কীভাবে মারা গেলেন সুভাষ পাল? অভিজ্ঞতা জানালেন এভারেস্ট জয়ী রুদ্রপ্রসাদ হালদার

কীভাবে মারা গেলেন সুভাষ পাল? গৌতম ঘোষ ও পরেশ নাথেরই বা কী হল? এভারেস্ট শীর্ষে পৌছেছিলেন কি অভিশপ্ত অভিযাত্রীরা? বেসক্যাম্প থেকে সেই অভিজ্ঞতাই লিখেছেন এভারেস্ট জয়ী রুদ্রপ্রসাদ হালদার। ফেসবুকে তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতা।

Updated By: May 25, 2016, 08:58 AM IST
কীভাবে মারা গেলেন সুভাষ পাল? অভিজ্ঞতা জানালেন এভারেস্ট জয়ী রুদ্রপ্রসাদ হালদার

ওয়েব ডেস্ক: কীভাবে মারা গেলেন সুভাষ পাল? গৌতম ঘোষ ও পরেশ নাথেরই বা কী হল? এভারেস্ট শীর্ষে পৌছেছিলেন কি অভিশপ্ত অভিযাত্রীরা? বেসক্যাম্প থেকে সেই অভিজ্ঞতাই লিখেছেন এভারেস্ট জয়ী রুদ্রপ্রসাদ হালদার। ফেসবুকে তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতা।

অনেকটা ডায়েরির মতো করে লেখা এভারেস্ট অভিযাত্রীর অভিজ্ঞতা। সোশ্যাল সাইটে রুদ্রপ্রসাদ তুলে ধরেছেন শিখর জয়ের মুহূর্তটিকে।   

হাওড়ার মলয় মুখোপাধ্যায়, বারাসতের রমেশ রায়, টালিগঞ্জের সত্যরূপ সিদ্ধান্ত ও সোনারপুরের আমি ২০ মে প্রচণ্ড হাওয়ার মধ্যে সাউথ কলে(সামিট ক্যাম্প) পৌছই। ঘণ্টা পাঁচেক বিশ্রাম নিয়ে সন্ধে সাড়ে ৬টায় শিখরের উদ্দেশে রওনা দিই। পরদিন সকাল ৫ টা ২৪ মিনিটে এভারেস্ট শিখরে জাতীয় পতাকা, পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের পতাকা ও আমার ক্লাব সোনারপুর আরোহীর পতাকা মেলে ধরি। আমাদের গাইড ছিলেন দার্জিলিংয়ের ঘুমের বাসিন্দা বিখ্যাত পেম্বা শেরপা। 

সহজ ছিল না শিখরে চড়া। রুদ্রপ্রসাদ লিখেছেন কীভাবে আগাম পরিকল্পনায় জয় করা গিয়েছিল অক্সিজেনের চ্যালেঞ্জ।

অভিযানের জন্য সংগৃহীত অক্সিজেন দুবছর পর এবছর ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিকভাবে সিলিন্ডারের প্রেশার কম ছিল। প্ল্যানিং করার সময় পেম্বাজির পরামর্শ মতো আমরা চারজন একটি করে অতিরিক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিই। কিন্তু, বাঙালির পর্বতাভিযান শুধু পাওয়ার নয়, হারানোরও। রুদ্রপ্রসাদের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শিখরের দিকে এগিয়েছিল বাঙালি অভিযাত্রীদের আরেকটা দল। পথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

প্রচণ্ড হাওয়ার মধ্যে আমরা যখন শিখরের জন্য বেরোই, অনেক ডাকাডাকি করেও গৌতমদাদের কোনও সাড়া পাইনি। পরদিন শিখর জয় করে ফেরার পথে সাউথ সামিটে সুভাষ ও তাঁর শেরপার সঙ্গে দেখা হয়। তার ঠিক দেড়ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ‍১১টায় গৌতমদা ও সুনীতাদির সঙ্গে দেখা হয় ব্যালকনির কাছে। কোনওভাবে পরেশ দাকে আমরা দেখতে পাইনি।

এরপর দুদিন কোনও খোঁজ নেই। ২৩শে মে বেসক্যাম্পে ফিরে গৌতম ঘোষের টিমের শেরপা বীর বাহাদুর গুরুংয়ের সঙ্গে দেখা করেন রুদ্রপ্রসাদ। গুরুং জানান, ডেথ জোনে অভিশপ্ত তিনটি দিনের ইতিবৃত্ত।

ওঁরা ২০ মে রাত ৯টায় শিখরের উদ্দেশে রওনা হন। সুভাষ বেলা ১১টায় শিখরে পৌছন। সুনীতাদির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি। গৌতমদা ও সুনীতাদিও শিখরে চড়েন। অক্সিজেন প্রায় শেষ। তখন বেশ দেরি হয়ে গেছে। শেরপাদের অক্সিজেনও শেষ। তখন যে যার মতো করে ফেরার চেষ্টা করেন। ২২ মে ভোরে সুনীতাদি ও সুভাষ কোনওমতে সামিট ক্যাম্পে ফেরেন। শেরপারা ব্যালকনির নীচে গৌতমদা ও পরেশদাকে দেখেননি। ২২ মে সুনীতাদিকে ক্যাম্প থ্রিতে নামানো সম্ভব হলেও জেনিভা স্পারে ২২ মে রাত ১২ টায় সুভাষ মারা যান।

কী হয়েছে গৌতম ঘোষ ও পরেশ নাথের? রুদ্রপ্রসাদ খুব বেশি আশাবাদী নন। ওঁদের শেরপারা নিশ্চিত গৌতমদা ও পরেশদার ব্যালকনির আসেপাশে কোথাও মৃত পড়ে রয়েছেন। কারণ ওই ডেথ জোনে অক্সিজেন ছাড়া ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কোনও মানুষ এত ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারেন না। বিজয়ের উচ্ছ্বাসকে তেঁতো করে দিয়েছে স্বজনহারার বিষাদ। তবু দুঃখেও আছে সান্ত্বনা।

এত দুঃখজনক ঘটনার মাঝে সুনীতাদির লড়াই করে বেঁচে ফেরাটা সত্যিই আনন্দের। আর যে মানুষটা গত ৩৩ বছর হিমালয়কে আপন করে নিয়েছিলেন, বার বার ছুটে এসেছিলেন এভারেস্টের টানে, সেই মহান অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী গৌতম দা, এভারেস্টের মাথা ছুঁয়ে এসেছিলেন। এটাই একমাত্র সান্ত্বনা। নিজের থেকেও বেশি যিনি ভালো বেসেছিলেন হিমালয়কে, সর্বোচ্চ শিখরে পা রাখতে পেরেছেন তিনি। প্রিয় গৌতমদাকে নিয়ে রুদ্রপ্রসাদের এটাই সান্ত্বনা।

.