Cheteshwar Pujara: বড় যুদ্ধের জন্য তৈরি ‘চে পূজারা’! জানিয়ে দিলেন গর্বিত বাবা
‘নিঃশব্দে বিপ্লব’ই চেতেশ্বরের স্টাইল স্টেটমেন্ট!
সব্যসাচী বাগচী: অদ্ভুত আমাদের ক্রিকেট সমাজ! বিরাট কোহলি (Virat Kohli) , রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) থেকে শুরু করে ঋষভ পন্থ (Rishbah Pant) ভারতীয় ক্রিকেটের (Indian Cricket) ‘পোস্টার বয়’-রা চলতি আইপিএলে (IPL 2022) নাগাড়ে ব্যর্থ হতেই সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। তবে বিদেশের মাটিতে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) টেস্ট দলের মেরুদণ্ড চেতেশ্বর পূজারার (Cheteshwar Puajra) সাফল্য নিয়ে তেমন উন্মাদনা চোখে পড়ে না।
সাসেক্সের (Sussex) জার্সি গায়ে ‘নিঃশব্দে বিপ্লব’ ঘটিয়ে চলেছেন। বিপক্ষের গোলাগুলি ও ঘাতক সুইংকে সামলে লাগাতার তিনটি ম্যাচে তিনবার তিন অঙ্কের রান করে ফেলেছেন। তবুও এহেন ‘চে পূজারা’কে নিয়ে তেমন উল্লাস কোথায়! প্রশ্নটা তুলেই দিলেন ওঁর বাবা, লেখা ভাল ‘মেন্টর’ অরবিন্দ পূজারা (Arvind Pujara)।
অভিষেক ম্যাচেই ডার্বিশায়ারের (Derbyshire) বিরুদ্ধে করেছিলেন দ্বিশতরান। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর অপরাজিত ২০৩ রানের জন্যই হার বাঁচিয়েছিল সাসেক্স। দ্বিতীয় ম্যাচে ওরচেস্টারশায়ারের (Worcestershire) বিরুদ্ধে করলেন ১০৯ রান। এবং তৃতীয় ম্যাচেও পূজারা দাপট বজায় ছিল। এ বার ডারহামের (Durham) বিরুদ্ধে তিনি থামলেন ২০৩ রানে। এখনও পর্যন্ত কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ দ্বিতীয় ডিভিশনে (English County 2nd division) তিন ম্যাচের পাঁচ ইনিংসে ৫৩১ রান করে ফেলেছেন। গড় ১৩২.৭৫। স্ট্রাইক রেট ৫৫.০৮। তিনটি শতরানের কথা আগেই লেখা হয়েছে। রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দলের ভরাডুবির পর তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। রঞ্জি খেলতে নেমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ ছাড়া বড় রান নেই। তারপরেও কীভাবে এমন কামব্যাক সম্ভব হল? জি ২৪ ঘন্টাকে টেলিফোনে অরবিন্দ বলছিলেন, “শুধু অধ্যাবসায় ও মনের জোরের উপর ভর করে চিন্টু ফের সাফল্য পেল। ওকে আর আটকে রাখা যাবে না। মিলিয়ে নেবেন। আগামী দিনে আরও বড় লড়াই করার জন্য আমার ছেলে রসদ পেয়ে গেল।“
দেশের হয়ে মাত্র একটি ফরম্যাট খেলার সুযোগ পান। ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব থাকে। রঞ্জি কিংবা দলীপ ট্রফি খেললেও বিপক্ষের বোলারদের মধ্যে সেই খুনে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেন না। এটাও চেতেশ্বরের ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলে মনে করছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন ক্রিকেটার।
৭১ বছরের অরবিন্দ যোগ করলেন, “অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডে সাফল্য পেতে হলে প্রচুর ম্যাচ প্র্যাকটিস দরকার। চিন্টু নিজের অ্যাকাডেমিতে বিভিন্ন ধরনের উইকেট বানিয়ে অনুশীলন করে। এছাড়া সময় সুযোগ পেলে রাজ্য দলের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে থাকে। এ ভাবে তো বিদেশে গিয়ে পাল্লা দেওয়া যাবে না। তবুও নিজের স্কিলকে আরও ঘষেমেজে ও এগিয়ে যাচ্ছে।“
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে ১৯৩ রান করার পর, ২৭টি টেস্ট কেটে গিয়েছে ওঁর ব্যাটে শতরান নেই। সেই বছরের শেষ থেকেই বারবার থমকে যাচ্ছিলেন। খারাপ ফর্ম চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত বজায় ছিল। চেতেশ্বরের পড়তি ফর্ম দেখে সুনীল গাভাসকর পর্যন্ত মাইক হাতে গর্জে উঠেছিলেন। তাঁকে ছেঁটে ফেলার কথাও বলে দেন সানি।
অরবিন্দের কানে সব গিয়েছে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে না পারার অপমান চেতেশ্বর মুখ বুজে সহ্য করেছেন। সময় এলে পাল্টা দেওয়ার জন্য।
আক্ষেপ করে অরবিন্দ বলছিলেন, “দেশের হয়ে খেলতে নামলে সফল হতেই হবে। এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল গত কয়েক বছর ভারতীয় দল বিদেশে কি শুধু চিন্টু ও অজিঙ্কা রাহানের ব্যর্থ হওয়ার জন্য হেরেছিল! আর কি কোনও তারকা ব্যর্থ হয়নি! তাহলে শুধু ওদের ঘাড়ে কেন কোপ পড়বে? অতীতেও চিন্টুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতেও আমার ছেলে বাদ যাবে। আমরা তখনও প্রতিবাদ করিনি। এখনও প্রতিবাদ করব না।“
দেশের হয়ে ৯৫টি টেস্ট খেলে ফেলা চেতেশ্বর প্রতিবাদ করতে জানেন না। প্রচারের আলোয় থাকতেও রাজি নন। গায়ে-গতরে ওই ‘লাল গোলা’ হজম করে যান। টি-শার্ট শরীর থেকে নামিয়ে রাখলে জমাট রক্তের দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। তবুও নিজের কাজ নীরবে করে যাচ্ছেন একজন প্রকৃত যোদ্ধার মতো।
কারণ এটাই যে ওঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট!
আরও পড়ুন: Wriddhiman Saha vs Journalist: ঋদ্ধিকে ‘ভয় দেখানোর’ দায়ে দুই বছরের জন্য নির্বাসিত Boria Majumdar