বর্ষপূর্তিতে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার
আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে মূল্য বৃদ্ধি। আভ্যন্তরীন দুর্নীতি থেকে বিদেশ নীতি। নানা ক্ষেত্রে বেসামাল কেন্দ্রীয় সরকার। সঙ্গে রয়েছে শরিকি চাপ। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকাররের তিন বছর পূর্ণ হলেও তাতে বেশিরভাগ সময়ই ছিল অস্বস্তির কাঁটা।
আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে মূল্য বৃদ্ধি। আভ্যন্তরীন দুর্নীতি থেকে বিদেশ নীতি। নানা ক্ষেত্রে বেসামাল কেন্দ্রীয় সরকার। সঙ্গে রয়েছে শরিকি চাপ। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকাররের তিন বছর পূর্ণ হলেও তাতে বেশিরভাগ সময়ই ছিল অস্বস্তির কাঁটা।
প্রথম ইউপিএ-র সময় পরমাণু সঙ্কট ছাড়া আর বড় কোনও চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়নি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারকে। কিন্তু দ্বিতীয় ইউপিএ-র তিন বছরে একের পর এক সঙ্কটের ধাক্কা সামলাতে কার্যত নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাননি কংগ্রেসের `ক্রাইসিস ম্যানেজররা`।
আর্থিক দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারি দেশের আমজনতার কাছে অপরিচিত নয়। গত কয়েক দশকে এরকম নানা অভিযোগকে ঘিরে তোলপাড় রয়েছে রাজনীতি। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি, লটারি কেলেঙ্কারি, ইউরিয়া কেলেঙ্কারি, বোফর্স কেলেঙ্কারি, তাজ করিডর কেলেঙ্কারির মতো একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নেতা। কিন্তু দ্বিতীয় ইউপিএর আমলে কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে টু জি , কালো টাকা ইস্যু, ইসরো-দেভাস চুক্তি, টেট্রা চুক্তি একের পর এক কেলেঙ্কারির ধাক্কায় বেসামাল হয়েছে সরকার।
মহারাষ্ট্রে আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারির আঁচও লেগেছে কংগ্রেসের গায়ে। এর মধ্যে টু জি কেলেঙ্কারি ইতিমধ্যেই দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির তকমা পেয়ে গেছে। ফলে একের পর এক কেলেঙ্কারির জেরে দ্বিতীয় পর্বে তিন বছরের মাথায় রীতিমতো কোণঠাসা ইউপিএ সরকার।
এ তো গেল দুর্নীতির পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ। এই সরকারের আমলে দ্বিতীয় যে বিষয়টি আম আদমির পকেটে টান দিয়েছে, তা হল মূল্যবৃদ্ধি। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের লাগামছাড়া দাম। চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, গম, সবেরই দাম বেড়েছে দ্রুতগতিতে। মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েছে অনেকটাই। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, বারবার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ হয়নি। এই ইস্যুতে কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারের ভূমিকা নিয়েও বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা।
আবার কেন্দ্রের তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে চায় তারা। যা হলে অবশ্যম্ভাবী দাম বাড়বে জিনিসপত্রের। সরকার সাংসদদের বেতন বহুগুন বাড়িয়েছে। কিন্তু আম জনতার ভার লাঘবের চেষ্টা চোখে পড়েনি। দ্বিতীয় ইউপিএর তিন বছরের রিপোর্ট কার্ডে তাই লাল দাগ থেকেই যাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে।
শুধু দেশের মধ্যে দুর্নীতি বা মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতেই যে ইউপিএ-টুর রিপোর্ট কার্ড প্রশ্নের মুখে তা নয়। প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশ নীতিও।
২৬/১১ তদন্তে পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেও খুব একটা এগোতে পারেনি কেন্দ্র। বরং প্রথমে ২৬/১১ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা নয় বলে যুদ্ধং দেহী মনোভাব নিলেও পরে সুর নরম হয়েছে কেন্দ্রের। কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, খানিকটা মার্কিন চাপেই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে হয়েছে দিল্লিকে। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘে বড় ধরনের প্রমাদ ঘটিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা। তিনি ভুল করে পর্তুগালের মন্ত্রীর ভাষণ পড়তে শুরু করেন। পরে অন্য অফিসাররা তাঁর ভুল শুধরে দেন। তিস্তা চুক্তি নিয়েও শরিকি বাধায় ঢাকা সফরে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে। ফলে একদিকে দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মতো ঘরোয়া ইস্যু, অন্যদিকে বিদেশ নীতির ক্ষেত্রেও সরকারকে অস্বস্তির কাঁটা নিয়েই পার করতে হল তিনটে বছর।