নাগরিক সভ্যতায় বিপন্ন হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্র

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। গর্ভগৃহ ছাড়া নিশ্চিহ্ন প্রায় গোটা কেদারনাথ মন্দির চত্বর। কেদারনাথ যাত্রার প্রবেশপথ গৌরীকুণ্ডেরও কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? শুধুই কি মেঘভাঙা বর্ষণ? নাকি গোটা হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন নাগরিক সভ্যতার হস্তক্ষেপে?

Updated By: Jun 20, 2013, 10:50 PM IST

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। গর্ভগৃহ ছাড়া নিশ্চিহ্ন প্রায় গোটা কেদারনাথ মন্দির চত্বর। কেদারনাথ যাত্রার প্রবেশপথ গৌরীকুণ্ডেরও কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু কেন এই বিপর্যয়? শুধুই কি মেঘভাঙা বর্ষণ? নাকি গোটা হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন নাগরিক সভ্যতার হস্তক্ষেপে?
 
দুর্যোগের পর কেটে গেছে কয়েকটা দিন। ক্রমশ সামনে আসছে ধ্বংসের ছবি। গর্ভগৃহ ছাড়া কেদারনাথ মন্দিরের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভেঙে গিয়েছে মন্দিরের চাতালও । চারপাশের বিভিন্ন ধর্মশালা, অতিথিনিবাস ধ্বসে নিশ্চিহ্ন। সরকারি কার্যালয়, পোস্ট অফিস ও পুলিস চৌকিরও কোনও অস্তিত্ব নেই। ঠিক কী ঘটেছিল বিপর্যয়ের দিন? কেদারনাথ মন্দির থেকে ছ কিলোমিটার দূরে চোরাবারি তাল। হ্রদের ঠিক পিছনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে  কেদার ও কেদারডোম পর্বত শৃঙ্গ। ঘটনার দিন মেঘ ভাঙা বৃষ্টির তোড়ে ভেঙে যায় কেদারডোমের একাংশ। টনটন বরফ ও পাথরের স্তূপ নেমে আসে চোরাবারি তালে। সঙ্গে প্রবল বর্ষণ। চোরাবারি তাল উপচে জলরাশি ধেয়ে আসে কেদারনাথ মন্দিরের দিকে।
 
শুধুমাত্র বর্ষা এগিয়ে আসাতেই কি এই উত্তরাখণ্ড জুড়ে এই ভয়াবহ বিপর্যয়? নাকি প্রকৃতির রুদ্ররূপের পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত অরণ্য নিধন এবং পর্যটক টানতে নিয়ম ভেঙে একের পর এক বহুতল নির্মাণ হয়েছে হিমালয়ের বুক চিরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা যত আধুনিক হয়েছে, ততই পাহাড় কেটে তৈরি হচ্ছে একের পর এক রাস্তা। যানজট কমাতে সারা বছরই রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আর তাতেই বেড়ে গিয়েছে ধসের প্রবণতা। উত্তরাখণ্ডের চোদ্দটি নদী উপত্যকায় দুশো কুড়িটির বেশি জলবিদ্যুত্‍‍‍ প্রকল্প এবং সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলছে। খননের সময় বা সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তাতেই বেড়ে যাচ্ছে ধসের সম্ভাবনা। বছর খানেক আগে, উত্তরকাশীতে যে বিপর্যয় ঘটেছিল,  সেজন্য দায়ী করা হয়েছিল অসিগঙ্গা জলবিদ্যুত্‍‍‍‍ প্রকল্পের কাজকে। ওই প্রকল্প এলাকায় বাঁধ তৈরির জন্য নিয়মিত বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছিল। সেই বিস্ফোরণে পাহাড় থেকে পাথরের বড় বড় খণ্ড  ভেঙে জমা হচ্ছিল নদীতে। ফলে বাড়তে থাকে নদীর জলস্তর। এর ওপর ভারী বৃষ্টি হলে হড়পা বানের সম্ভাবনা কয়েকগুন বেড়ে যায়। এবারও সেই ধরনের ঘটনাই ঘটেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় স্বাভাবিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে নাগরিক সভ্যতার হস্তক্ষেপ। প্রকৃতি যেন ফুঁসে উঠছে তাঁরই বিরুদ্ধে। কেদারনাথের চারপাশে ধ্বংসস্তুব যেন  তারই  উদাহরণ।
 

.