রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : কংগ্রেসের কৌশলে `ব্যাকফুটে` তৃণমূল
কংগ্রেসের কৌশলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দর কষাকষির রাজনীতিতে আপাতত কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি কংগ্রেস। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সুকৌশলে সর্বসম্মত প্রার্থীর কথা রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে দেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ।
কংগ্রেসের কৌশলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দর কষাকষির রাজনীতিতে আপাতত কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেল তৃণমূল কংগ্রেস। এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি কংগ্রেস। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সুকৌশলে সর্বসম্মত প্রার্থীর কথা রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে দেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। আর তার ফলে যাবতীয় রাজনৈতিক সমীকরণের মোড় ঘুরে গিয়েছে। হঠাত্ করেই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে ৪ বামদলের ভূমিকা। দর কষাকষির রাজনীতিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার মতো সংখ্যা একা কংগ্রেসের নেই। তাই কংগ্রেসকে নির্ভর করতে হচ্ছে শরিকদের ওপর। আর এই শরিকি সমীকরণেই মোট ভোটের ৪ শতাংশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রপতি ভোটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে হাতিয়ার করে দাবি আদায়ের জন্য কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়াচ্ছিল তৃণমূল। কিন্তু ছবিটা বদলে যায় শুক্রবার সকালে। ওই দিন সকাল থেকেই দিল্লির রাজনৈতিক মহলে সর্বসম্মত প্রার্থী নিয়ে কানাঘুষো ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে প্রণব মুখোপাধ্যায়, হামিদ আনসারি বা এপিজে আবদুল কালামের নাম রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোরাফেরা করছিল রাজধানীর অলিন্দে। কিন্তু কংগ্রেস কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
শুক্রবারই প্রথম কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সর্বসম্মত প্রার্থীর কথা ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কংগ্রেসের এই চালেই পাল্টে যায় এই কয়েক দিনের রাজনৈতিক সমীকরণ। বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে মুলায়ম সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শুক্রবার মুলায়মের সঙ্গে দেখা করে একপ্রস্ত বৈঠক করেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি দেখা করেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। বামেরা প্রথম থেকেই সর্বসম্মত প্রার্থীর কথা বলছিলেন। শুক্রবার কংগ্রেসও সেই কথা বলায়, রাতারাতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ৪ বাম দলের হাতে থাকা ৫ শতাংশ ভোট। তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, ইউপিএ`র হাতে রয়েছে ৪১ শতাংশ ভোট। তার মধ্যে তৃণমূলের ভোট ৪ শতাংশ। এসপি, আরজেডি, বিএসপির মত বাইরে থেকে সমর্থন করা দলগুলিকে নিয়ে ইউপিএ`র হাতে রয়েছে ৫২ শতাংশ ভোট। তৃণমূলের সমর্থন না পেলে তা কমে দাঁড়াতে পারে ৪৮ শতাংশে।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বসম্মত প্রার্থী নিয়ে কংগ্রেসের পাশে রয়েছে বামেরা। তাদের রয়েছে ৫ শতাংশ ভোট। আবার সর্বসম্মত প্রার্থী হলে জে ডিইউ-এর মতো এনডিএর কিছু শরিক দলের সমর্থন চলে আসতে পারে ইউপিএ-র পক্ষে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের সমর্থন না পেলেও অসুবিধায় পড়বে না ইউপিএ। ফলে সর্বসম্মত প্রার্থীর কথা কংগ্রেস সামনে এনে যেমন বামেদের পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে তেমনই এনডিএ শিবিরে মতপার্থক্যের সুবিধাও নিতে পারে। এই সমীকরণেই আর ততটা তৃণমূলের মুখাপেক্ষি নয় কংগ্রেস। এতদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থনের বিনিময়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে দরকষাকষি করেছে তৃণমূল। এখন পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে ইউপিএ`র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিকের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করতেই কি সর্বসম্মত প্রার্থীর কথা তুললেন কংগ্রেস নেতৃত্ব? দিল্লির রাজনৈতিক মহলে আপাতত এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে।