ঐতিহাসিক রায়ের পিছনের ইতিহাস: শায়রা বানুর আবেদনেই তালাকে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ

Updated By: Aug 23, 2017, 09:37 AM IST
ঐতিহাসিক রায়ের পিছনের ইতিহাস: শায়রা বানুর আবেদনেই তালাকে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ

উত্তরাখণ্ড: ৩:২। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ওপর দাঁড়িয়ে ৬ মাসের জন্য ভারতে 'তিন তালাক' প্রথার উপর স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদলতের প্রধান বিচারপতি জেএস কেহরের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ তিন তালাকের বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছে তাকে ইতিমধ্যেই 'ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত' বলে উল্লেখ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। যদিও ৫ জন বিচারপতি বিশিষ্ট বেঞ্চের ২ জন 'তিন তালাকে'র বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। দেশের গেরুয়া শিবির মেতেছে বিজয় উল্লাসে। এটা নাকি 'মোদীর জয়', এমনই দাবি বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। যদিও ভারতের শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিজেপি সভাপতি জানিয়েছেন, "এটা কারোর একার জয় বা পরাজয় নয়। দেশের কোটি কোটি মুসলমান মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে একটা দৃঢ় পদক্ষেপ।" এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন, বিএসপি সভানেত্রী মায়াবতীও। কিন্তু যে 'ঐতিহাসিক রায়' নিয়ে এত তোলপাড় রাজনীতিকদের মধ্যে সেই মামলার পেছনে আদতে কে?

 

তিনি শায়রা বানু। ৩৬ বছর বয়সী শায়রা বানুই হলেন সেই মুসলমান মহিলা যিনি 'পার্সোনাল ল প্র্যাকটিস'-এর বিরুদ্ধে সরব হন এবং আইনি লড়াই লড়েন। যদিও শায়রা বানুর পিটিশনে কোথাও মুসলিম ল বোর্ডের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না, তিনি  মূলত আইনের কাছে সবার সমান অধিকার এবং ধর্মের ভিত্তিতে লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টিকেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। শায়রা যখন পিটিশন দায়ের করেছিলেন, তিনি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন 'তাৎক্ষণিক তালাক'-এর ওপর।  শায়রা বানুই প্রথম ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন ফাইল করেন। মুসলিম পর্সোনাল ল (শরিয়ত) অনুযায়ী কোনও মুসলমান মহিলা তার স্বামীকে ডিভোর্স করতে পারেন না। শায়রার প্রতিবাদ এই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধেও। "আইনে কী বলা আছে আমি তা জানতে চাই না। একজন পুরুষই তালাক দিতে পারে, এটাকে কোনও এক বিশেষ লিঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা ছাড়া আর কী বলা যাতে পারে", এই প্রশ্নটাই ছিল শায়রা বানুর।    

 

 

১৫ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় শায়রা বানুর। আর এই বিচ্ছেদের মূল কারণই ছিল বধূ নির্যাতন। "বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই স্বামীর পরিবার থেকে পণ চাওয়া হয়। গাড়ি, টাকা চেয়ে বারবার আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হত। আমার স্বামী বিয়ের প্রথম দুবছর আমাকে তালাক দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। আমি গোটা বিষয়টি আমার পরিবারকে জানালে তাঁরা আমাকে ডিভোর্সের পরামর্শ দেয়", 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এ জানিয়েছেন শায়রা বানু। শায়রা এখন দুই সন্তানের জননী। ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং ১২ বছর বয়সের ছেলে দুজনের কেউই তাঁর সঙ্গে থাকে না। শায়রা বানুর স্বামী এখন জেলে। 

 

উল্লেখ্য, এদিনের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন নারীবাদী হিসেবে পরিচিত লেখিকা, তাসলিমা নাসরিন। "সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় মুসলিম ল বোর্ডের ওপর একটা চরম থাপ্পড়। নারীদের আরও শিক্ষিত এবং স্বাধীন হওয়া দরকার", টুইট তাসলিমার।  

  

.