'ব্র্যান্ড মোদী'র পালিশ তুলতে কেশুভাইয়ের পাশে 'হীরক রাজা'রা
বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়ে নরেন্দ্র মোদীর দিকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল। আর এই লড়াইয়ে তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে রাজ্যের প্রভাবশালী ডায়মন্ড মার্চেন্ট'স লবি। তা নিয়েই প্রতিবেদন লিখেছেন সায়ন ত্রিপাঠী।
বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়ে নরেন্দ্র মোদীর দিকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল। আর এই লড়াইয়ে তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে রাজ্যের প্রভাবশালী ডায়মন্ড মার্চেন্ট'স লবি। তা নিয়েই প্রতিবেদন লিখেছেন সায়ন ত্রিপাঠী।
গত বারের বিধানসভা ভোটে অন্তিম প্রহর পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধ্বজা তুলে ধরেও শেষ পর্যন্ত বিজেপি হাইকম্যান্ডের চাপের মুখে রণে ভঙ্গ দিয়েছিলেন তিনি। ৫ বছরের দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে, রাজনৈতিক মহলের সামনে রহস্যের পর্দা তুলে এবার কিন্তু স্বমহিমায় অবতীর্ণ হয়েছেন অশীতিপর কেশুভাই প্যাটেল। আর গুজরাটে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ডাক দিয়ে দেড় দশকের একপেশে রাজনৈতিক সমীকরণে এনে দিয়েছেন এক নতুন মাত্রা। তাঁর এই বিদ্রোহ গেরুয়া শিবিরের ক্ষমতার অলিন্দের হাওয়াটা এলোমেলো করে দিয়েছেন হঠাত্ই।
চলতি মাসের গোড়াতেই বিজেপি'র সঙ্গে তিন দশকের সম্পর্কে ইতি টেনে 'গুজরাট পরিবর্তন পার্টি' গড়েছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই । পাশে পেয়েছেন, আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরেশভাই মেহতা, রাজ্য বিজেপি'র প্রাক্তন সভাপতি কাশীরাম রানার মতো হেভিওয়েট নেতাদের। মোদীর সঙ্গে সংঙ্ঘাতের জেরে বিজেপি ত্যাগী প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোর্ধন ঝদাফিয়াও নিজের গড়া 'মহাগুজরাট জনতা পার্টি'র সাইনবোর্ড নিয়ে সামিল হয়েছেন কেশুভাইয়ের দলে।
নব্বইয়ের দশকে পতিদার(প্যাটেল) জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেশুভাইয়ের জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করেই সৌরাষ্ট্র সাংগঠনিক ভিত গড়েছিল বিজেপি। কৃষকদের মধ্যে মজবুত সংগঠন গড়ার পাশাপাশি হিরে ব্যবসার দৌলতে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত সৌরাষ্ট্র থেকে দলকে অকাতরে অর্থ যুগিয়েছিলেন কেশুভাই। এবার 'ঘাঞ্চি তোলি' নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদীকে বধ করার জন্য সৌরাষ্ট্রের সেই 'হীরক রাজা'দের পাশে পেয়েছেন 'প্যাটেল হৃদয়সম্রাট'! আর তাঁদের সাহায্যে ২০০১ সালে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে তাঁকে সরানোর প্রতিশোধ তুলতে বদ্ধপরিকর কেশুভাই।
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের খবর, 'ব্যান্ড মোদী'র উজ্জ্বল পালিশটাকে বিবর্ণ করতে কেশুভাইয়ের দলের হাতে ১৮০ কোটি টাকা তুলে দিচ্ছে এই হিরে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিধানসভা ভোটে গুজরাটের ১৮২টি কে এই অর্থের বলে বলীয়ান হয়েই বিজেপি'র সঙ্গে টক্কর দেবেন গুজরাট পরিবর্তন পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী বিধানসভা ভোটে গুজরাটের একজন প্রার্থী মাত্র ১৬ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেন। তাই মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সরাসরি দলের অর্থের উত্স কিংবা ভোটের খরচ সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি দলের অন্যতম নেতা গোর্ধন ঝদাফিয়া।
স্বভাবতই টিম কেশুভাইয়ের এই তত্পরতায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতার যারপরনাই খুশি। ১৯৮৯ সাল থেকে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর রাজ্যে কোনও ভোটে জিততে পারেনি কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে কেশুভাইয়ের প্যাটেন জনভিত্তি আর ভোট কাটাকাটির অঙ্কে ভর করে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের স্বপপ্ন দেখছেন শঙ্কর সিং বাঘেলা-অর্জুন মোডভাদিয়া-ভরত সোলাঙ্কিরা। যদিও বিজেপি শিবিরের দাবি, জাতপাতের অঙ্ক আদৌ এতটা সরলরেখায় চলবে না। তুলনায় উচ্চবর্ণের কিন্তু সংখ্যায় লঘু লউভা প্যাটেলরা কেশুভাইয়ের পক্ষে ভোট দিলেও অপেক্ষাকৃত নিচু সামাজিক অবস্থানের সংখ্যাগুরু কড়ুয়া এবং আঞ্জানা পাতিদারদের আনুগত্য থাকবে নরেন্দ্র মোদীর দিকেই।