শেষ পর্যন্ত কি মুখোমুখি সমরে প্রণব ও কালাম

দিনভর দফায় দফায় বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামই চূড়ান্ত কংগ্রেস কোর কমিটি। শুক্রবার ইউপিএর বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তা ঘোষণা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Updated By: Jun 14, 2012, 08:03 PM IST

দিনভর দফায় দফায় বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামই চূড়ান্ত কংগ্রেস কোর কমিটি। শুক্রবার ইউপিএর বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তা ঘোষণা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায় ও এ পি জে আব্দুল কালামকে কেন্দ্র করে এদিন রাজধানীতে প্রতি মুহূর্তে পাল্টাচ্ছে রাজনীতির অঙ্ক। দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। বৈঠক করেন ডিএমকের মতো শরিকদলের নেতাদের সঙ্গেও। এনিয়ে আলোচনা করতে শুক্রবার ইউপিএ, এনডিএ দুই শিবিরই আলাদা বৈঠকে বসছে। ওদিকে ইউপিএর বৈঠকে হাজির থাকবেন না বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে রাজধানীতে সব পক্ষের তত্পরতা তুঙ্গে। ইউপিএ, এনডিএ এবং অন্যান্য দলগুলির অবস্থান থেকে এখনও পর্যন্ত যে ছবিটা ধরা পড়েছে, তাতে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন দুজন প্রার্থী। প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং এপিজে আবদুল কালাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণববাবুর নাম খারিজ করার পরে এ ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদীর বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অন্তত এক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রীর চাপের কাছে মাথা নোয়াবে না দশ জনপথ। সন্ধ্যা গড়াতে না-গড়াতেই তার প্রমাণও মিলেছে। কোর কমিটির বৈঠকে প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করেছে কংগ্রেস। যদিও তার আগে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর ও মুলায়ম সিংয়ের প্রার্থী হিসাবে কালামের নামেই অনড় থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, "রাজনীতির ওপরে উঠে যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে কালামের নাম প্রস্তাব করছেন তিনি।" তাছাড়া শুক্রবার ইউপিএর বৈঠকে তৃণমূল ডাক পায়নি বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব ও কালামের মধ্যে ভোটাভুটির সম্ভাবনাই প্রবল।   
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ পদপ্রার্থীর জন্য সমর্থন চেয়ে এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতার সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। বৈঠকে, এ পি জে আব্দুল কালামের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এনডিএ আমলেই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম। সংখ্যালঘু মুখ হিসাবে এবারও তাঁকে প্রার্থী করলে জয়ললিতার মতো বিরোধী জোটের বাইরের দলগুলির সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী বিজেপি। ইউপিএ-র ঘর ভেঙে পাওয়া যাবে তৃণমূলের সমর্থনও। অন্যদিকে, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামে বৃহত্তর ঐকমত্যের আশায় রয়েছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই ইউপিএ প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব। ইউপিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন এমন ইঙ্গিত মিলেছে সমাজবাদী পার্টির দুই শীর্ষ নেতা রামগোপাল যাদব ও মোহন সিংয়ের বক্তব্যেও। কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারে বহুজন সমাজবাদী পার্টিও। এনসিপি-ও আছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পাশেই।  
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ম্যাজিক সংখ্যা ৫,৪৯,৪৪২। তৃণমূলকে নিয়ে ইউপিএ-র মোট ভোটমূল্য ৪,৬০,১৯১। এনডিএ-র মোট ভোটমূল্য ৩,০৪,৭৮৫। সাংসদ ও বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে তৃণমূলের হাতে রয়েছে ৪৮,০৪৯টি ভোট। ৫৪,৫৯০টি ভোট রয়েছে বামেদের। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির মোট ভোটমূল্য যথাক্রমে ৬৮,৮১২ ও ৪৩,৩৪৯।
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে যদি সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি ও বামেরা সমর্থন করে এবং তৃণমূল সমর্থন না-করে, তাহলে তাঁর পক্ষে যাওয়া মোট ভোটমূল্য দাঁড়াবে ৫,৭৮,৮৯৩, যা ম্যাজিক সংখ্যার চেয়ে ২৯,৪৫১ বেশি। অন্যদিকে, তৃণমূল এবং এনডিএর সমর্থন পেলেও এপিজে আবদুল কালামের পক্ষে মোট ভোটমূল্য দাঁড়াবে ৩,৫২,৮৩৪, যা ম্যাজিক সংখ্যার চেয়ে ১,৯৬,৬০৮ কম।
  
এই পরিস্থিতিতে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাইসিনা হিলের বাসিন্দা কে হবেন তা সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, চার বামদল-সহ অন্যান্য দলগুলির ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে।

.