প্রায় ৭০ বছরের সংগীতযাত্রায় আজও অম্লান উত্তরপাড়া সংগীতচক্রের ধ্রুপদী আয়োজন...

Uttarpara Sangeet Chakra: ১৯৫৭-র এই জানুয়ারি মাসেই পথচলা শুরু। আজ পর্যন্ত এক নাগাড়ে জারি সেই ধ্রুপদী পথচলা। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে যারা এখনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র।

| Jan 23, 2023, 15:42 PM IST

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সময়টা ছিল নানা দিক থেকেই অবক্ষয়ের। বা, ঠিক অবক্ষয়ের না বলে দিন বদলের দিনও বলে যেতে পারে। উনিশ শতকের শেষাংশ। রাজা-মহারাজা-নবাব-বাদশার রমরমার দিন তখন ক্রমশ শেষ হচ্ছিল। ফলে তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে পৃষ্ঠপোষণা করতেন, কমে আসছিল তা-ও। ফলে রাজসভার গায়কবাদক হিসেবে যাঁরা এতকাল তাঁদের শিল্পের চর্চা ও অগ্রগতি নিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন, তাঁদের সেই নিশ্চিন্তির দিনও শেষ হয়ে আসছিল। এরপর ঘরোয়া আসরে আর তা থেকে ক্রমে জনপরিসরে অনুষ্ঠান করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল সেই সময়ের ধ্রুপদী সংগীতকারদের। ফলে বিশ শতকের প্রথম ভাগেই ক্রমশ পাবলিক ফাংশন শুরু হচ্ছিল। 

তবে কেন কলকাতাকে কেন্দ্র করে উচ্চাঙ্গ সংগীতের এত রমরমা সেই সময়টায়, কারণ রয়েছে তারও। ১৮৫৭ সালের পরে লক্ষ্ণৌ থেকে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহকে কলকাতায় নির্বাসন দেওয়া হল। নবাবের সঙ্গেই লক্ষ্ণৌয়ের মিউজিক্যাল ট্র্যাডিশন কলকাতায় সরে এল। বাংলার মাটিতে তখন নানা দিকে শুরু হল ধ্রুপদী সংগীতের চর্চা, গায়ন-বাদন, আয়োজন-আসর, মেহফিল। পরে পরে এই পরিবর্তনের শরিক অল ইন্ডিয়া রেডিয়োও। তারা সে সময়ে বহু শিল্পীর গান লাইভ বা রেকর্ড করে সম্প্রচার করত। এই ভাবেই প্রথম যাঁর গান রেকর্ড হল তিনি গওরজান।

1/6

জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরির ঐতিহ্যবাহী ভবন

এই দুই গতিধারার টানে, চলতি ট্রেন্ডের রেশ ধরে সে সময়ে উত্তরপাড়াতেও শুরু হয়েছিল ধ্রুপদী সংগীতের অনুষ্ঠান।   ১৯৫৭-র এই জানুয়ারি মাসেই পথচলা শুরু তাদের। আজ পর্যন্ত এক নাগাড়ে জারি সেই ধ্রুপদী পথচলা। সারা রাজ্যে বিশেষত কলকাতায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন কম হয়নি। তার খুব অল্পই আজও বেঁচে-বর্তে আছে। তবে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে যারা এখনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র।

2/6

উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্রের অনুষ্ঠান যেখানে হয় তার স্থানমাহাত্ম্যও বড় কম নয়। গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ বহু ইতিহাসের সাক্ষী। বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন, ঋষি অরবিন্দের স্মৃতিধন্য এই উত্তরপাড়া, স্মৃতিধন্য এই গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণও। এইরকম একটা ভ্যেনুতে বসে উচ্চাঙ্গ সংগীত আস্বাদন করাটাও একটা বিশেষ ব্যাপার। 

3/6

পণ্ডিত দেবাশিস ভট্টাচার্য

অন্য বছরের মতো এবারও তিনদিনের প্রোগ্রাম-- ২১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি। এর মধ্যে ২২ জানুয়ারি দিনটি উস্তাদ আলি আকবর খাঁর স্মরণে নিবেদিত। এদিন ছিল মধুমিতা রায়ের কত্থক, দেবাশিস ভট্টাচার্যের স্লাইড গিটার (পুষ্পবীণা), উস্তাদ ওয়াসিম আহমেদ খানের কণ্ঠসংগীত এবং উস্তাদ শাহিদ পারভেজ খানের সেতার বাদন। প্রথমপর্বে কত্থকের তালছন্দ রোমাঞ্চিত করল শ্রোতা-দর্শকদের। একটু পরে পুষ্পবীণায় মোহিত হলেন তাঁরা।  

4/6

উস্তাদ ওয়াসিম আহমেদ খান

হিন্দুস্থানি কণ্ঠসংগীতে এই সময়ের অন্যতম সেরা নাম উস্তাদ ওয়াসিম আহমেদ খান। আগ্রা ঘরানার এই শিল্পী সংগীতচক্রের অনুষ্ঠানের এই দ্বিতীয় দিনের সন্ধেয় শ্রোতাদের মাতিয়ে দিলেন তাঁর অপূর্ব কণ্ঠসৌকর্যে। 

5/6

উস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান

তাঁর পরে মঞ্চে এলেন এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেতারবাদক উস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান। যেমন তাঁর বাজানোর ধরন, প্রথমে খুব সূক্ষ্ম কিছু কারুকাজ করতে-করতে তিনি আলাপ জমাতে লাগলেন, তত উচ্চকিত নয়, কিন্তু খুবই পেলব ও মর্মস্পর্শী। পরে ধীরে ধীরে নিজেও ডুবতে শুরু করেন, শ্রোতাদেরও ডোবালেন। এক মধুমূর্ছনায় ভরে রইল শ্রোতাদের প্রাণ-মন-শ্রবণ। 

6/6

উত্তরপাড়া সংগীতচক্রের শেষ দিন

আজ, ২৩ জানুয়ারি উত্তরপাড়া সংগীতচক্রের শেষ দিন। তিনদিনের সুর-লয়-তান-ছন্দ-মন্দ্রের মাদকতা নিয়েই একটা বছর আবার অপেক্ষা করতে হবে সংগীতামোদীদের। পরের শীতে আবার গঙ্গার ধারের এই ঐতিহ্যবাহী ভবন-প্রাঙ্গণে বসবে নানা শিল্পীর আসর।