বিপ্লবের কড়া পদক্ষেপে বন্ধের পথে গাঁজা চাষ, বিকল্প পেশার খোঁজে চাষিরা

গত কয়েক বছর ধরে ত্রিপুরায় গাঁজা চাষের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। তার মূল কারণ অসম ও বাংলাদেশের মধ্যে বড় করিডর।

Updated By: Aug 24, 2018, 05:03 PM IST
বিপ্লবের কড়া পদক্ষেপে বন্ধের পথে গাঁজা চাষ, বিকল্প পেশার খোঁজে চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্যকে গাঁজামুক্ত করার ডাক দিয়েছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।  বেআইনিভাবে গাঁজা চাষের জন্য উত্তর পূর্বে 'সুনাম' অর্জন করেছে ত্রিপুরা। এখানকার গাঁজা রফতানি হয় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও পড়শি বাংলাদেশে। নতুন সরকার কড়া পদক্ষেপ শুরু করতেই বন্ধের মুখে গাঁজা চাষ। রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন গাঁজা চাষের সঙ্গে যুক্ত চাষিরা। বিপ্লব দেব ক্ষমতায় আসার পর ২০,০০০ কিলোগ্রাম গাঁজা বাজেয়াপ্ত করেছে ত্রিপুরা পুলিস।

গত কয়েক বছর ধরে ত্রিপুরায় গাঁজা চাষের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। তার মূল কারণ অসম ও বাংলাদেশের মধ্যে বড় করিডর। মোতিনগর, কমলনগর, কালামচড়া, বক্সানগরে বহাল তবিয়তে চলে গাঁজা চাষ। কিছুদিন আগেও রাজধানী আগরতলা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরেই চোখে পড়ত সবুজ গাঁজা গাছ। ২০১৮ সালে ৯ মার্চ বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। শুরু হয় ধরপাকড়। উল্লেখ্য, ত্রিপুরায় নির্বাচনী ইস্তাহারে মাদক পাচার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। .

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। তাঁর কথায়, ''গত ২৫ বছর ধরে বছরে ১ লক্ষ কিলোগ্রাম গাঁজা উত্পাদিত হত ত্রিপুরায়। বিগত বাম সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিপ্লববাবু। তাঁর অভিযোগ, গাঁজা চাষে উত্সাহ দিতেন বামপন্থী নেতারা। ফলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজ্যের যুবকরা।  

গাঁজা চাষের সঙ্গে জড়িত প্রায় হাজার খানেক পরিবার। সরকার তত্পর হতেই অন্য পেশার খোঁজ শুরু করেছেন অনেকে।ইতিমধ্যেই কাজের খোঁজে চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে পাড়ি দিয়েছেন কমলনগর ও কমলচড়ার প্রায় ১৮জন যুবক। ভিনরাজ্যে রেস্তোরাঁ ও অফিসে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছেন তাঁরা। কিশোর বয়স থেকে গাঁজা চাষের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি জানালেন, ''মাদক পাচার বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ করেনি বাম সরকার। সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ গাঁজা চাষ আইনি বলেই ভেবে নিয়েছিলেন। পুলিস এসে ঘুষ নিয়ে চলে যেত। সরকার কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। মাঝমধ্যে ছোটখাট অভিযান চালাত পুলিস। তাতে বিশেষ লোকসান হত না। গাঁজা চাষে যুক্ত ছিল একটা প্রজন্ম। এখন আমরা কর্মহীন'' কমলচড়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানালেন, গাঁজা চাষ রুখতে এখন ঘনঘন অভিযান চালাচ্ছে রাজ্য পুলিস, আয়কর দফতরের আধিকারিক ও বিএসএফ। 

রবার অথবা পানের চাষের আড়ালে বেড়ে উঠত গাঁজা গাছ। দৈনিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করতেন কৃষকরা। বীজ, সার ও পাচারের দায়িত্ব ছিল অন্যদের উপরে। বিক্রির দায়িত্বে এক মধ্যস্থতাকারী। তারা সকলেই এখন জেলে। ফলে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানালেন স্থানীয়রা। তবে বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপে খুশি নন গ্রামবাসী। বক্সানগরের এক বিজেপি নেতা জানালেন, গ্রামে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। সিপিএমের সঙ্গে প্রশাসনের এখনও যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই বিজেপি নেতা। তাঁর দাবি, বিজেপি কর্মীদের বাড়ি থেকে গাঁজা উদ্ধার করছে পুলিস। অথচ মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিপিএম কর্মীরা।

তবে বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে ত্রিপুরা সরকার। আনারস, বাঁশ ও অন্যান্য শস্য চাষের জন্য কৃষকদের সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোনামুরার জেলাশাসক সাজু বাহিদের কথায়, ''বিকল্প ব্যবস্থা করছে সরকার। জুলাই মাস পর্যন্ত জেলা উদ্ধার করা হয়েছে ৬,৫৪৯ কেজি গাঁজা। অনেকেই দাবি করেছেন, গাঁজা চাষ আইনসঙ্গত করে দিক বিজেপি সরকার। তবে তাতে সায় নেই গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির মুখপাত্র মৃণালকান্তি দেব বলেন, ''গাঁজামুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তুলব। কোনওরকম সমঝোতা করা হবে না। গাঁজা চাষ আইনসঙ্গত করলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যুবকসমাজে''। একইসুরে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সালিম শাহের কথায়, ''গাঁজা চাষে অনুমতি দিলে তা অর্থনীতিতে সামান্য উপকার করবে। তবে তার চেয়েও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সমাজে। এটা কাম্য নয়''। 

আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই মোদীর ৬টি প্রকল্প টুকে দিলেন ইমরান!

.