অবশেষে মিলল হায়দরাবাদ নাশকতার কিছু সূত্র

অবশেষে আটচল্লিশ ঘণ্টা পর হায়দরাবাদে জোড়া বিস্ফোরণ কিছু সূত্র হাতে এল গোয়েন্দাদের। দিলসুখনগর ফুটব্রিজের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। ফুটেজের ছবি স্পষ্ট না হলেও, কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা গেছে বলে খবর। গত বছরের পুণে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সঙ্গে হায়দরাবাদের ঘটনার মিল পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

Updated By: Feb 23, 2013, 09:19 AM IST

অবশেষে আটচল্লিশ ঘণ্টা পর হায়দরাবাদে জোড়া বিস্ফোরণ কিছু সূত্র হাতে এল গোয়েন্দাদের। দিলসুখনগর ফুটব্রিজের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। ফুটেজের ছবি স্পষ্ট না হলেও, কয়েকজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা গেছে বলে খবর। গত বছরের পুণে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সঙ্গে হায়দরাবাদের ঘটনার মিল পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
এ ব্যাপারে দিল্লি পুলিসের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে চলেছে অন্ধ্র পুলিস। গত বছর অক্টোবরে পুণে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সমাধান করেছিল দিল্লি পুলিস। পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয় সেসময়। দিল্লি পুলিস জানিয়েছিল, ধৃতদের মধ্যে দুজন হায়দরাবাদে রেকি করতে গিয়েছিল।
ধৃত জঙ্গি সৈয়দ মকবুলকে জেরা করে জনৈক রাজুভাইয়ের নাম পেয়েছিল দিল্লি পুলিস। পুণে বিস্ফোরণে সেই রাজুভাইয়ের বিশেষ ভুমিকা ছিল বলে অনুমান। হায়দরাবাদ বিস্ফোরণেও সেই রাজুভাইয়ের নাম উঠে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। এবিষয়েও দিল্লি পুলিসের সাহায্য চাওয়া হতে পারে। অন্যদিকে জানা যাচ্ছে তিহার জেলে বন্দী তিন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গিকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জেরা করেছেন স্পেশাল সেলের গোয়েন্দারা।  
অন্যদিকে, হায়দরাবাদে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জড়িত থাকার আশঙ্কা ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। তবে কোনও কোনও সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে এই ঘটনার পিছনে ইউনাইটেড জেহাদ কাউনসিল-এর হাত থাকতে পারে। জামায়েত-উল-মুজাহিদিন, জৈস-ই-মহম্মদ, আল বাবর-এর মত উগ্রপন্থী মৌলবাদী গোষ্ঠী সমবেত ভাবে আফজল গুরুর ফাঁসির বদলা নিতেই এই নাশকতা ঘটিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতে আইইডি বা ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ব্যবহার করা হয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও। গোয়েন্দাদের মতে ২০০৭-এ হায়দরাবাদের জোড়া বিস্ফোরণ এবং গত বছর পুণেতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সঙ্গে এবারের ঘটনার মিল আছে। ওই দুটি নাশকতার ঘটনাতেই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নাম জড়িয়ে গেছে। বড়  ধরনের ক্ষতি করার লক্ষ্যে খুবই শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল হায়দরাবাদে।
বিস্ফোরকে আরডিএক্স ছিল না। তবে বিস্ফোরক রাসায়নিকের সঙ্গে অল্প পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, লোহার টুকরো এবং বল্টু মিছিলে আইইডি তৈরি করা হয়েছিল। তামার তারে ওই বিস্ফোরক জড়িয়ে অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে ভরে বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিয়েছিল জঙ্গিরা। নজর এড়াতেই অল্প পরিমাণে বিস্ফোরক তৈরি করা হয় বলে অনুমান।
দুটি বিস্ফোরকের মধ্যে দূরত্ব ছিল ১৫০ মিটারের মতো। টাইমারের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পাঁচ মিনিট ব্যবধানে দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এবং ৩০ ফুট দূরত্বে ওই স্প্লিনটার যাতে মানুষকে আঘাত করতে পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। প্রাথমিক অনুমান, কোনও দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়নি। বিস্ফোরণের পরে   আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির পেট্রোলেই আগুন ধরে যায়। গোয়েন্দাদের মতে ২০০৭-এ হায়দরাবাদের জোড়া বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও ঠিক একইভাবে বিস্ফোরক তৈরি করা হয়েছিল। যদিও সেবার নিওজেল নামে একটি দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছিল। অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে তা রাখা হয়েছিল কাঠের বাক্সে।
২০০৭-এ সালে হায়দরাবাদে যে ফুট ব্রিজের কাছে একটি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা হয়েছিল, ঠিক সেখানেই বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয় বলে জানাচ্ছে পুলিস। গতবছর অগস্টে পুণের সিরিয়াল বিস্ফোরণের সঙ্গেও মিল রয়েছে হায়দরাবাদের জোড়া বিস্ফোরণের। পুণেতেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহৃত হয়েছিল। সেখানেও ১৫০ মিটার দূরত্বে চারটি বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। গত বছর অক্টোবর মাসে দিল্লি পুলিস জানায় পুণে বিস্ফোরণ কাণ্ডের সমাধান করা হয়েছে। সেই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। দিল্লি পুলিস জানিয়েছিল, ধৃতদের মধ্যে দুজন গত বছর জুলাই মাসে দিলসুখনগর এবং হায়দরাবাদের জনবহুল কয়েকটি বাজারের রেকি করেছিল। দিল্লি পুলিসের দাবি, ওই জঙ্গিদের প্রশিক্ষক যাকে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য। ফলে হায়দরাবাদে বিস্ফোরণ কাণ্ডে ক্রমশ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের জড়িত থাকার সম্ভাবনা বাড়ছে।  

.