ক্রিকেটটা কেমন যেন বদলে গেল!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বয়সটা নয় নয় করে ১৩৫ বছর হয়ে গেল। এই এতগুলো বছরে খেলাটায় বদল এসেছে অনেক। বাইশ গজের এই পরিবর্তন নিয়েই লিখলেন পার্থ প্রতিম চন্দ্র--
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বয়সটা নয় নয় করে ১৩৫ বছর হয়ে গেল। এই এতগুলো বছরে খেলাটায় বদল এসেছে অনেক। অবশ্য পরিবর্তনই তো জীবনের নিয়ম, তাহলে বাইশ গজেই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন? বাইশ গজের এই পরিবর্তন নিয়েই লিখলেন আমাদের প্রতিনিধি পার্থ প্রতিম চন্দ্র--
কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে পুচকে সংস্করণটা আসার পর খেলাটার খোলচে-নলচেটাই কেমন বদলে গেছে। এই কয়েক বছরে চোখের অনেকটা আড়ালেই ক্রিকেটের অনেক কিছুই বদলে গেছে। দর্শক থেকে ক্রিকেটপ্রেমী, মিডিয়া থেকে বিজ্ঞাপনী দুনিয়া টি টোয়েন্টি আসার পর ক্রিকেটের বদলের ঝাপটা এসে লেগেছে।
কী ভাবে? আসুন দেখেনি বিভিন্ন চোখে বিভিন্নভাবে।
ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে: টিভি খুলেই ক্রিকেট দেখতে বসেই অধৈর্য হওয়ার মাত্রাটা বেড়েছে। ঘটনাটা আপনার অজান্তেই ঘটেছে সেটাও ঠিক। এই যেমন গম্ভীর কিংবা রায়নারা দু`তিনটে ডট বল খেললেই এখন আওয়াজ ওঠে কি রে বাবা কি খেলছে! কেউ আবার বিরক্তিতে রিমোটে চাপ দিয়ে অন্য চ্যানেলে চলে যান। টি টোয়েন্টি যদি ক্রিকেটে গতির আমদানি করে থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবেই আপনার মধ্যে ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে শুরু করেছে একগাদা ছয়-চারের এই কুড়ির ক্রিকেট। এই যে টেস্ট ম্যাচের টিআরপি কমছে তার পিছনেও রয়েছে দর্শকদের সেই ধৈর্য নামক জিনিসের অভাব। অথচ ক্রিকেট একটা সময় বলা ভাল অনেকটা সময় ছিল ধৈর্য আর টেম্পারমেন্টের খেলা। যেখানে ব্যাটসম্যানের বল ছাড়া, ডিফেন্স করার মধ্যে একটা সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু টি টোয়েন্টিত্তোর ক্রিকেট বিশ্বে এসব কিছু মাথায় উঠেছে। এখন শুধু একটাই স্লোগান: দে ঘুমাকে।
ক্রিকেট কোচের কাছে: হতাশায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন বর্ষীয়াণ কোচ। ছাত্রদের কিছুতেই বোঝাতে পারলেন না," বাবা ব্যাটটা ওভাবে ধরতে নেই।" কিছু পরেই আবার বললেন, "এ কী করছ, ওভাবে ব্যাট চালায় না।" তখনই ছাত্রদের পাল্টা উত্তর, "কেন স্যার ওভাবে ব্যাট ধরেই তো কাল গেইল, পরশু ম্যাকালামরা অনেক রান করল!" ছাত্রদের এই কথার উপর আর কোনও জবাব খুঁজে পেলেন না কোচ । বুঝতে পারলেন টি টোয়েন্টি এসে পড়ে এখন তাঁর কোচিং ম্যানুয়েলের অনেক কিছুই হিমঘরে চলে গেছে। এতদিন তাঁর ছাত্রদের যা শিখিয়ে আসছিলেন তার অনেকটাই যে আজ অচল হয়ে পড়েছে। ছাত্রদের এখন বল ছাড়তে বলা, ডিফেন্স করতে বলাটা তাঁর ভারী অন্যায় মনে হয়। এমনই এক চিত্র ধরা পড়ল দক্ষিণ কলকাতার এক ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে। অবশ্য এই দৃশ্যটা বিশ্বের সব ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পেই দেখা যাচ্ছে। ক্রিকেট ব্যাকরণে বল ছাড়ার টেকনিক উধাও হয়ে যাচ্ছে। কোচিং ক্যাম্পে এখন সুইচ হিট, দিলস্কুপ, হেলিকপ্টার শট একেবার হট কেক। সনাতনি ক্রিকেট কোচেদের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। তাদের মুখে একটাই কথা, ক্রিকেট নয় মনে হচ্ছে বেসবল শেখাতে বসেছি।
ক্রিকেটারদের কাছে: বোলাররা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী রক্ষণাত্মক। বাউন্সার মেরে ব্যাটসম্যানদের নাক ভেঙে দেওয়ার স্বপ্ন এখন আর কোনও বোলার দেখে না। বরং উইকেট না পেলও মেডেন ওভার করেই তৃপ্তি পান বোলাররা। ব্যাটসম্যানরা আবার পা ফাঁক করে অদ্ভুত কায়দায় চার বা ছয় হাঁকালে অনেক বেশী তৃপ্তি পান। বলকে ডিফেন্স করে মর্যাদা দেওয়াটা এখন অসম্মানের। তবে টি টোয়েন্টির জন্মের পর অনেক ভাল ফিল্ডারের জন্ম হচ্ছে এখন। বোলাররা শুধু দশ ওভার বল করেই খালাস হয়ে যাচ্ছে না, ফিল্ডিংটাও করতে হচ্ছে মন দিয়ে।
সংবাদমাধ্যমের কাছে: টি টোয়েন্টি যেমন দ্রুত লয়ের ক্রিকেট, ঠিক তেমনই দ্রুত লয়ে বয়ে যায় টি টোয়েন্টি কভারেজেও। এত দ্রুত সব কিছু ঘটে যায়, আর দুটো ম্যাচের মাঝে ব্যবধান এত কম থাকে যে সংবাদমাধ্যমও একটু নড়ে যায়। টি টোয়েন্টি আসার পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে মিডিয়া কভারেজেও একটা নিঃশব্দে বদল এসেছে। এখন আর সংবাদপত্রের ম্যাচ রিপোর্টে আগের মত শুধু বাইশ গজের উপরেই নজর থাকে না। ম্যাচ রিপোর্টে উঠে আসে জীবনের কথা, খেলোয়াড়দের লাইফস্টাইলের কথা, আরও অনেক কিছু যা ঠিক ক্রিকেট নয়। আর টিভিতে ছয়-চারের থেকে বেশী ফুটেজ খায় চিয়ারলিডার্সরা।
বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায়: ক্রিকেটের টি টোয়েন্টি সংস্করণ বিজ্ঞাপনের জগতেও বদল এনেছে। ক্রিকেট এখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তুলনায় ফ্যাশান আর লাইফ স্টাইলের পণ্যের বিজ্ঞাপন বেশী দেখা যাচ্ছে।