Vinoba Bhave: ১৯৪০ সালে তাঁকে দিয়েই অহিংস আন্দোলনের প্রচার শুরু করান গান্ধীজি

এ বছর স্বাধীনতা দিবস ৭৫ বছরে পা দিচ্ছে। সাড়ে সাত দশকের স্বাধীনতা-যাপনে দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ ও স্বপ্নভঙ্গের নানা ইতিহাস রচিত হয়েছে। কিন্তু সেই 'ইতিহাসে'র পথ যাঁরা তৈরি করে দিলেন তাঁদের কীভাবে, কতটা মনে রেখেছে দেশ? প্রায় অনালোচিত বা স্বল্পালোচিত কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে ফিরে দেখল Zee 24 Ghanta Digital

Updated By: Aug 12, 2021, 09:38 PM IST
Vinoba Bhave: ১৯৪০ সালে তাঁকে দিয়েই অহিংস আন্দোলনের প্রচার শুরু করান গান্ধীজি

সৌমিত্র সেন

স্বয়ং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী তাঁকে ঈর্ষা করতেন। তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মস্কো-সফর আংশিক বাতিল করে দেশে ফিরেছিলেন।

তিনি আচার্য বিনোবা ভাবে। দেশের অন্যতম বিশিষ্ট এক স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৮৯৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রে জন্ম। তাঁকে গান্ধীজীর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী বলা হত। গান্ধীজির শিষ্যস্থানীয় ছিলেন তিনি। অথচ বিনোবার কঠোর ব্রহ্মচর্যকে ঈর্ষা করতেন স্বয়ং গান্ধীজিই!

আরও পড়ুন: Hemchandra Ghosh: দেশপ্রেমে 'দীক্ষিত' হয়েছিলেন স্বয়ং স্বামীজির কাছে!

ভূদান আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সারা দেশের নজর আকর্ষণ করেছিলেন বিনোবা। দরিদ্র এবং ভূমিহীনদের জমির সংস্থান করতে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটেছিলেন। ভূদান আন্দোলনের সূত্রে একাধিকবার এসেছিলেন মেদিনীপুরেও। তিনি দেখেছিলেন, দেশের শতকরা ৭৬ জনেরও বেশি কৃষি বা সেই সংক্রান্ত কাজে যুক্ত। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূমির মালিকানা তাঁদেরই হাতে যাঁরা স্বয়ং জমিতে নেমে চাষ করেন না! চাষবাসের আসল কাজ করেন ভূমিহীন কৃষকরাই। তাঁদের কথা আন্তরিক ভাবে ভেবেছিলেন বিনোবা। তাই দরিদ্র ভূমিহীন কৃষকদের জন্য জমিসংগ্রহে নেমেছিলেন তিনি।

কিন্তু সে তো অনেক-অনেক পরে। তার ঢের আগে গান্ধীজি তাঁর মনের মধ্যে প্রবল ভাবে ঢুকে পড়েছিলেন। কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া গান্ধীজির একটি ভাষণ এক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সেটি বিনোবার নজরে আসে। সেটা পড়ে এবং গান্ধীজির এরকম আরও কিছু লেখাপত্র পড়ে কিশোর বিনোবার জীবনের মোড় ঘুরে গেল। সেটা ১৯১৮ সাল। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিতে বম্বে যাচ্ছিলেন। কিন্তু স্কুল-কলেজের সমস্ত শংসাপত্র আগুনে পুড়িয়ে দিলেন। শুরু হল গান্ধীজির সঙ্গে যোগাযোগের পর্ব। তিনি গান্ধীজিকে চিঠি লেখেন, গান্ধীজিও তার উত্তর দিলেন। এভাবে চিঠির আদান-প্রদানের পরে গান্ধীজি এক সময় তাঁকে আমেদাবাদের কোচরাব আশ্রমে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন। 

বিনোবা ১৯১৬ সালের ৭ জুন গান্ধীজির সঙ্গে দেখা করেন। শুরু হল তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়। ততদিনে প্রথাগত লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছেন। গান্ধীজির আশ্রমেই অতি উৎসাহের সঙ্গে তিনি নিজস্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। পাশাপাশি চলে শিক্ষাদান, চরকা কাটা ইত্যাদি কাজ। গান্ধীজির নানা ধরনের গঠনমূলক কাজ-- যেমন, খাদি, গ্রামীণ শিল্প, নতুন শিক্ষা পদ্ধতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদির অনুশীলন ও প্রচারের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে পড়েন। গান্ধীজির ইচ্ছানুসারেই ১৯২১ সালের ৮ এপ্রিল ওয়ার্ধা আশ্রমের দায়িত্বভার নেন। ১৯২৫ সালে মন্দিরে দলিতদের প্রবেশের বিষয়টি দেখার জন্য গান্ধী তাঁকে কেরালার বাইকমে পাঠান। ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকে বহুবার দেশের কাজের সূত্রে ব্রিটিশের রোষে পড়ে বন্দি হন বিনোবা। ১৯৪০ সালে যখন গান্ধীজি তাঁকে দিয়ে অহিংস আন্দোলনের প্রচার শুরু করান তখন থেকেই তিনি দেশ জুড়ে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন বিনোবা। অবশেষে এই কাজের 'অপরাধে'ই তাঁর পাঁচ বছরের কারাবাস হয়।

১৯২৩ সালে তিনি 'মহারাষ্ট্র ধর্ম' নামে একটি মারাঠি পত্রিকা বার করেছিলেন যাতে উপনিষদ-নির্ভর লেখালেখি করেন। পত্রিকাটি তিন বছর চলে। বিনোবা মারাঠিতে ভগবদ্গীতা অনুবাদ করেছিলেন। যা দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। বিনোবা স্বয়ং গীতার বাণী ও শিক্ষায় আদ্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন। গীতার শিক্ষাকে নিজের জীবনে আত্তীকরণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রায়শই বলতেন--গীতা আমার জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস।

তবে জীবনের উপান্তে এসে জৈন সন্তদের দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বিনোবা। তাঁদের এক বিশেষ রীতি অনুযায়ী বিনোবা খাদ্য ও ওষুধ গ্রহণ একেবারে পরিহার করেছিলেন একটা সময়ে। অবশেষে ১৯৮২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হন তিনি।

আগাগোড়া আদর্শবাদী সহজ-সরল জীবনযাপন করা এই মানুষটি স্বাধীনতা সংগ্রামীর সম্মান পেলেও বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। নোবেলজয়ী ঠোঁটকাটা ভিএস নয়পল তাঁর প্রবন্ধে বিনোবাকে ‘a foolish parody of Gandhi’ বলে নিন্দে করেছিলেন। বিনোবার অতিরিক্ত গান্ধীজি-অনুকরণের জন্য তাঁর কড়া সমালোচনা করেছিলেন নয়পল। ইন্দিরা গান্ধী যখন দেশে জরুরি অবস্থা (১৯৭৫-১৯৭৭) জারি করলেন তখন বিনোবা একে 'অনুশাসন পর্ব' (টাইম অফ ডিসিপ্লিন) বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই নিয়েও প্রচুর মানুষ বিনোবার উপর বিরক্ত হয়েছিলেন, তাঁর সমালোচনা করেছিলেন।

(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

আরও পড়ুন: Kanaklata Barua: তাঁর আত্মদান দেশ জুড়ে মেয়েদের ঘোর দুঃসাহসী করে তুলেছিল

.