উত্তরপ্রদেশে তৃতীয় দফায় ভোট পড়ল ৫৭ শতাংশ
যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরগুলিতে প্রবল জল্পনা আর উত্কণ্ঠার মধ্যেও শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল উত্তরপ্রদেশে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তৃতীয় দফায় উত্তরপ্রদেশে ৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরগুলিতে প্রবল জল্পনা আর উত্কণ্ঠার মধ্যেও শান্তিপূর্ণ ভাবেই শেষ হল উত্তরপ্রদেশে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তৃতীয় দফা উত্তরপ্রদেশে ৫৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। এদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় উত্তরপ্রদেশের দফার বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্ব। ছত্রপতি শাহুজি মহারাজ নগর, বারানসী, এলাহাবাদ, কাউসম্বি, সুলতানপুর, সন্ত রবিদাস নগর, জৌনপুর, চান্দৌলি, মিজার্পুর এবং শোনভদ্রা -তৃতীয় দফার ভোটে ইভিএম-বন্দি হল দক্ষিণ-পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের এই ১০ জেলার ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের জনমত। মোট ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ। ১১,৬০৭টি ভোট কেন্দ্রের ১৮,৩৭৪টি পোলিং বুথে ভাগ্য নির্ধারিত হল ১০১৮ জন প্রার্থীর। এঁদের মধ্যে ৩ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ১ জন প্রতিমন্ত্রী ২৯ জন প্রাক্তন বিধায়ক এবং ১৪ জন প্রাক্তন মন্ত্রী।
উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন, বিএসপি`র তিন প্রভাবশালী মন্ত্রী ইন্দ্রজিত্ সরোজ, নন্দগোপাল গুপ্তা ও ধর্মরাজ নিষাদ। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ওমপ্রকাশ সিং, দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা তথা প্রাক্তন স্পিকার কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী রীতা বহুগুণা যোশির ভাই শেখর বহুগুণা এবং এলাহাবাদের সমাজবাদী পার্টি সাংসদ রেবতীরমন সিংয়ের ছেলে উজ্জ্বলরমন সিং-ও রয়েছেন জনতার `আশীর্বাদ` পাওয়ার দৌড়ে। রয়েছেন কুখ্যাত বাহুবলীরাও। তিহার জেল থেকেই আপনা দল টিকিটে ভোটে লড়ছেন, প্রেম প্রকাশ সিং ওরফে মুন্না বজরঙ্গী। একাধিক খুন, অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদকেও মনোনয়ন দিয়েছে আপনা দল। অন্যদিকে নবগঠিত প্রগতিশীল মানব সমাজ-এর পতাকা নিয়ে জনতার দরবারে হাজির এই মুহূর্তে পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাফিয়া ডন ব্রিজেশ সিং।
ডি-লিমিটেশনের আগে ২০০৭ সালের বিধানসভা ভোটে এই ১০টি জেলায় আসন সংখ্যা ছিল ৫২। এর মধ্যে বিএসপি ৩১, সমাজবাদী পার্টি ১১, বিজেপি ৬, কংগ্রেস ৩ এবং নির্দল প্রার্থী ১টি কেন্দ্রে জিতেছিল। যদিও ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে এই সমীকরণ অনেকটাই বদলে যায়। এই ১০ জেলার ১২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি ৬, বিএসপি ৩, কংগ্রেস ২ এবং বিজেপি ১টি আসনে জেতে। বিধানসভা কেন্দ্রওয়াড়ি হিসেব অনুযায়ী ৫৬টি কেন্দ্রের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি ২২, বিএসপি ২১, কংগ্রেস ৮ এবং বিজেপি ৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এবার কল্যান সিংয়ের সঙ্গ ছাড়ায় মুসলিম জনভিত্তি পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী সমাজবাদী নেতৃত্ব। মুলায়ম সিং যাদবের দলের নেতাদের দাবি, তাঁরা তৃতীয় দফায় অন্তত ৩০টি আসনে জিতবেন। অন্যদিকে অ-জাটভ `অতিদলিত` এবং উচ্চবর্ণের ভোটের পাশাপাশি সংরক্ষণ-তাস খেলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনগ্রসর অংশের সমর্থন পেতে সক্রিয় কংগ্রেস। সক্রিয়, আমেথি, সুলতানপুরের সাবেক দুর্গ ধরে পুনর্দখল করতে। তৃতীয় পর্যায়ের ভোটের প্রচারে তাই এই এলাকায় কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢেরা। পাশাপাশি নিজেরা জিততে না পারলেও পিস পার্টি, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন দল-মতো `ভোট কাটুয়া` দলগুলির প্রার্থীরা অনেক আসনেই ফলাফল বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
উত্তরপ্রদেশের জনতা আগামী ৫ বছরের জন্য রাজ্যপাট পরিচালনার দায়িত্ব কাদের হাতে তুললে দেবে, ৬ মার্চ তা জানা যাবে। তবে প্রথম দফায় প্রবল বৃষ্টি সত্ত্বেও ভোটদানে মানুষের উত্সাহ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফাতে সন্তোষজনক ভোটের হার থেকে ফলের দিশা সম্পর্কে একটা আগাম আঁচ পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। রাজ্যে `পরিবর্তন`-এর একটা চোরাস্রোত বইছে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে মিডিয়া। যদিও মায়াবতীর মুলুকে `অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর`-এর ফসল কোন দল ঘরে তুলবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফায় ১০ জেলার ৫৬ আসনের ভোট তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।