নাতনির লেখাপড়া চালাতে দাদুর আত্মত্যাগ, অটোতে রাত কাটানোর গল্প

গর্বের সঙ্গে দেশরাজ বলেন, 'আমি আমার নাতনিকে স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে দেখতে চাই। সেদিন আমি তাঁকে জড়িয়ে বলতে চাই তুই আমার গর্ব'। 

Updated By: Feb 12, 2021, 02:09 PM IST
নাতনির লেখাপড়া চালাতে দাদুর আত্মত্যাগ, অটোতে রাত কাটানোর গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদন: দাদু নাতনির সত্যি গল্প। সোশাল মিডিয়ার ময়দানে জানাজানি হওয়া মাত্রই, আবেগঘন হয়ে উঠছেন নেট নাগরিকরা। ঘটনা আজকের নয়। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে দাদু নাতনির হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। 

দুই ছেলেকে হারিয়েছেন হত দরিদ্র বাবা দেশরাজ। এখন তাঁর কাঁধে রয়েছে নাতনির দায়িত্ব। নাতনিকে বড় ও ভালোভাবে মানুষ করতে চান দাদু দেশরাজ। নাতনির পিছনে শক্ত খুঁটি এখন শুধুমাত্র তিনি। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসার। তবুও নাতনির লেখাপড়া যাতে বিন্দুমাত্র ক্ষতি না হয়, তাই আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দাদু। 

 

দেশরাজ জানিয়েছেন, '৬ বছর আগে তাঁর বড় ছেলে রোজকার মতো কাজে বের হয়েছিলেন। কিন্তু আর বাড়ি ফেরেননি। ১ সপ্তাহ পর তাঁর দেহ পাওয়া যায়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৪০।   কিন্তু শোক পালন করতে পারিনি বাড়িতে বসে। কারণ আমি বাড়িতে বসে গেলে ওঁরা খেতে পাবে না। তাই অটো নিয়ে বেরিয়ে যাই। তার ২ বছর পর ছোট ছেলেকে হারাই। আত্মহত্যা করে সে। এরপর আমার কাঁধে আসে ছেলের বউ ও চার নাতি নাতনির দায়িত্ব'। 

দেশ রাজ বলেন, 'আমার নাতনি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় সিদ্ধান্ত নেয় আর পড়বে না। কারণ পড়াশোনা করাটা আমাদের পরিবারের কাছে বিলাসিতা হয়ে উঠেছিল। খরচ টানা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল মনে।  তাই আমি সে সময় তাঁকে লেখাপড়া ছাড়তে বারণ করি'। 

তাঁর কথায়, 'অতিরিক্ত রোজগারের জন্য  দিনে কাজের সময় বাড়িয়ে দিই। সকাল ৬ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে মাসে ১০ হাজার টাকা রোজগার করতাম। যার মধ্যে ৬০০০ টাকা পড়াশোনার খরচ বাবদ আমি নাতনির হাতে তুলে দিতাম। ৪০০০ টাকা খাওয়া-খরচের জন্য রাখতাম'। 

তিনি আরও বলেন, 'এত কষ্টের দাম দিয়েছে আমার নাতনি। সে ১২ ক্লাসের বোর্ড পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করে। তাঁর সাফল্যে সেদিন আমি খুশিতে সমস্ত যাত্রীকে বিনামূল্যে তাঁদের গন্থব্যস্থলে পৌঁছে দিয়েছিলাম'। 

কিন্তু যখন সে বলল, 'দাদু আমি B.Ed করতে দিল্লি যেতে চাই, সেদিন থেকে চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছিল। আমার পক্ষে এত খরচ জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আমি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। তাই আমি আমার বাড়ি বিক্রি করে তাঁর পড়ার খরচ জোগাড় করেছি। পরিবারের বাকি সদস্যদের গ্রামে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন আমি অটোতেই দিন কাটাই। সেখানেই ঘুমোই। এরকমভাবেই কেটে গিয়েছে প্রায় ১ বছর'। 

গর্বের সঙ্গে দেশরাজ বলেন, 'আমি আমার নাতনিকে স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে দেখতে চাই। সেদিন আমি তাঁকে জড়িয়ে বলতে চাই তুই আমার গর্ব'। 

দেশরাজের জীবনকহিনী ও তাঁর নাতনির পড়াশোনার জন্য এই বিরাট আত্মত্যাগ অনাবিল তৃপ্তি জোগাচ্ছ সোশাল মিডিয়ায়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ২৭৬ জন অনুদান দিয়েছে মোট ৫.৩ লাখ টাকা। 

কংগ্রেসের নেতা অর্চনা ডালমিয়া গোটা টুইট করে দেশরাজকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ জানান। সেখানে তাঁর অটো নম্বর ও ফোন নম্বর দিয়েছেন। 

.