হাতে রুস্তমি। তারপর ধীরে ধীরে সেটাকেই নিয়ে গেলেন টি টোয়েন্টির স্টাইলে। তবে ইনিংসটার পরতে পরতে থাকল নিখুঁত টেস্ট ব্যাটিংয়ের যাবতীয় উপকরণ। যেখানে শেখানো হয় যতই দাদাগিরি করো ভাই, ধৈর্যই যেখানে শেষ কথা। ধোনি সেটা রাখলেন। ধৈর্যর সঙ্গে শৈর্যর পারফেক্ট কম্বিনেশনে খেলে ফেললেন একটা অবিস্মরণীয় ইনিংস। কোহিলর সঙ্গে যে কায়দায় শাসন করলেন অসি বোলারদের, ভূবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে ইনিংসেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কায়দাটা ফারাক আনলেন। এখানেই আলাদা ধোনির আজকের ইনিংস।
দুশোয় জবাব--ইদানিং তিনি নাকি ঘুমের ওষুধ ছাড়া ঘুমোতে পারছিলেন না। বিদেশের মাটিতে টানা আটটা টেস্টে হার, ইংল্যান্ডের কাছে ঘরের মাটিতে সিরিজ হার। উইকেটকিপিং টেকনিক নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। টেস্টে তাঁর ব্যাটিংটাকেও রাখা হচ্ছিল আতসকাঁচের তলায়। মাথা থেকে বোর্ড প্রেসিডেন্টের হাত আর ক্যাপ্টেন্সি গেলে নাকি ব্যাটসম্যান তো ছাড় উইকেটকিপার হিসাবেও দলে থাকে যোগ্যতা নেই তাঁর। সব সমালোচনা, বিতর্কের জবাব দিতে আজ চিপকের ২২ গজকেই বেছে নিলেন মাহি।
প্রতিক্রিয়া-- ধোনির ইনিংসটা নিয়ে ফেসবুক, টুইটারে তোলপাড় হচ্ছে। একের পর এক কমেন্টে ভেসে যাচ্ছে সাইবার জগত। ক্রিকেট জগত তো বটেই ধোনিকে নিয়ে মাতল বলিউডও। তবে সেরাটা মন্তব্যটা বোধহয় প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়কের টুইটেই উঠে এল। ভন লিখলেন, বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ঠান্ডা লোকটা এমন একটা কাজ করল যখন সেটা সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল... অসিদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ইনিংস।
অসি কিংবদন্তী শেন ওয়ার্ন লিখলেন, `দারুণ ব্যাটিং করলে ধোনি`। ধোনি ব্রগিডের নবীন সদস্য, আজিঙ্কা রাহানে থেকে সুরেশ রায়নাও উচ্ছ্বসিত কমেন্ট করলেন। শোনা গেল দীপিকা পাড়ুকন নাকি আজ টিভির সামনে থেকে নড়েননি!
সমালোচকদের দাঁতনখ-- অধিনায়কত্ব কেন টেস্ট দলে ধোনির থাকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছিল। সমালোচকদের দাঁতনখটা ক্রমশ বেড়ে উঠছিল।
এবং চেন্নাই-- চেন্নাই তাঁর সেকেন্ড হোম, নাকি ফাস্ট হোম এটা নিয়ে বিতর্ক চলে। রাঁচির লোকেরা তাতে রাগ করেন ঠিকই কিন্তু বাস্তব হল চেন্নাইয়ের রাস্তায় জয়ললিতা, করুণানিধিদের থেকেও আইপিএলের সময় তাঁর পোস্টারের সংখ্যা বেশি থাকে। চেন্নাইয়ে ধোনির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে শুধু স্থানীয় অ্যাড এজেন্সিরা নয় রাজনৈতিক দলগুলোরও উৎসাহ প্রবল। আইপিএলে চেন্নাই শহরের দল সুপার কিংসের অধিনায়ক ধোনি আজ চিপকে সব ভালবাসা উজাড় করে দিলেন।