পল্টু থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়
কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা হিলসের দূরত্ব সতেরশো কিলোমিটারের বেশি। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে ছেলেটার সময় লেগেছে পঞ্চাশ বছর। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে তার পথ চলা। কোন মন্ত্রবলে গ্রামের মেঠো পথ পাড়িয়ে রাইসিনা হিলসের দরজায় পৌঁছে যাওয়া ? উত্তর একটাই, অধ্যবসায়।
কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা হিলসের দূরত্ব সতেরশো কিলোমিটারের বেশি। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে ছেলেটার সময় লেগেছে পঞ্চাশ বছর। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে তার পথ চলা। কোন মন্ত্রবলে গ্রামের মেঠো পথ পাড়িয়ে রাইসিনা হিলসের দরজায় পৌঁছে যাওয়া ? উত্তর একটাই, অধ্যবসায়।
মেঠো রাস্তা। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। বর্ষাকালে গামছা পরে একহাতে ইউনিফর্ম আর একহাতে বই নিয়ে স্কুলে যেত ছেলেটা। স্কুলে ঢোকার আগে কাদা পা ধুয়ে ইউনিফর্ম পরে নিত সে। গ্রামের সবাই তাকে ডাকত পল্টু বলে। আর দশটা ছেলের থেকে সে যে খুব আলাদা ছিল, এমনটা কিন্তু নয়। তবে তার স্মরণশক্তি আর অধ্যবসায়ের প্রশংসা আজও করেন শিক্ষকরা। স্কুলের পরীক্ষায় কখনও প্রথম হয়নি সে। কখনও দ্বিতীয় কখনও বা তৃতীয়। তবে ডিবেটে বরাবরই ভালো ছিল ছেলেটা।
বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তারপর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়েছেন মিরাটির বাড়িতেই। ছোট্ট দুটো ঘর। একান্নবর্তী পরিবার। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছেলেটি ভর্তি হয় কলকাতার কলেজ। ছুটি পেলেই চলে আসত কীর্ণাহারের বাড়িতে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় টপকে শিক্ষকতার জীবন। স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করে তারপর কলেজ। সেখান থেকেই রাজনীতির হাতেখড়ি। তারপর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কলকাতা থেকে দিল্লির রাজনীতিতে প্রবেশ। আর আজ, সেখান থেকে রাইসিনা হিল।
এই পঞ্চাশ বছরের মধ্যে পল্টু নামটা ভুলে গেছেন প্রায় সকলেই। সবার কাছে তিনি এখন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাজনীতির আঙিনায় তাঁর পরিচিতি চাণক্য নামে। আর কংগ্রেসের ঘরে তিনি ক্রাইসিস ম্যানেজার। কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা হিলে কিভাবে পৌঁছে গেলেন তিনি? জীবনের কোন রসায়নকে পাথেয় করে পথ চলেছেন প্রণববাবু? তাঁর দিদি অন্নপূর্ণা দেবীর কাছে দভাইয়ের এই পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবনের শুধু সাফল্যের দিকগুলেই সামনে উঠে আসে। কিন্তু এই দীর্ঘ পথ যে কতটা কঠিন ছিল, সেটা অনেকেরই অজানা। অজয় মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজনীতির শুরু। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহধন্য মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় মানুষটাকেও কংগ্রেস থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল। সামান্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন দল করলেও তা হালে পানি পায়নি। ফের কংগ্রেসে ফেরত। গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য চূড়ান্ত অধ্যবসায়। এই ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই নিজের জীবনের চলার পথটাকে খুঁজে নিতে হয়েছে তাঁকে। আর এই খুঁজতে খুঁজতেই রাইসিনা হিলের দরজায় পৌঁছে যাওয়া।