বারবার লক্ষ্মণ রেখা কেটেও করোনার হরণ অব্যাহত, পঞ্চম দফায় কী হবে, উত্তর খুঁজছে দেশ

এই দফায় লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা সংক্রমণ রোখার থেকে বেশি জোর দেওয়া হয় অর্থনীতি চাঙ্গা করার উপর

Reported By: সোমনাথ মিত্র | Updated By: May 31, 2020, 10:17 PM IST
বারবার লক্ষ্মণ রেখা কেটেও করোনার হরণ অব্যাহত, পঞ্চম দফায় কী হবে, উত্তর খুঁজছে দেশ
ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: আজই শেষ হচ্ছে চতুর্থ দফার লকডাউন। দু’সপ্তাহের এই লকডাউনে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। কনটেনমেন্ট জ়োনে কিছু বিধি নিষেধ ছাড়া প্রায় অনেক ক্ষেত্রকেই শিথিল করা হচ্ছে। এর ফলে আশঙ্কাও বাড়ছে। এখন লাখ টাকার প্রশ্ন, করোনা মোকাবিলার শেষ কোথায়? চলতি দফায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা দরুন বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ প্রবণতা। পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে নেওয়া যাক, দেশ কোথায় ছিল, এখন কোথায় দাঁড়ায়ে!

লকডাউন ১.০২৫ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল (২১ দিন)-

২৪ মার্চ রাত ৮টা। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তা, রাত ১২টা (২৫ মার্চ) থেকে দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। এর আগে এক দিনের জন্য জনতা কার্ফু মানুষ পালন করেছে। কিন্তু এ দিন মোদী জানান, জনতা কার্ফুর থেকে আরও শক্তিশালী এই কার্ফু। দেশকে করোনামুক্ত করতে এ ছাড়া আর কোনও পথ নেই বলে স্বীকার করে নেন তিনি।

কী পদক্ষেপ করা হলো:

** জারি করা হয় জাতীয় বিপর্যয় আইন। এই আইনে লকডাউন না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে ৫১ থেকে ৬০ ধারায় ও ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

** জরুরি পরিষেবা ছাড়া দেশের বাকি সব ক্ষেত্রে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা দেশ। আকাশ, জল, স্থল- সব পথ কার্যত শুনাশান।

প্রথম দফার লকডাউনের শেষে কী দাঁড়াল:

২৫ মার্চ লকডাউন শুরু হয় ৬২৪ করোনা সংক্রমণ নিয়ে। ২১ দিনের মাথায় তা বেড়ে ১৮ গুণ দাঁড়ায়। অর্থাত্ ১৪ এপ্রিলে করোনা সংক্রমণ গিয়ে দাঁড়ায় ১১,৪১২ জন। মৃত্যু ৩৫৩ জন।  বৃদ্ধি পায় সুস্থের হারও। সাড়ে দশ থেকে ১২ শতাংশে দাঁড়ায়। মৃত্যুর হার দাঁড়ায় ৩.২ শতাংশ।

লকডাউন ১.০ (২১ দিন)
আক্রান্ত মৃত
২৫ মার্চ- ৬২৪ ২৫ মার্চ- ১২
১৪ এপ্রিল- ১১,৪১২ ১৪ এপ্রিল- ৩৫৩ 

 

লকডাউন ২.০১৫ এপ্রিল থেকে ৩ মে (১৯ দিন)

দ্বিতীয় দফার লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সংক্রমণ রোখাই একমাত্র পথ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন সাতটি সংকল্প ঘোষণা করেন তিনি। আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড, নার্স-চিকিত্সকদের প্রতি সহানুভূতি-সহ একাধিক পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

কী পদক্ষেপ করা হলো:

** এই বারই প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি ক্ষেত্রকে শিথিল করার ইঙ্গিত দেন। তিনি জানান, যে সব জেলা বা রাজ্য লকডাউনের অগ্নিপরীক্ষায় সফল হবে, হটস্পট করতে দেবে না, সে সব জেলা বা রাজ্যগুলিকে ২০ এপ্রিল পর বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। আর ছাড় দেওয়ার পর যদি করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তাহলে ছাড়ের অনুমতি প্রত্যাহার করা হবে।

দ্বিতীয় দফার লকডাউনের শেষে কী দাড়ালো?

সংক্রমণ রোখা তো দূর, সময়ের সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধি পেতে লাগল। ১৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত ছিল ১২ হাজার, যা ১৯ দিন পর দাঁড়ায় ৪২ হাজারের মতো।  

পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। লকডাউন বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষোভ-আন্দোলন। মুম্বইয়ে বান্দ্রা স্টেশনে ট্রেনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান কয়েক হাজার শ্রমিক। শিকেয় ওঠে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউনের বিধিনিষেধ।

লকডাউন ২.০ (১৯ দিন)
আক্রান্ত মৃত
১৫ এপ্রিল- ১২৩৮২ ১৫ এপ্রিল- ৩৯২
৩ মে- ৪২,৪৯৬ ৩ মে- ১৩০৬  

 

লকডাউন ৩.০৪ মে থেকে ১৭ মে- (১৪ দিন)

তৃতীয় দফার লকডাউনে কার্যত পথে নামে অর্ধেক দেশ। এই দফায় বেশ কিছু শিল্পাঞ্চলকে লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল, তৃতীয় দফার লকডাউনের উপর নির্ভর করেছে ভারতের ভবিষ্যত।

কী পদক্ষেপ করা হলো:

** বেহাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ছাড় দেওয়া হয় বেশ কিছু ক্ষেত্রকে। বেসরকারি অফিস, ব্যবসা বাণিজ্যে আংশিক ছাড় দেওয়া হয়।

** রেড, অরেঞ্জ, গ্রিন জ়োনে ভাগ করে করোনার পরিস্থিতি নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

** এই দফা থেকে অর্থনীতি উন্নয়ন এবং আতঙ্ক দুটো পাশাপাশি নিয়ে দেশ এগোতে থাকে।

তৃতীয় দফার শেষে কী দাঁড়ালো:

৪ মে করোনা সংক্রমণ ছিল ৪৬,৪১৪। ১৪ দিন পর বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫, ৬৫৫। মাত্র দু সপ্তাহে দ্বিগুণ হয় করোনা আক্রান্ত।

চতুর্থ দফায় লকডাউন বৃদ্ধির আশঙ্কায় ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা শুরু করে পরিযায়ী শ্রমিকরা। পায়ে হেঁটে, সাইকেলে চড়ে কয়েক হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেন আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা। ট্রেনে কাটা পড়ে, ট্রাকের ধাক্কায় কখনও বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় বহু পরিযায়ী শ্রমিকের।

লকডাউন ৩.০ (১৪ দিন)
আক্রান্ত মৃত
৪ মে- ৪৬৪১৪ ৪ মে- ১৩৮৯
১৭ মে- ৯৫৬৫৫ ১৭ মে- ২৮৭২ 

 

লকডাউন ৪.০১৮ মে থেকে ৩১ মে- (১৪ দিন)

এই দফায় লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা সংক্রমণ রোখার থেকে বেশি জোর দেওয়া হয় অর্থনীতি চাঙ্গা করার উপর। ক্ষুদ্র-ছোটো-মাঝারি শিল্পে ঋণ দিয়ে ‘আত্মনির্ভরশীল ভারত’ হওয়ার স্বপ্ন দেখান প্রধানমন্ত্রী। তবে, পরিযায়ী শ্রমিকরা সেভাবে লাভবান হয়নি বলে জানান বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

কী পদক্ষেপ করা হলো:

** একশো দিনের কাজের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ।

** ক্ষুদ্র-ছোটো-মাঝারি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার গ্যারেন্টর থাকবে বলে ঘোষণা।

** আন্তঃরাজ্য পরিবহণে অনুমতি। সামাজির দূরত্ব মেনে খোলা থাকবে দোকানপাট।

চতুর্থ দফার শেষে কী দাঁড়াল?

এই দফাতেও করোনা সংক্রমণ দ্বিগুণের কাছাকাছি। ১৮ মে ছিল এক লক্ষ। মাত্র ১৪ দিনে আরও ৮০ হাজার সংক্রমণের বৃদ্ধি পেয়েছে।

লকডাউন ৪.০ (১৪ দিন)
আক্রান্ত মৃত
১৮ মে- ১০০৭৩৪ ১৮ মে- ৩০২৯
৩০ মে- ১৮১৯৩৮ ৩০ মে- ৪৯৭২  

বিভিন্ন রাজ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ে কাতারে কাতারে ঢুকছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। এর ফলে গোষ্ঠী সংক্রমণ আরও প্রবল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরপর যদি মহামারী আকার ধারণ করে, দেশে বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় কী ভাবে তা রোখা যাবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বারবার লক্ষ্মণরেখা কাটার পরও দেশবাসীকে বাঁচানো গেল? তার উত্তর হয়তো জানা যাবে লকডাউন ৫.০-তে!

.