কক্ষের এক কোণে বসে থাকুন, আদালত অবমাননায় নাগেশ্বরকে ‘নজিরবিহীন’ শাস্তি সুপ্রিম কোর্টের
যদিও এম নাগেশ্বর রাও ব্যক্তিগতভাবে আজ আদালতে উপস্থিত হয়ে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বের বেঞ্চের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেন। এবং নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়ে নেন
নিজস্ব প্রতিবেদন: আদালত অবমাননার জেরে আজ সারাটা দিন আদালতের কক্ষের এক কোণে বসে থাকতে হবে সদ্য প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন সিবিআই অধিকর্তা এম নাগেশ্বর রাওকে। এর সঙ্গে এক লক্ষ টাকা জরিমানাও দিতে হবে তাঁকে। আদালত অবমাননা করায় সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে এ দিন কার্যত নজিরবিহীন ‘শাস্তি’ শোনালো সুপ্রিম কোর্ট। কোন বিষয়ে আদালত অবমাননা করেছেন ওই প্রাক্তন সিবিআই কর্তা?
সম্প্রতি, সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তা অলোক ভার্মা এবং রাকেশ আস্থানার বাদানুবাদের জেরে তাঁদের ছুটিতে পাঠিয়ে রাতারাতি সিবিআইয়ের ডিরেক্টর পদে বসানো হয় এম নাগেশ্বর রাওকে। পদে বসেই একের পর এক বদলি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নাগেশ্বর রাও। মুজফ্ফরপুরে আবাসিক হোমে শিশুদের যৌন হেনস্থা মামলায় তদন্তকারী অফিসার তথা সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর এ কে শর্মাও ছিলেন ওই বদলির তালিকায়। সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, এই মামলায় কোনও তদন্তকারী অফিসারকে বদলি করা যাবে না, যা নাগেশ্বর রাওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আদালত অবমাননার সামিল।
আরও পড়ুন- অনিলের ‘মিডলম্যান’ মোদী, ফের নয়া তথ্য প্রকাশ্যে এনে বিস্ফোরক রাহুল
যদিও এম নাগেশ্বর রাও ব্যক্তিগতভাবে আজ আদালতে উপস্থিত হয়ে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বের বেঞ্চের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেন। এবং নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু সিবিআই কর্তার কাকুতিতে চিড়ে ভেজেনি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট ভর্ত্সনা সুরে জানায়, আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন নাগেশ্বর রাও। এটি আদালত অবমাননা ছাড়া আর কী হতে পারে? যদিও হলফনামা দিয়ে নাগেশ্বরের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেননি। এমনকী আদালত অবমাননা করার বিষয়টি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না বলে তিনি মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, “জানেন, আপনাদের এক মাসের জন্য জেলে পাঠাতে পারি।” অভিযুক্ত নাগেশ্বর রাও এবং সিবিআইয়ের আইনি পরামর্শদাতা ভাসুরণ এস-র হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন তাঁর আইনজীবী তথা অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। নাগেশ্বর রাওয়ের ‘৩২ বছরের নিষ্কলঙ্ক কেরিয়ারের’ কথা উল্লেখ করে বেঞ্চের কাছে লঘু শাস্তির অনুরোধ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ তখন বলে, “নাগেশ্বরের নিষ্কলঙ্ক কেরিয়ারের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর জন্য ক্ষমা চাইছেন আপনারা। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের মুখেই দোষ স্বীকার করছেন, সে কীভাবে নিষ্কলঙ্ক হতে পারে।”
আরও পড়ুন- বঙ্গ-বিজেপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, গুজরাট থেকে সরব অমিত শাহ
সিবিআইয়ের প্রাক্তন অন্তর্বর্তীকালীন অধিকর্তা নাগেশ্বর রাওয়ের হলফনামা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ নিয়ে খেলা করবেন না। হলফনামায় সন্তুষ্ট না হলে এ ধরনের আবেদন করবেন না। মনে রাখবেন আপনি আইনের সেবা করেন। এর পর নাগেশ্বর রাও এবং ভাসুরণকে শাস্তি হিসাবে এক লক্ষ টাকার জরিমানা করে আদালত। তার সঙ্গে বেঞ্চের নজিরবিহীন নির্দেশ, ‘আদলতের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কক্ষের এক কোণে বসে থাকুন। এটাই আপনাদের শাস্তি।’