No Money for Terror: সন্ত্রাসবাদের ফলে ২০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ৭৩ লক্ষ ৩৭ হাজার কোটি টাকা
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থের উৎস চিহ্নিত করা এবং তাকে ব্যাহত করা অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ। অর্থ পাচার, মাদক পাচার, কট্টরপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুদান এবং মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ইত্যাদির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে অর্থসাহায্য করা হয়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ‘নো মানি ফর টেরর’ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরোক্ষে পাকিস্তানের উল্লেখ করে তাদের বিদেশ নীতির অংশ হিসাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারী দেশগুলিকে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। যদিও জিহাদি আশ্রয়স্থল পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। চিন, বারবার বিশ্ব ফোরামে ইসলামাবাদ-সমর্থিত সন্ত্রাসী সত্ত্বার পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা অনুষ্ঠানটি এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল অর্থের উৎস চিহ্নিত করা এবং তাকে ব্যাহত করা। মানি লন্ডারিং, মাদক পাচার, কট্টরপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুদান এবং মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ইত্যাদির থেকে সৃষ্ট বিপুল অর্থের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে টিকিয়ে রাখা হয়। অনুমান করা হয়, প্রতি বছর অর্থ পাচারের পরিমাণ পৃথিবীর জিডিপির (২-৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) দুই থেকে পাঁচ শতাংশ। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী মাদক পাচার একটি ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শিল্প বলে অনুমান করা হয়।
কয়েক বছর ধরে, সন্ত্রাসবাদের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিকে ভারী মূল্য চোকাতে হয়েছে। ২০০০-১৯ সালের মধ্যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ৯০০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে পৃথিবী। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছিল ২০১৪ সালে (১১৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। সেই সময়ে আইএসআইএস তার শীর্ষে ছিল, ইরাক এবং সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলগুলি তারা ইচ্ছামত দখল করেছিল।
সন্ত্রাসবাদের বিশ্ব অর্থনৈতির খরচ (বিলিয়ন মার্কিন ডলারে)
কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো আরও ধনী হয়েছে। ২০১৬ সালে, ফোর্বসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আইএসআইএসের বার্ষিক টার্নওভার ছিল দুই বিলিয়ন ডলার, যেখানে হামাস প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অন্যান্য কিছু গোষ্ঠী ২০১৬ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে তাদের আয় দ্বিগুণ করেছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হিজবুল্লাহর বার্ষিক টার্নওভার ৫০০ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১.১ বিলিয়ন ডলার। তালিবানের আয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার এবং আল কায়েদার মাত্র দুই বছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার থেকে আয় বাড়িয়ে করেছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। তালিবানরা এখন পুরো একটি দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
আফ্রিকা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের আরেকটি কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। বোকো হারাম, আল শাবাব এবং আইএসআইএসের বিভিন্ন ভাগ বিশাল এলাকা দখল করেছে। এর ফলে সরকারি বাহিনী এবং সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। এই সব গ্রুপ কর, অপহরণ, মাদক পাচার এবং অনুদান থেকে বহু অর্থ উপার্জন করেছে।
বলাই বাহুল্য, যেসব দেশে তারা কাজ করে সেসব দেশেই সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে সর্বোচ্চ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আফগানিস্তান, বুরকিনা ফাসো, সোমালিয়া, মালি, নাইজার, ইরাক এবং সিরিয়ার সাতটি দেশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের কারণে প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাতটি মৃত্যুর জন্য দায়ী। ২০২০ এবং ২০২১ সালে, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের কারণে ২,৬৭৮ জন মারা গিয়েছে। এরপরে রয়েছে বুরকিনা ফাসো (১,৩৯০), সোমালিয়া (১,২৬৫), মালি (১,২৪০) এবং নাইজার (৮৪৫)।
2021 সালে সন্ত্রাসবাদের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে এমন দেশ (মোট মৃত্যুর শতাংশ)
তাই এই দেশগুলি গ্লোবাল টেরোরিজম ইনডেক্সেও শীর্ষে রয়েছে। আফগানিস্তান ৯.১১ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এরপরে ইরাক (৮.৫১) এবং সোমালিয়া (৮.৪)।
২০২১ সালের শুরু থেকে, কমপক্ষে পাঁচটি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে যার প্রতিটিতে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুতে একটি জোড়া গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। এই হামলার দায় স্বীকার করে আল শাবাব। গত বছরের অগস্টে একটি আইএসকেপি আত্মঘাতী বোমা হামলায় কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কমপক্ষে ১৮০ জন নিহত হয়। তালিবানের কাবুল দখলের পর আফগানিস্তান থেকে পালানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে ক্যাম্প করার সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে।
ভারতে IS এবং মুসলিম ব্রাদারহুড অনুপ্রাণিত মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। বাদ রয়েছে পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত এবং অর্থ সাহায্য প্রাপ্তরা। উত্তর-পূর্বে বামপন্থী চরমপন্থা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনগুলিও মোকাবিলা করা হচ্ছে। কেন্দ্র এই বিপদের মোকাবিলা করার জন্য বহুমুখী পন্থা নিয়েছে। তহবিল বন্ধ করা, জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়নকে উৎসাহিত করা, আত্মসমর্পণের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া এবং বাকিদের নিউট্রালাইজ করা।