'আমার চিকিৎসায় নিজের রক্তও বেচে, তাতেই...' বাবার মৃত্যুতে আক্ষেপ শয্যাশায়ী মেয়ের

অনুষ্কা বলে,  'প্রশাসনের তরফে আমাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু গত একবছরে কোনও সাহায্য আসেনি। বাবা অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিচ্ছু লাভ হয়নি।

Edited By: সুদেষ্ণা পাল | Updated By: May 4, 2023, 06:28 PM IST
'আমার চিকিৎসায় নিজের রক্তও বেচে, তাতেই...' বাবার মৃত্যুতে আক্ষেপ শয্যাশায়ী মেয়ের

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিছানায় পড়ে মেয়ে। আজ ৫ বছর ধরে। মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড়ের জন্য নিজের রক্ত পর্যন্ত বেচে দিয়েছিলেন নিরুপায় বাবা। কিন্তু ভাগ্য মাঝে মাঝে বড়-ই নিষ্ঠুর হয়। রক্ত বেচার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা নিজেও। আর তাতে দুর্দশা আরও বাড়ে। মেয়ের চিকিৎসার জন্য আর টাকা জোগাড় করতে পারছিলেন না তিনি। কী হবে মেয়ের চিকিৎসার? এই দুশ্চিন্তা, ভাবনা থেকেই হতাশা ঘিরে ধরে তাঁকে। শেষমেশ আত্মঘাতী হন বাবা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের সাতনায়। 

৫ বছর আগে একটি দুর্ঘটনার পর থেকেই বিছানায় শয্যাশায়ী মেয়ে অনুষ্কা। দুর্ঘটনায় তার মেরুদণ্ডে চোট লেগেছিল। সেই থেকেই হাঁটার ক্ষমতা হারিয়েছে সে। হাঁটতে পারে না আর। কিন্তু মেয়েকে আবার সুস্থ করে তুলতে চেষ্টার কোনও কসুর ছিল না বাবার। মেয়ে অনুষ্কা জানায়, 'আমার চিকিৎসার জন্য রক্ত বেচেছিল বাবা। যাতে চিকিৎসার খরচ সামলে আমাদের প্রতিদিনের দরকার মেটাতে পারে। কিন্তু বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। টাকা জোগাড় করতে না পেরে মানসিক অবসাদে চলে যায়। আর তারপরই আত্মঘাতী হয়।' পরিবার জানিয়েছে, খুবই অর্থকষ্টের মধ্যে দিন কাটছিল তাঁদের। মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে নিদারুণ মনোকষ্টে ভুগছিলেন প্রমোদ নামে ওই ব্যক্তি। 

মেয়ে অনুষ্কা আরও জানিয়েছে, তার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে আর পরিবার যাতে কোনও অর্থকষ্টের মধ্যে না পড়ে, সেইজন্য বাবা বাড়ি বেচে দিয়েছিল। নিজের দোকান বেচে দিয়েছিল। এমনকি মাঝে মাঝে রক্তও বিক্রি করত। রক্ত বিক্রি করে গ্যাস সিলিন্ডার ও খাবার কিনেছিল বাবা। কিন্তু এভাবে চলতে চলতেই একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শেষমেশ মঙ্গলবার ভোর ৪টের সময় দোকান যাওয়ার নামে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন প্রমোদ গুপ্তা। তারপরই নিখোঁজ হয়ে যান। বেশ কয়েক ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। 

এই ঘটনায় শেষে পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের ভিত্তিতে তল্লাশিতে নামে পুলিস। শেষে রেললাইনের উপর থেকে উদ্ধার হয় প্রমোদ গুপ্তার দেহ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ বছরের অনুষ্কা পড়াশোনায় ভালো। এমনকি বোর্ডের পরীক্ষাতেও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সে। সেইজন্য পদকও পেয়েছে সে। যদিও পরীক্ষায় নিজে লিখতে পারেনি অনুষ্কা। শয্যাশায়ী অবস্থায় রাইটারের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দেয় সে। অনুষ্কার অভিযোগ, এত দুর্দশার মধ্যেও প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি। পরিবারের তরফে কোনও আত্মীয়ও সাহায্য করেনি। 

সে বলে, 'প্রশাসনের তরফে আমাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু গত একবছরে কোনও সাহায্য আসেনি। বাবা অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিচ্ছু লাভ হয়নি। গত একবছরে প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি।' দুর্দশায় পড়েই নিজের রক্ত বেচতে শুরু করেন বাবা। বেচে দেন ঘরবাড়ি-দোকানও। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতনার ডেপুটি পুলিস কমিশনার। 

আরও পড়ুন, Anurag Maloo, Mount Annapurna: এখনও বেঁচে আছেন! বিপদসংকুল অন্নপূর্ণায় ৩ দিন পর বরফে জীবিত উদ্ধার ভারতের অনুরাগ মালু

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.