ঝাড়ুর ঘায়ে রাজধানীর বুকে সমর্থন হারা হাত, ৮ মাসের চারাগাছের কাছে অবনত ১২৮ বছরের মহীরুহ
লোকসভা ভোটের আগে ঝাড়ুর ঘায়ে রাজধানীতে ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেল কংগ্রেস। হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে গেরুয়া ঝড় থমকে গেল দিল্লি এসে। কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সম্ভব হল এই জয়? আম-আদমি পার্টির সাফল্যের রসায়নের হদিশ পেতে এখন ব্যস্ত তাবড় রাজনীতিবিদরা। অমিতাভ বচ্চনের অভিনীত এই আজাদ চরিত্রটির সঙ্গে আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের যেন আর কোমও ভেদ নেই। ওই ছবিতেও আম আদমির সামান্য প্রাপ্যটুকুর জন্য লড়েছিল আজাদ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছিল আজাদ। লেই লড়াই তারসঙ্গী হয়েছিল গোটা শহর। রবিবারের দিল্লিও যেন দেখল লড়াইয়ের পর নগরজয়ের ছবি।
লোকসভা ভোটের আগে ঝাড়ুর ঘায়ে রাজধানীতে ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেল কংগ্রেস। হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে গেরুয়া ঝড় থমকে গেল দিল্লি এসে। কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সম্ভব হল এই জয়? আম-আদমি পার্টির সাফল্যের রসায়নের হদিশ পেতে এখন ব্যস্ত তাবড় রাজনীতিবিদরা। অমিতাভ বচ্চনের অভিনীত এই আজাদ চরিত্রটির সঙ্গে আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের যেন আর কোমও ভেদ নেই। ওই ছবিতেও আম আদমির সামান্য প্রাপ্যটুকুর জন্য লড়েছিল আজাদ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়েছিল আজাদ। লেই লড়াই তারসঙ্গী হয়েছিল গোটা শহর। রবিবারের দিল্লিও যেন দেখল লড়াইয়ের পর নগরজয়ের ছবি।
১২৮ বছরের একটা দল। যার শিকড় ছড়িয়ে দেশের আনাচে-কানাচে। সেই কিনা গো-হারান হেরে গেল তার কাছে, যার বয়স মাত্র এক ! কী করে সম্ভব হল এই জিনিস?
উত্তরটা খুঁজতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে আড়াই বছর আগে।
দুর্নীতি দমনে জন লোকপাল বিলের দাবিতে আন্না হাজারের অনশনে সে দিন পথে নেমেছিল দিল্লি। পরে আন্নার সঙ্গে মতান্তর হলেও আড়াই বছর আগের সেই আন্দোলনের আগুন থেকেই নিজের মশাল ধরিয়ে নিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০১২-র নভেম্বরে তৈরি করেন আম-আদমি পার্টি। পরের মাসেই নির্ভয়া-কাণ্ড। ফের রাজপথে মানুষের ঢল। বিক্ষোভে আর প্রতিবাদে। আভিজাত্যের মোড়কে ঢাকা দিল্লি খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে দুবার পথে নেমেছিল। আর এই মুখগুলিকেই নিজের ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করতে ১৬ আনা সফল অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিদ্যুত এবং জলের বিল কম করার মতো সাধারণ মানুষের নানা দাবি, অটো রিকশ চালকদের আন্দোলনে সামিল হয়ে কেজরিওয়াল গত এক বছরে আম-আদমি পার্টিকে নিয়ে গেছেন ল্যুটিয়েন দিল্লির বাইরেও।
১৯৯৩ ও ২০০৮-এ দিল্লিতে কংগ্রেস-বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছিল জনতা দল ও বহুজন সমাজ পার্টি। বড় দলগুলির ভোট কেটে ছোট দলগুলি তাদের সমস্যায় ফেলছে এমন উদাহরণ এ দেশের রাজনীতিতে বিরল নয়। তবে আগেকার কোনওরকম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই আম-আদমি পার্টি কিন্তু এগিয়ে গেছে অনেক দূর। শুধুমাত্র ভোট কাটা নয়, এক বছরেই তারা তৈরি করে ফেলেছে নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক। এর কারণ কী? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
কোনও সংকীর্ণ রাজনৈতিক দর্শন নেই আম-আদমি পার্টির। নির্দিষ্ট একটি বা দুটি গোষ্ঠী নয়, কেজরিওয়ালরা যেতে পেরেছেন সমাজের সব অংশের কাছে। আর তা করতে গিয়ে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন দিল্লির সব জায়গায়। আর আম-আদমিকে ক্ষমতালোভী বলে মনে করেননি দিল্লির ভোটাররা।
নির্বাচন কমিশনের কাছে ঝাড়ু, মোমবাতি ও জলের কল, এই তিনটির কোনও একটিকে নিজেদের প্রতীক হিসাবে চেয়েছিল আম-আদমি পার্টি। মোমবাতিতে ছিল শপথের বার্তা আর জলের কলে রোজকার সমস্যাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। আর ঝাড়ুতে রাজনৈতিক আবর্জনা সাফ করার ইঙ্গিত। শেষপর্যন্ত, ঝাড়ুর মোক্ষম ঘায়েই বাজিমাত করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা