সেই ধোনি, সেই টেনশনের শেষ ওভার, সেই দুরন্ত জয়ধ্বনী
সেই ধোনি, সেই টেনশনের শেষ ওভার, সেই দুরন্ত জয়ধ্বনী
------------
রাজস্থান- ১৪৮/৮ (ওয়াটসন ৫১)
চেন্নাই ১৪৯/৫ (১৯.৪ ওভার) ( ধোনি ২৬)
---------
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
সেই চেনা ছবি। শেষ ওভারে গোটা মাঠ,ডাগআউটে থমথমে সব মুখ। কেউ আবার টেনশনে নখ খুঁটছেন। শুধু তিনি একেবারে কুল হয়ে হাঁটছেন। ভাবখানা এমন, যেন বাইশ গজে নন, বউকে নিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছেন। সেই `বয়েই গেল`মনোভাব নিয়ে আরও একবার তিনি তাঁর দলের নৌকাকে ঝড়ের মাঝেই অনায়াসে জয়ের ডাঙায় পৌঁছে দিলেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতই হোক, বা বেটিং বিতর্কে জড়িয়ে চাপা থাকা চেন্নাই। তিনি সেই একইরকম। বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার। বলা ভাল,জীবন যুদ্ধের সেরা বিশ্বস্ত শেষ যোদ্ধা।
আজ রাঁচিতে চেন্নাইয়ের শেষ ওভারে দলের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২ রান। যতই সালটা ২০১৪ হোক। যতই খেলার ফরম্যাটের নামটা টি২০ হোক। তবু মানসিক চাপ বলে কতটা মানুষের কাছে আজই সমান আছে যেটা ছিল সেই আদিমকাল থেকে। আজও তো একটা জয়ের জন্য বিপক্ষরা সেই একই রকম চেষ্টা করে। তবে ফারাক একটা আছে। সেটা হলেন ধোনি। যিনি ব্যাট যেমনভাবেই ধরুন। টেকনিককে যতই ব্যাকরণের পাতায় তুলে রেখে আসুন। যতই বাবুলগাম না চিবিয়েও টেনশনমুক্ত হতে পারেন।
সেই কোন ছোটবেলায় রাঁচির রাস্তায় যেতে যেতে হাঁ করে চেয়ে থাকতেন এই স্টেডিয়ামটার দিকে। সেই স্টেডিয়ামেই আজ ফকনারের শেষ ওভারটা ক্রিকেট গবেষকদের গবেষণার দারুণ একটা বিষয় দিয়ে গেলেন। ফকবনারের শেষ ওভারের প্রথম বলে জাদেজা সিঙ্গলস নিয়ে ধোনিকে স্ট্রাইক দিলেন। সিঙ্গলস নেওয়ার পর স্ট্রাইক পেয়ে ব্যাটটা শুধু একেবার ঘোরালেন। কমেন্টাররা তো চেঁচিয়ে মরছেন। আর পাঁচ বল.. ১১টা রান.. হবে তো...।
ফকনারের অফস্ট্যাম্পের কিছুটা বাইরে ইয়র্কার (কেউ বলবেন ফুলটস) বলটা পা বাইরে পাঠিয়ে দিলেন ওয়াইড লং অন দিয়ে... সেমিহেলিকপ্টার শট বলা যায়। একেবারে ছক্কা... তারপরের বলটায় নিলেন দু রান।
ওভারের চতুর্থ বলে ৩ রান নিয়ে দলকে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে নিয়ে গেলেন, প্লে অফও নিশ্চিত করে ফেললেন। গোটা ম্যাচে রাজস্থানের মরিয়া চেষ্টাকে একেবারে ভাসান দিয়ে দিলেন ওই শেষের তিনটে বলে।
শুধু ওয়াটসন,অঙ্কিতদের কেন? ধোনির সেই `ওস্তাদের মার শেষরাতে`-র ইনিংসটা আর অনেক কিছুর ভাসান দিল। ধোনি যখন এই ইনিংস খেলছেন তখন হয়তো করাচির কোনও এক প্রান্তে ক্রিকেটের শিক্ষক তাঁর ছাত্রকে শেখাচ্ছেন পা দুটো বল এলে কোথায় রাখতে হয়। কলকাতার কোনও এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ঘেমো গায়ে নেটের বাইরে দাঁডি়য়ে স্যার হয়তো ছাত্রদের বলছেন, জোরে বল এলে মাথাটা আরও একটু সামনে নিয়ে যাও।
ধোনি শুধু শেখাচ্ছেন, ওসব পরে ভাববে আগে মনে রেখো ভয় পেও না, টেনশন নিও না.. শুধু ভাব আমি পারব...ইয়েস আই ক্যান।
শুধু বাঁচতে হবে বলেই যদি মানুষ এত কষ্টের মাঝেও জোর করে হাসি ম্যানেজ করে, তাহলে ক্রিকেটে সেটা কেন হবে না? জেতা আর হারার ফারকটা কভার ড্রাইভ,পুল,হুক কিংবা টেকনিকে হয় না। জেতার আসল ফর্মুলাটা অনেকটা বেঁচে থাকার মত, যেখানে মানসিক জোরটাই শেষ কথা।
এখন বরং ধোনির মাথা নিয়ে একটা রীতিমত একটা বাজারে খাওয়ানোর বই বের করা হোক। নামটাও এখন থেকেই বলা যায়। 'হাউ টু বি কুল লাইক ধোনি'... ওই যে বিক্রি হয় না.. 'হাউ টু মেক গার্লফ্রেন্ড ইন থ্রি ডেস...'
আইপিএলের পয়েন্ট তালিকা-
চেন্নাই-১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট
পাঞ্জাব- ৯ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট
রাজস্থান- ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট
কলকাতা- ৯ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট
হায়দরাবাদ- ৯ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট
মুম্বই- ৯ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট
বেঙ্গালুরু- ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট
দিল্লি-১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট