কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা হিলসের দ্বারে

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন সম্বন্ধে অনেক ভাষ্যকারই বলে এসেছেন, প্রাপ্য মর্যাদা পাননি তিনি। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলে সেই আখ্যা থেকে মুক্তি পাবেন তিনি। স্বাধীনতার ৬৫ বছর পর দেশের প্রথম নাগরিকের পদে আসীন হবেন কোনও বঙ্গসন্তান।

Updated By: Jun 15, 2012, 09:43 PM IST

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন সম্বন্ধে অনেক ভাষ্যকারই বলে এসেছেন, প্রাপ্য মর্যাদা পাননি তিনি। রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলে সেই আখ্যা থেকে মুক্তি পাবেন তিনি। স্বাধীনতার ৬৫ বছর পর দেশের প্রথম নাগরিকের পদে আসীন হবেন কোনও বঙ্গসন্তান। পাঁচ দশকেরও বেশি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। বীরভূমের কীর্ণাহারে মুখুজ্যে পরিবার কংগ্রেস রাজনীতিতে স্বাধীনতার আগে থেকেই বিশেষ সক্রিয় ছিল। বাবা কামদাকিঙ্কর মুখার্জি ছিলেন অধুনালুপ্ত বিধান পরিষদের সদস্য এবং কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি। বাবার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করেই রাজনীতিতে পদার্পণ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করলেও সাংবাদিকতাও করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। 
রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিতে তাঁর কেরিয়ার শুরু। সালটা ১৯৬৯। তারপরেও চারবার রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। মন্ত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্বভার পান ১৯৭৩ সালে। ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় শিল্পমন্ত্রকের উপমন্ত্রী ছিলেন প্রণববাবু। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত পালন করেছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব।
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে তখনই তাঁর সমর্থকরা আশা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস রাজনীতিতে নেহরু-গান্ধী পরিবারের একাধিপত্যের কারণেই মায়ের মৃত্যুর রাতেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন মন্ত্রী হিসাবে কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা রাজীব গান্ধী। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে মতপার্থক্যের জেরে কংগ্রেস ছেড়ে পৃথক দল গঠন করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস অবশ্য বিশেষ সাফল্য পায়নি। তাঁর পৃথক রাজনৈতিক সত্ত্বাও বেশিদিন বজায় ছিল না।
রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মতপার্থক্য মিটিয়ে কংগ্রেসে ফেরেন ১৯৮৯ সালে। পি ভি নরসিমা রাওয়ের সরকারের আমলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন প্রণববাবু। পেয়েছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সনের দায়িত্বভার। লোকসভায় প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথম নির্বাচিত হন ২০০৪ সালে, মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর থেকে। এখনও তিনি সেখানকারই সাংসদ।

বিভিন্ন সময়ে প্রতিরক্ষা, অর্থ, বিদেশ,রাজস্ব, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের মতো বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব সামলেছেন প্রণববাবু। ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে নরসিংহ রাও হয়ে মনমোহন সিংহ - সর্বদাই থিনি ছিলেন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু দ্বিতীয় থেকে প্রথম আর তাঁর হয়ে ওঠা হয়নি।
রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাটিত হলে তিনিই হবেন দেশের প্রথম নাগরিক।
সরকারের মতো দলেও দীর্ঘদিন ধরে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিশেষ করে গত দুই দশক ধরে জাতীয় স্তরে জোট রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তাঁর ভূমিকা। তেলেঙ্গানা থেকে পঞ্জাব সমস্যা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্তি থেকে সারা দেশে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর চালু করা - নানা ক্ষেত্রে তাঁর উপরই চূড়ান্ত ভরসা করেছে কংগ্রেস দল ও সরকার।
কিছুদিন ধরেই ঘনিষ্ঠ মহলে প্রণববাবু বলে আসছিলেন প্রতিদিনের কাজের চাপের থেকে বয়সজনিত কারণে তিনি একটু নিষ্কৃতি চান। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পাননি তিনি। দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের জন্য তাঁকে নির্বাচন করে কংগ্রেস নেতৃত্ব হয়তো তাঁর সমর্থকদের সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দিল।

.