উপনির্বাচনে বিজেপি'র হারে কপাল ফিরতে পারে ইয়েদুরাপ্পার

প্রাথমিকভাবে বি এস ইয়েদুরাপ্পার ক্ষোভ প্রশমনের পর মনে করা হয়ছিল, কর্নাটকে সঙ্কট কাটল বিজেপি`র। কিন্তু উদুপি-চিকমাগালুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পরাজয় ফের তৈরি করল অনিশ্চয়তার আবহ।

Updated By: Mar 21, 2012, 10:21 AM IST

প্রাথমিকভাবে বি এস ইয়েদুরাপ্পার ক্ষোভ প্রশমনের পর মনে করা হয়ছিল, কর্নাটকে সঙ্কট কাটল বিজেপি`র। কিন্তু উদুপি-চিকমাগালুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অপ্রত্যাশিত পরাজয় ফের তৈরি করল অনিশ্চয়তার আবহ।
গতকাল রাতেই ১১ অশোক রোডের নীতি নির্ধারকদের আশ্বাসে সুর নরম করেছিলেন বোকানাকারে সিদ্ধালিঙ্গাপ্পা ইয়েদ্দুরাপ্পা। আজ থেকে বিধানসভায় অংশ নেন তাঁর অনুগামী বিধায়করা। ইয়েদ্দুরাপ্পাকে ফের মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে বিধানসভা বয়কট শুরু করেছিলেন তাঁরা। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশ্বাসে শেষপর্যন্ত বরফ গলে। কিন্তু বেলা গড়াতেই এসে যায় মুখ্যমন্ত্রী ডি ভি সদানন্দ গৌড়ার ছেড়ে দেওয়া লোকসভা আসনে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের খবর। এই পরিস্থিতিতে ফের ইয়েদুরাপ্পার হাতে বেঙ্গালুরুর কুরসি ফেরত দেওয়ার জন্য পুরোদমে রাজনৈতিক তত্‍পরতা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরমহলে। ইয়েদুরাপ্পা শিবিরের দাবি, ফের তাঁদের নেতাকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে সম্মত হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দু-এক দিনের মধ্যেই ফের দিল্লি যেতে পারেন তিনি।
বেআইনি আকরিক লোহা খনন এবং জমি কেলেঙ্কারির ঘটনায় লোকায়ুক্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া মামলার জেরে গত বছরের জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। সে সময় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তাঁকে বছর খানেকের মধ্যেই কন্নড় মুলুকের `রাজ্যপাট` ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এর পর চলতি মাসের ৮ তারিখ কর্ণাটক হাইকোর্ট অবৈধ আকরিক লোহা খনন মামলা থেকে তাঁকে রেহাই দেওয়ার পর কুরসি ফেরত পেতে আরও তত্‍পর হয়ে ওঠেন শিকারিপুরার লিঙ্গায়েত নেতা। বিজেপি সভাপতির সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাত্‍ করে নিজের দাবি জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চাপে রাখতে ৪৮ ঘণ্টার `আল্টিমেটাম` দেন তিনি। সেই সঙ্গে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন বয়কট শুরু করে দেন ইয়েদ্দুরাপ্পা ঘনিষ্ঠ বিধায়করা। শুধু তাই নয়, হাইকম্যান্ডকে চাপে রাখতে নিজের প্রাক্তন ব্যক্তিগত সচিব বি জে পুত্তাস্বামীকে কর্ণাটক থেকে রাজ্যসভায় নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ও করিয়ে দেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে হয়ে ময়দানে নামতে হয় নিতিন গডকড়ি, অরুণ জেটলিদের। ইয়েদ্দুরাপ্পার সঙ্গে লাগাতার আলোচনায় শেষপর্যন্ত মঙ্গলবার গলে বরফ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি নিয়ে আলোচনার আশ্বাসে সুর নরম করেন বি এস-অনুগামী বিধায়করা। আলোচনায় স্থির হয়, বুধবার পেশ হবে রাজ্য বাজেট। তাতে অংশ নেবেন ওই বিধায়করা। কিন্তু, ইয়েদ্দুরাপ্পার পক্ষে থাকা সমর্থন যে এই মুহূর্তে অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা বেশ বুঝতে পারছেন নিতিন গড়করিরা। কারণ, ১২০ সদস্যের বিজেপি পরিষদীয় দলে অন্তত ৬০ জন বিধায়ক রয়েছেন ইয়েদুরাপ্পার পাশে। আগামী বছরেই বিধানসভা নির্বাচন কর্নাটকে। আজকের লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট, ক্যারিশমাহীন সদানন্দকে সামনে রেখে ভোটযুদ্ধে বাজিমাত করা সম্ভব হবে না। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব কোন পথে হাঁটে, এখন সেটাই দেখার।

কন্নড়-সঙ্কটের মধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যসভার ভোটে প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও যথেষ্ট বিপাকে টিম গডকড়ি। ঝাড়খণ্ডে নির্দল প্রার্থী, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অংশুমান মিশ্রকে সমর্থনের দলীয় সিদ্ধান্তকে মঙ্গলবার প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন হাজারিবাগের বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিনহা। বাজপেয়ী ক্যাবিনেটে অর্থ ও বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো প্রাক্তন এই আমলার সাফ কথা, এর ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই পরিস্থিতিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীর পরামর্শ মেনে এদিন পূর্বঘোষিত অবস্থান থেকে সরে এসে অনাবাসী ব্যবসায়ী অনুপ মিশ্রকে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের বার্তা পাঠিয়েছে টিম গডকড়ি।
সূত্রে খবর, বিজেপি সভাপতি তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ধর্মেন্দ্র প্রধান, ক্যাপ্টেন সিং সোলাঙ্কি, থাবরচাঁদ গেহলট, জগতপ্রকাশ নাড্ডা, ভূপেন্দ্র যাদব, ভূষণলাল ঝাংডে মায় আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নাগপুরের ব্যবসায়ী অজয় সঞ্চেতি আর ২০০৮ সালে লোকসভার আস্থা-ঘুষ কাণ্ডে জেল খাটা ফগ্গন সিং কুলাস্তেকে রাজ্যসভার ভোটে দাঁড় করালেও সংসদের উচ্চকক্ষে যোগ্যতার সঙ্গে দলের সহকারী নেতার ভূমিকা পালন করে আসা সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে টিকিট না-দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও যথেষ্ট জল ঘোলা হচ্ছে দলে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্কট নিরসনের জন্য অবিলম্বে দলের কোর কমিটির বৈঠক ডাকার জন্য গডকড়িকে পরামর্শ দিয়েছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।

.