করোনা ভয়ঙ্কর হলে লকডাউন? রবিবার 'জনতা কার্ফু' আসলে নমোর রিহার্সাল?

কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না নরেন্দ্র মোদী। নোটবন্দি হোক বা জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার, নরেন্দ্র মোদী মানেই '৫৬ ইঞ্চি'র দম। 

Updated By: Mar 19, 2020, 10:36 PM IST
করোনা ভয়ঙ্কর হলে লকডাউন? রবিবার 'জনতা কার্ফু' আসলে নমোর রিহার্সাল?

নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় রবিবার 'জনতা কার্ফু'র ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু একদিন গৃহবন্দি থেকে কী হবে? আদৌ কী লাভ হবে? প্রশ্ন উঠছে ইতিউঁতি। বৃহস্পতিবার নিজের ভাষণেই একদিনের 'জনতা কার্ফু'র আসল উদ্দেশ্য খানিকটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে, ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে করোনা ঠেকাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে মোদী সরকার।    

কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না নরেন্দ্র মোদী। নোটবন্দি হোক বা জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার, নরেন্দ্র মোদী মানেই '৫৬ ইঞ্চি'র দম। সেই নরেন্দ্র মোদীই করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেশবাসীর কাছে রবিবার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত 'জনতা কার্ফু'র অনুরোধ করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা অত্যন্ত সরল। স্বেচ্ছায় কার্ফু পালন করুন। জরুরি কাজ থাকলে বাইরে বেরোন। কিন্তু তারপরই যা বললেন প্রধানমন্ত্রী, তা হল- ''২২ মার্চ জনতা কারফিউয়ের সাফল্য ও অভিজ্ঞতা আমাদের আসন্ন চ্যালেঞ্জে মোকাবিলার পাথেয় হবে। এজন্য রাজ্য সরকারগুলিকে নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করছি। এনসিসি, এনএসএস কয়েকটি যুব সংগঠন, খেলাধুলার সংগঠনগুলি এগিয়ে আসুন।  সবার কাছে রবিবার জনতা কার্ফু সফল করার আবেদন করছি। ''  

জনতা কার্ফু ঘোষণার আগে কী ইঙ্গিত দিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন,''ছোটবেলায় যুদ্ধের সময় ব্ল্যাকআউট হতো। তারপরেও পুরসভাগুলি ব্ল্যাকআউটের ড্রিল করাত। যাতে নাগরিকরা অভ্যস্ত থাকেন।''   

'জনতা কার্ফু'র ঘোষণার আগে ও পরের বক্তব্য খুঁটিয়ে শুনলে চুম্বকে আসছে দুটি কথা- প্রথমত, নাগরিকদের অভ্যস্ত করা। দ্বিতীয়ত, একদিনের জনতা কার্ফুর অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণ। অর্থাত্ একদিনের জনতা কার্ফুর ডেকে জল মেপে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর পাশাপাশি নাগরিকদের ঘরে রাখার একটা অভ্যাসও করানো গেল। রবিবারই বা কেন? ছুটির দিন পার্টি, লোকের বাড়ি, এদিক-ওদিক ঘুরতে যান ভারতীয়রা। সে কারণে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। বলে রাখি, মারণ-ভাইরাসের মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীকে গোটা দেশে ১৪৪ ধারা জারির আর্জি জানান একদল শিল্পপতি। ৫১ জন শিল্পোদ্যোগীর আর্জি করেন, অবিলম্বে দেশজুড়ে জারি করা হোক ১৪৪ ধারা।           
                     
এদেশে এখনও দ্বিতীয়ধাপে রয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এখনও সমাজে ছড়িয়ে পড়েনি। ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে একবার করোনাভাইরাস মহামারীর আকার ধারণ করলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে। তার বুঝেই বারবার সাবধান করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শুরুতেই বলেন,''শুরুর কয়েকদিন পর আচমকা আক্রান্তের বিস্ফোরণ হয়েছে। দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রামিত লোকের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার ট্র্যাক রেকর্ডের উপরে নজর রেখে চলেছে। কয়েকটি দেশ এমনও আছে, যেগুলি নিজেদের আইসোলেট করে পরিস্থিতি সামলেছে। নাগরিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশের সামনে এবার করোনার সংকট। ভারতের উপরে কোনও প্রভাব পড়বে না, এটা ঠিক নয়।''
 
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে পারলেই কেল্লাফতে। কিন্তু তেমনটা না হলে! পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে লকডাউন ছাড়া আর উপায়ন্তর থাকবে না ভারত সরকারের। ফলে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় সেটাই আটকাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশবাসীকে বার্তা, আপনারা ভাবছেন, ঠিক আছি, আমার কিছু হবে না। বাজারে ঘুরবেন, রাস্তায় যাবেন। এভাবে ভাবছেন করোনা থেকে বাঁচবেন! এটা ঠিক নয়। নিজের সঙ্গে ও প্রিয়জনের সঙ্গে অবিচার করে ফেলবেন।              
  
এদিনই আন্তর্জাতিক উড়ানের অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২২ মার্চ থেকে ভারতের মাটিতে অবতরণ করতে দেওয়া হবে না বিদেশ থেকে আসা বিমানগুলিকে। আপত্কালীন ও জরুরিক্ষেত্র ব্যতিরেকে বেসরকারি কর্মীদের 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' বা ঘরে বসে কাজ করার সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশিকা জারির অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

আরও পড়ুন- বন্ধ বিদেশি বিমান, বেসরকারি কর্মীদের ঘরে বসে কাজ, কড়া দাওয়াই কেন্দ্রের

.