শুরু হল সিপিআইএম পার্টি কংগ্রেস, গুরুত্বের শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গই

বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর সিপিআইএমের ২০তম পার্টি কংগ্রেসে আলোচনার মূল বিষয় পশ্চিমবঙ্গ। সিপিআইএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, দীর্ঘদিনের বাম ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের গুরুত্ব ফিরবে না।

Updated By: Apr 4, 2012, 09:17 AM IST

বুধবার কেরালার কোঝিকোড়ে শুরু হল সিপিআইএমের ২০তম পার্টি কংগ্রেস। দু'দশক পর এই পার্টি কংগ্রেসেই পেশ হতে চলেছে সিপিআইএমের নতুন মতাদর্শগত খসড়া দলিল। অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে পার্টি কংগ্রেসে অনুপস্থিত থাকছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ইতিমধ্যেই দলীয় নেতৃত্বকে এ কথা জানিয়ে পার্টি কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলা পার্টি কংগ্রেসে দেশ এবং দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের সামনে নিজেদের মতাদর্শগত অবস্থান পরিষ্কার করার পাশাপাশি জাতীয়-রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দিশানির্দেশ খুঁজবে সিপিআইএম নেতৃত্ব। প্রথম ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করলেও শেষপর্যন্ত পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সিপিআইএম। কিন্তু পরমাণুচুক্তি ইস্যুতে মানুষের কাছে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাফল্য আসেনি। কেন মানুষের কাছে ইস্যুটির গুরুত্ব বোঝানো যায়নি? বুধবার থেকে শুরু হওয়া সিপিআইএম-এর কোঝিকোড়  পার্টি কংগ্রেসে সেই ব্যাখ্যা খুঁজবে সিপিআইএম।
 
এর আগে ১৯৯২ সালে চেন্নাই পার্টি কংগ্রেসে শেষ বার মতাদর্শগত দলিল পেশ করেছিল  সিপিআইএম। এবারের পার্টিকংগ্রেসে ফের  নতুন মতাদর্শগত খসড়া দলিল পেশ করছে তাঁরা। গত দু'দশকে দেশ ও দুনিয়ার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই বদলেছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মতাদর্শ অবস্থান স্পষ্ট করতেই নতুন খসড়া দলিল আনছে সিপিআইএম। একসময় শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালায় ক্ষমতায় নেই দল। পার্টি কংগ্রেসে জাতীয় রাজনীতির এই নয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথ খুঁজবে সিপিআইএম।

বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর সিপিআইএমের ২০তম পার্টি কংগ্রেসে আলোচনার অন্যতম মূল বিষয় হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ। সিপিআইএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, দীর্ঘদিনের বাম ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের গুরুত্ব ফিরবে না। আর তাই কেরলের কোঝিকোড়ে ২০তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক খসড়া দলিলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের পরাজয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, "পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের পরাজয় গোটা দেশের বাম আন্দোলনের জন্য বড় ধাক্কা"। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেরালাতেও ক্ষমতা হারিয়েছে বামেরা। উল্লেখযোগ্যভাবে মালয়ালী মুলুকে সিপিআইএম-এর নেতৃত্বাধীন এলডিএফ (লেফ‌্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট) জোটের পরাজয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, "২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট"
সিপিআইএমের রাজনৈতিক দলিল থেকে পরিষ্কার, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেছে , পশ্চিমবঙ্গের হার আক্ষরিক অর্থেই বিপর্যয়। আর তার মাশুল গুনতে হচ্ছে জাতীয় রাজনীতিতেও। দলের গুরুত্বপূর্ণ পলিটব্যুরো সদস্য এস আর পিল্লাইয়ের জবানিতেও উঠে এসেছে এই কথা। প্রতিটি রাজ্যের সাংগঠনিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা পার্টি কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলেও পশ্চিমবঙ্গের মতো দলের `অন্যতম শক্ত ঘাঁটি`তে সঙ্কট অতিক্রমের দিশানির্দেশ স্থির করার বিষয়টি যে একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা খোলাখুলি স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কেরালার কোঝিকোড়ে সিপিআইএমের ২০তম পার্টি কংগ্রেস চলবে। দলীয় কংগ্রেসে জাতীয় পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন রাজ্যের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হলেও সব ইস্যুতেই ঘুরে ফিরে আসবে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের কোণঠাসা অবস্থার কথা। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হবে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ইস্যুটিও। যা `সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম`-উত্তর পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রাজ্যের সিপিআইএম নেতাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্য যেখানে ভূমি সংস্কার বহু দিন আগেই হয়ে গেছে, সেখানে গরীব কৃষকদের স্বার্থেই জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। নইলে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্মের শিকার হবেন কৃষকরা। যা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির এক কঠিন বাস্তবতা।

.