বাজেট এবার চ্যালেঞ্জ! মুষড়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কী করে, দিশা খুঁজবে সরকার
এবারের বাজেটে যা যা প্রচেষ্টা হবে তা সবই বিফলে চলে যেতে পারে যদি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে মন্দা ভাব চলে আসে।
![](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/styles/zm_98x58/public/2018/10/04/145395.jpg?itok=tx2ki0I5)
![বাজেট এবার চ্যালেঞ্জ! মুষড়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কী করে, দিশা খুঁজবে সরকার বাজেট এবার চ্যালেঞ্জ! মুষড়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কী করে, দিশা খুঁজবে সরকার](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2020/01/31/231962-bhojo.jpg)
সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী
(অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ)
বাজেট ব্যাপারটা আগের মতো মজাদার নেই। ছোটবেলায় যখন বুঝতে পারতাম না, তখন বাজেটের পরের দিন খবরের কাগজে দেখতাম সাবানের দাম বেড়েছে, সিগারেটের দাম বেড়েছে বা অন্য কিছু কমেছে। তাতেই সংবাদপত্রে ভর্তি দু-চার পাতা। সেটা এখন আর হওয়ার নেই। কেননা এই দাম কমাবার একটা Gst Council-এর হাতে। বাজেটে তার খুব একটা হিসাব পাওয়া যাবে না। সুতরাং এখনকার বাজেট অর্থনীতির দিশা দেখাবার জন্য তৈরি হয়। এছাড়াও সরকার কীভাবে উন্নয়নমূলক কাজে টাকা ব্যবহার করতে চায় তার একটা আন্দাজ। বাজেটে সব শিল্পই চায় আরও কিছু ছাড়। ভাবটা এমন যেন ছাড় পেলেই গাড়ি বিক্রি বেড়ে যাবে বা লোকে ইনকাম ট্যাক্স ছাড় পেয়ে খরচ করতে শুরু করবে। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর এই বাজেট নিয়ে হইচই হয়। এবারও তাই। এবারে আরও বেশি এই জন্য যে অর্থনীতি মন্দা বলে বোঝার চেষ্টা হবে বাজেটে কী কী আসল যাতে অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত যে এবারের বাজেটে যা যা প্রচেষ্টা হবে তা সবই বিফলে চলে যেতে পারে যদি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে মন্দা ভাব চলে আসে।
এতদিন ধরে আমেরিকার সঙ্গে চায়নার বাণিজ্যিক যুদ্ধে আঠারো মাস কেটে গিয়েছে। তাতে চায়নার মতো অর্থনীতিতে মন্দা ভাব ছড়িয়ে গিয়েছে। সবে যখন সেটা ঠিকঠাক হওয়ার একটা প্রচেষ্টা শুরু হল, এসে গেল করোনা ভাইরাস। শহরের পর শহর চিনে খালি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে আর যাই হোক, চিনের অর্থনীতি সঠিক হবে না। হলেও সময় লাগবে। এই দিকটা আমাদের বাজেটে কী করে হিসাব আনবে আমার জানা নেই। আনার কোনও ফর্মুলাও দেখছি না। যা হবে বাজেটে তা আভ্যন্তরীণ ভারতীয় অর্থনীতির ব্যাপার। সেখানে আবার সরকারের ঘরে টাকা নেই। তার কারণ কর আদায় কম। আবার করের বোঝা বাড়ানো যাবে না। সুতরাং টাকা জোগাড় করতে গেলে চেষ্টা করতে হবে বিলগ্নীকরণ করে খরচ মেটানোর প্রকল্প। বিলগ্নীকরণ করতে গেলেই চারিদিকে চিত্কার শুরু হয়ে যাবে। আবার বিলগ্নীকরণ করার জন্য যে দাম ধার্য করা হবে সেই নিয়ে দর কষাকষি। তাতে বিলগ্নীকরণ হয়ে ওঠে না। আমরা সেই দিকটা এবার মন দিয়ে দেখব।
ইনস্যুরেন্স ক্ষেত্রে বিদেশি মালিকানা ৪৯ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশ করার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই দিকটা ভাল যদি হয়। নিন্দুকেরা বলবে বিদেশি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এদেশে আসার কি প্রয়োজন আছে। তার অনেক ইতিবাচক উত্তর আছে। সেটা এখানে আলোচনা করলে অনেকটা সময় নষ্ট হবে। হলে ভাল এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।
শেয়ার বাজারে যারা শেয়ারের মালিকানার ভিত্তিতে ডিভিডেন্ড পায় তাতে একটা খটমট কর-এর গল্প আছে। সেটা ঠিক নয়। তার কারণ কোম্পানির হাতে এই ডিভিডেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন ট্যাক্স চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ ডাবল taxation. এতে কোম্পানির সুবিধা হয়। সেট ঠিক করার একটা পরিকল্পনা হয়তো আসবে।
বারো মাসে বেশি কোনও লগ্নি মুনাফায় বেচলে একটি ট্যাক্স দিতে হয় যার নাম Long term capital gain tax. চোদ্দ বছর পরে এর ওপর কর চাপানো হয়েছে। এতে বিনিয়োগে একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো এই দিকটা সরকার দেখবে যাতে আগামীদিনে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
ব্যক্তিগত আয়কর ছাড় পাওয়া যাবে এরকম একটা আশা সবাই করছে। যে বছর কর আদায় কম সে বছর এই রকম একটা আশা করা অহেতুক। প্রয়োজনও নেই আমার মতে। সরকারের বক্তব্য যে আয়কর কমলে যেসব লোকেরা আয়কর দেয় তাদের কিছুটা টাকা বাঁচবে এবং তাতে সেই বাড়তি টাকায় তারা জিনিসপত্র কিনে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। আমার সেটা মনে হয় না। আয়কর যদি বাঁচে সেটা সঞ্চয়ে চলে যাবে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো একটু-আধটু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হতে পারে। তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় না।
অটো শিল্পে মন্দা ভাব কাটাতে পুরনো গাড়ি বাতিল করার একটা পলিসি আসার সম্ভাবনা আছে। এটা যদি হয় বলতে পারি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমার মতে এই পলিসি এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটা দিক। এতে সরকারের খরচ বাড়ছে না। কিন্তু পুরনো গাড়ি বাতিল হওয়ার পরে নতুন গাড়ি কেনা হলে কর আদায় সম্ভব হবে। বাতিল গাড়ির জন্য scrapyard লাগবে। অর্থাত বড়সড় রকমের কাবাডিওয়ালা। সেই অসুবিধা কি আছে। প্রাইভেট এজেন্সিকে দিয়ে দিলেই হল। বাড়ি কেনার জন্য যে আমরা ঋণ নিই তার সুদে ছাড়-এর রকমটা হয়তো বৃদ্ধি পাবে। এতে বাড়ি কেনার আগ্রহ বাড়বে বা বাড়ি কিনতে সুবিধা হবে। যাই হোক যদি হয় তা হলে মন্দ হবে না সেটা।
সরকারের খরচ কিষাণ খাতে অনেকটা লাগবে এবার। তারই জন্য প্রকল্পের পর প্রকল্প আসে। আগেও এসেছে। এবারও আসবে। সোজা কথা কিষাণের হাতে টাকা জোগাড় করে দেওয়ার স্কিম। এতে সুবিধা হচ্ছে তারা সেই টাকা পেয়ে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারবে। এবং তারই জন্য বিভিন্ন পণ্য কিনবে। এটা অন্য কথা যে হাতে টাকা পেয়ে তারা হয়তো অন্য জায়গায় খরচ করবে যা দেশের জন্য এবং নিজের জন্য মোটেই ভাল নয়। না খেটে টাকা পেলে মোটামুটি এরকমই হয়। কিন্তু গরীব ভারতে এই কাজটা না করতে পারলে রাজনীতি সঠিক রাস্তা দেখতে পায় না।
মোটামুটি ব্যাপারটা এরকম। বাজেট আসবে। বাজেট শুনবে। তার পর অর্থনীতি তার চক্র অনুসারে চলবে। মাঝখানে বুস্টার দিলে চক্রের পথ চট করে পরিবর্তন সে না। তার জন্য লাগে সময়। সেই সময় দিতে হবে। বাজেট হয়তো সেই পরিবর্তন আনতে কিছুটা সাহায্য করবে।