কলকাতায় বাড়ছে চেসবক্সিংয়ের জনপ্রিয়তা

বক্সিং রিংয়ে দাবা খেলতে বসে গেলেন দুই বক্সার। তারপর উঠে আবার শুরু করে দিলেন ঘুসোঘুসি। অবাক হলেন তো? ভাবছেন, এ আবার কী খেলা। এর নাম চেসবক্সিং। খাস শহর কলকাতায় রীতিমতো জনপ্রিয় এই খেলা।

Updated By: May 1, 2017, 08:32 PM IST
কলকাতায় বাড়ছে চেসবক্সিংয়ের জনপ্রিয়তা

ওয়েব ডেস্ক: বক্সিং রিংয়ে দাবা খেলতে বসে গেলেন দুই বক্সার। তারপর উঠে আবার শুরু করে দিলেন ঘুসোঘুসি। অবাক হলেন তো? ভাবছেন, এ আবার কী খেলা। এর নাম চেসবক্সিং। খাস শহর কলকাতায় রীতিমতো জনপ্রিয় এই খেলা।

আপনি কতটা শক্তিশালী? এক ঘুসিতেই ধরাশায়ী করতে পারেন কি বিপক্ষকে? নকি আরও বেশি ঘুসি লাগে? শর্ট প্যান্ট আর হাতে বক্সিং গ্লাভস পরে রিংয়ে ঢুকলে কি শক্তি আরও বেড়ে যায়, নাকি হাঁটু কাঁপতে থাকে? এ তো গেল বক্সিংয়ের কথা। এবার বলুন তো, কতটা শক্তি ধরে আপনার মাথা? মানে, কতটা বুদ্ধি আপনার? নাকি মাথায় গোবর পোরা? প্রশ্নগুলো করতেই হচ্ছে। কারণ, কিছুক্ষণ পরেই তো আপনি চেসবক্সিংয়ে নামতে চলেছেন। চমকে উঠলেন?

কথায় বলে, দাবার বোর্ড নাকি ভাল ছেলেদের খেলা। আর বক্সিং রিং ডানপিটের আখড়া। কিন্তু যদি দেখা যায়, এক রাউন্ড লড়েই দুই বক্সার রিংয়ের মধ্যেই বসে পড়েছেন এক দান দাবা খেলতে! ব্যাপারটা শুনতে বেশ অদ্ভুত লাগলেও এটাই বাস্তব। ভারত তো বটেই, খাস শহর কলকাতাতেও দাবা-বক্সিংয়ের উত্তেজনা কম নয়। দুই মেরুর দুই খেলাকে এক জায়গায় এনে চেসবক্সিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে। মগজ ও পেশির এক অদ্ভুত যুগলবন্দি।

২০০৩ সালে বার্লিন নিবাসী ওলন্দাজ শিল্পী আইপি রুবিংখ এই খেলা চালু করেন। তবে তিনি এই খেলার জনক নন। ১৯২২ সালে বিখ্যাত ফরাসি কমিকস শিল্পী এঁকি বিলাল তাঁর কল্পবিজ্ঞান বেস্টসেলার দ্য নাইকোপল ট্রিলজির শেষ গল্পটি প্রকাশ করেন। কোল্ড ইকুয়েটর নামক সেই গল্পে আমরা প্রথম দাবা-বক্সিংয়ের কথা জানতে পারি। বিলাল তাঁর অসামান্য দক্ষতায় সেই বিচিত্র খেলার চিত্রাঙ্কন করেছেন। যুযুধান দুই প্রতিযোগীর রক্তাক্ত লড়াইয়ের টানটান উত্তেজনা এই কমিকসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

রুবিংখের দাবা-বক্সিং অবশ্য বিলাল চিত্রিত কমিকসের মতো রক্তরঞ্জিত নয়। এই খেলার শুরু হয় একটি ৩ মিনিটের দাবার গেম দিয়ে। একটি ম্যাচ ১১ রাউন্ড অবধি গড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের ৬টি দাবার গেম এবং ৫ রাউন্ড বক্সিং করতে হয়। বক্সিংয়ে নকআউট বা দাবায় কিস্তিমাত ছাড়াও রেফারিদের সিদ্ধান্ত, সময়সীমা পার ইত্যাদি নানাবিধ নিয়মে দাবা-বক্সিং ম্যাচে হারজিত নিশ্চিত করা হয়।

ভারতে প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত এই খেলা। ভারতে এই খেলার জনক বলতে একজনই। সুদূর জার্মানি থেকে এদেশে এই খেলার আমদানি করেছেন এই শহরেরই বাসিন্দা মন্টু দাস। চেস বক্সিং অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফাউন্ডারও তিনিই। এই মুহূর্তে ভারতের পেশাদার চেস বক্সার বলতে একজনই। মহারাষ্ট্রের শৈলেশ ত্রিপাঠি। আমস্টারডামে চেস বক্সিংয়ের উত্পত্তি হলেও, বর্তমানে জার্মানিতেও রমরমিয়ে চলছে চেস বক্সিং। বিশ্ব চেস বক্সিংয়ের সদর দফতরও জার্মানির বার্লিনে। শুধু জার্মানিই নয়, মার্কিন মুলুক থেকে শুরু করে লন্ডন ও ফ্রান্সেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে দাবা-বক্সিং। ওয়ার্ল্ড চেসবক্সিং ফেডারেশনের এখন একটাই লক্ষ্য, দাবা-বক্সিংকে অলিম্পিকের অন্তর্গত করা।

.