ব্যাভিচারের দায় কি শুধু পুরুষের? প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্টই
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুসারে, কোনও বিবাহিত মহিলার সঙ্গে কোনও পুরুষ মহিলার স্বামীর সম্মতি ছাড়া মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাভিচারের দায়ে জেল ও জরিমানার কোপে পড়তে হতে পারে ওই পুরুষকে। তবে, সেক্ষেত্রে তাকে ধর্ষণ বলা হবে না।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতীয় দণ্ডবিধির 'লিঙ্গ বৈষম্যমূলক' বিধানের সাংবিধানিক বৈধতা নতুন করে পর্যালোচনা করতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে গঠিত একটি বেঞ্চ শুক্রবার এমনটাই বলেছে। ১৫৭ বছরের পুরনো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারাকে নিয়ে এবার পর্যালোচনার সময় এসেছে বলে মত বিচারপতিদের।
ইতালির ট্রেনটোতে কর্মরত কেরালা নিবাসী জোসেপ সাইনের দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল শুক্রবার। সুপ্রিম কোর্টের কাছে তিনি জানতে চান, কোনও বিবাহিত পুরুষ বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীর সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে শুধুমাত্র সেই পুরুষই আইনের চোখে ব্যাভিচারী বলে গণ্য হবে? প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এএম খানউইলকর ও ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে নিয়ে গঠিত হয় একটি ডিভিশন বেঞ্চে শুক্রবার ছিল মামলাটির শুনানি। এবিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে হলফনামা দিয়ে অবস্থান জানাতে বলেছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন- দিল্লির নারেলার ঘটনায় নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করলেন কেজরিওয়াল
প্রসঙ্গত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুসারে, কোনও বিবাহিত মহিলার সঙ্গে কোনও পুরুষ মহিলার স্বামীর সম্মতি ছাড়া মহিলার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাভিচারের দায়ে জেল ও জরিমানার কোপে পড়তে হতে পারে ওই পুরুষকে। তবে, সেক্ষেত্রে তাকে ধর্ষণ বলা হবে না। অন্যদিকে, ওই মহিলা এক্ষেত্রে প্রতারিত হয়েছেন বলে ধরে নিয়ে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
শতাব্দী প্রাচীন এই ধারার কথা তুলে ধরে এই মামলায় আইনজীবী কালেশ্বরাম রাজ বলেন, ''সম্মতিক্রমে যখন একজন বিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত মহিলা বা বিবাহিত মহিলা ও অবিবাহিত পুরুষ বা অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত মহিলা যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হচ্ছেন, তখন তাকে কোনও ভাবেই অপরাধ বলে গণ্য করা যায় না।''
আরও পড়ুন- ভিনধর্মে বিয়েতে স্বামীর ধর্ম মানতে বাধ্য নয় স্ত্রী, স্পষ্ট জানাল সুপ্রিম কোর্ট
এই যুক্তি পেশের পরই ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, সাধারণত ফৌজদারির মামলায় লিঙ্গ নিরপেক্ষতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে যেহেতু দু'পক্ষেরই সম্মতিক্রমে ঘটনাটি ঘটছে, সেখানে দেখা প্রয়োজন এর জেরে কোনও অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে কি না। তার ভিত্তিতেই মামলার গতি নির্ধারণ করা হবে।
এই বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চেয়ে বিচারপতিরা জানান, ''এতদিন ধরে যে আইন চলে আসছে এবার তাতে বদল আনার সময় এসেছে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, সমাজে একজন পুরুষ ও মহিলার অবস্থান ও সম্মান সমান। সমাজ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আইনেও তার প্রতিফলন ঘটার দরকার।''