Sourav Ganguly: অমিত শাহ তরী পার করবেন! সেটাই কি ভেবেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? বিস্ফোরক বিশ্বরূপ দে
Sourav Ganguly: বিশ্বরূপ এর পরেই সৌরভকে সমালোচনা করে বলেন, "এরকম পরিস্থিতি যে আসত, সৌরভের মতো বুদ্ধিমান ব্যক্তির আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। ২০১৯ সালে বিজেপির হাত ধরে ব্রিজেশ প্যাটেলকে হঠিয়ে, রাতারাতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। ভেবেছিলেন অমিত শাহ, একাই তাঁকে তরী পার করে দেবেন।
দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজনীতির শিকার হয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতির গদি হারিয়েছেন চব্বিশ ঘণ্টা আগে। মঙ্গলবার বেশি রাতে মুম্বই থেকে শহরে ফিরেই বেহালার বীরেন রায় রোডের বাড়িতে ঢুকে যান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন। এরই মাঝে সৌরভের এই পরিণতি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভের একদা যুযুধান প্রতিপক্ষ বিশ্বরূপ দে। পাশাপাশি সৌরভের কড়া সমালোচনা করতেই পিছপা হননি সিএবির এই প্রাক্তন কর্তা।
বিশ্বরূপের কথায়, "সৌরভের এই পরিণতির জন্য সৌরভ নিজেই দায়ী।" "মসনদচ্যুত মহারাজ", এই শিরোনাম দিয়ে মঙ্গলবার রাতেই সৌরভ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মতামত জানিয়েছিলেন বিশ্বরূপ। বুধবার বিকেলে জি ২৪ ঘণ্টাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্বরূপ বলেন, "ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন পদাধিকারীদের নাম শুনেছি সংবাদমাধ্যম থেকে। কিন্তু আমাদের বাংলার প্রতিনিধি সৌরভ গাঙ্গুলির নাম বোর্ড প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সুকৌশল রাজনীতির মাধ্যমে। সৌরভ আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট না থাকায় আমি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের বিচারে খুশি হতে পারিনি। কারণ বাংলার কোনও প্রতিনিধি যখন প্রশাসন বা অন্য কোনও ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে আসেন, বা তাঁকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা একজন প্রকৃত বাঙালির কাছে সুখকর হতে পারে না। মাথায় রাখবেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির প্রেরণা। এই বাংলা থেকে উঠে এসেই তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে একশো টেস্ট খেলেছেন। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছেন। এ রকম একজন আইকন বাঙালিকে যে ভাবে চক্রান্ত করে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার নিন্দা করি আমি। একই সঙ্গে অসম্ভব ব্যথিতও।"
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
বিশ্বরূপ এর পরেই সৌরভকে সমালোচনা করে বলেন, "এরকম পরিস্থিতি যে আসত, সৌরভের মতো বুদ্ধিমান ব্যক্তির আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। ২০১৯ সালে বিজেপির হাত ধরে ব্রিজেশ প্যাটেলকে হঠিয়ে, রাতারাতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। ভেবেছিলেন অমিত শাহ, একাই তাঁকে তরী পার করে দেবেন। ব্রিজেশ প্যাটেলের প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রিজেশের বদলে সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করা হয় শুধুমাত্র ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। ঠিক একই রকম ভাবে আমার গুরু শ্রদ্ধেয় জগমোহন ডালমিয়ার আকস্মিক প্রয়াণের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে গিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ। সিএবি নির্বাচন এড়িয়ে এ ভাবে ঘুরপথে তখন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বের পক্ষে খুব মাননসই ছিল কি?"
বিশ্বরূপ আরও বলেন, "কোনও বাঙালি নতজানু হয়ে কোনও পদে আসীন হলে, সেটা সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই প্রবল লজ্জার হয়। সৌরভ যদি নিজের প্রশাসনিক যোগ্যতায় বিসিসিআই ও সিএবি প্রেসিডেন্ট হতেন, আজ এ ভাবে তাঁর অপসারণ ঘটত না বোর্ড থেকে। রাজনীতিবিদদের হাত ধরে ঘুরপথে ক্ষমতায় এলে পরিণতি এরকম হয়।" প্রাক্তন সিএবি সচিব যোগ করেন, "কিছু তাবেদারের চোখ দিয়ে বাংলা বা ভারতীয় ক্রিকেটকে না দেখে কিছু পরিচ্ছন্ন প্রশাসককে খুঁজে নেওয়া দরকার ছিল সৌরভের। ক্রিকেটার হিসেবে মহম্মদ কাইফ, যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেহওয়াগদের নিয়ে টিম ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলেন সৌরভ, সে ভাবে প্রশাসকদের নিয়ে ঠিক দলটাই তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন সৌরভ।"
খেলোয়াড় জীবনে সৌরভ বার বার নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামলে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এ বারও কি সে রকম কিছু হতে পারে? জানতে চাইলে বিশ্বরূপ বলেন, "সৌরভ কামব্যাক কিং। সে রকম সম্ভাবনা আসতেই পারে। কিন্তু শশাঙ্ক মনোহর কয়েক বছর আগেই আইসিসি চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখানে ফের ভারত থেকে আইসিসিতে কেউ যেতে পারে কি না এ বার, সেটা একটা বড় ব্যাপার। সৌরভের কাছে সেটা খুব মসৃণ নয়। যদি তা না-ও হয়, তা হলেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হয়ে থাকতে সমস্যা কোথায়? ভারতে সৌরভের মতো ক্রিকেট মস্তিষ্ক খুব কম আছে। ওঁর যদি কোথাও আমার সহযোগিতা লাগে, তা হলে অবশ্যই পাশে দাঁড়াব। কারণ সৌরভ বাংলার গৌরব।"