এবার কুর্সিতে অখিলেশ
নিজের ভাই শিবপাল সিং যাদব, দীর্ঘ দিনের অনুগামী আজম খানের মতো প্রবীণদের একাংশ চেয়েছিলেন মায়াবতীর ৪ বারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের নজির ছোঁয়ার জন্য ফের একবার লখনউয়ের কুর্সিতে বসুন `নেতাজি`। আবার তুতো ভাই রামগোপাল যাদবের নেতৃত্বে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মত ছিল, রাজ্যের কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বহেনজি`র রেকর্ড ভাঙুন অখিলেশ। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রস্তাবেই সায় দিলেন সমাজবাদী সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব।
নিজের ভাই শিবপাল সিং যাদব, দীর্ঘ দিনের অনুগামী আজম খানের মতো প্রবীণদের একাংশ চেয়েছিলেন মায়াবতীর ৪ বারের মুখ্যমন্ত্রিত্বের নজির ছোঁয়ার জন্য ফের একবার লখনউয়ের কুর্সিতে বসুন 'নেতাজি'। আবার তুতো ভাই রামগোপাল যাদবের নেতৃত্বে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মত ছিল, রাজ্যের কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বহেনজি'র রেকর্ড ভাঙুন অখিলেশ। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রস্তাবেই সায় দিলেন সমাজবাদী সুপ্রিমো মুলায়ম সিং যাদব।
শুক্রবার রাতে দলের কোর কমিটির বৈঠকে উত্তরপ্রদেশের যাদব কুলপতি সাফ জানিয়ে দেন, এবার ছেলের হাতে রাজ্যপাট ছেড়ে দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে মনোনিবেশ করবেন তিনি। এর পর আজ সকাল ১১টায় সমাজবাদী পার্টির নবনির্বাচিত বিধায়ক দলের বৈঠকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হন অখিলেশ। আগামী ১৫ মার্চ রাজ্যপাল বানোয়ারিলাল যোশির কাছে রাজ্যের ৩২ তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করবেন তিনি। এদিনের বৈঠকে অখিলেশের নাম প্রস্তাব করেন রামপুরের সমাজবাদী বিধায়ক আজম খান। সম্ভবত নবগঠিত রাজ্য বিধানসভার স্পিকার পদের দায়িত্ব নেবেন গত বছর সমাজবাদী পার্টিতে ফেরা এই সংখ্যালঘু নেতা।
উত্তরপ্রদেশের সাত দফা বিধানসভা ভোটের প্রচারপর্বে অখিলেশ বার বার বলে এসেছেন, সমাজবাদী পার্টি ভোটে জিতলে মুখ্যমন্ত্রী হবেন তাঁর বাবা মুলায়ম। নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির বিপুল জয়ের পরও একই কথা শোনা গিয়েছিল কনৌজের তরুণ সাংসদের মুখে। তা হলে হঠাত্ কেন বদলানো হল অবস্থান? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে সদ্যসমাপ্ত ভোটে সাফল্যের পিছনে অখিলেশের যে ভূমিকা আছে, সে জন্য দলের মধ্যে বড় অংশই তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে চাইছিলেন। শেষ পর্যন্ত নেতা-কর্মী'দের এই 'মুড' উপেক্ষা করতে চাননি ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন মুলায়ম। তা ছাড়া লখনউয়ের কুর্সিতে ছেলে অখিলেশের অভিষেকের এটাই উপযুক্ত সময়, রামমনোহর লোহিয়ার মন্ত্রশিষ্যের তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি। কারণ, রাজ্য বিধানসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ৩৮ বছরের যুবনেতার আপাতত 'মুখ্যমন্ত্রিত্বের শিক্ষানবিশি'তে কোনও সমস্যা হবে না।
জাতীয় রাজনীতিতে প্রায় এক দশক ধরে সক্রিয় রয়েছেন অখিলেশ। ১৯৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনৌজ থেকে জিতে প্রথম লোকসভার সাংসদ হন বেঙ্গালুরু ও অস্ট্রেলিয়ায় পরিবেশ সংক্রান্ত ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করা অখিলেশ। বাবা মুলায়ম এত দিন কম্পিউটার বা ইংরেজি শিক্ষার ঘোর বিপক্ষে থাকলেও, স্পোকেন ইংলিশে চোস্ত অখিলেশ যথেষ্ট 'টেক স্যাভি'। তবে নিজেকে উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্র প্রমাণ করার জন্য সচরাচর আমজনতা ও সংবাদমাধ্যমের সামনে হিন্দি ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় কথা বলেন না।
২০১০ সালে নিজের ছেড়ে দেওয়া ফিরোজাবাদ লোকাসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী রাজ বব্বরের কাছে স্ত্রী ডিম্পল যাদবের পরাজয়ের পর থেকেই উত্তরপ্রদেশে দলের জনভিত্তি মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন অখিলেশ। রাহুল গান্ধীর দলিত মহল্লায় সফরের মোকাবিলায় গত বছরের শুরু থেকেই সমাজবাদী পার্টির নির্বাচনী প্রতীক সাইকেলে চড়ে গোটা রাজ্য ঘোরা শুরু করেন তিনি। সেই সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে অমর সিংয়ের মতো 'পেজ থ্রি' নেতাদের সরিয়ে বলিউডি প্রভাব মুক্ত করা। আজম খানের মতো মাটির কাছাকাছি থাকা সংখ্যালঘু নেতাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত সাইকেলে চড়েই হিন্দি বলয়ের হৃদয়পুরের প্রতিটি জেলার আম-জনতার কাছে পৌঁছে গিয়েছেন মুলায়ম-পুত্র। তবে রাহুল গান্ধীর মতো মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারের পথে হাঁটেননি অখিলেশ। পরিবর্তে উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন আর 'গুন্ডারাজ'-এর প্রত্যাবর্তন ঠেকানোর আশ্বাস দিয়ে রাজ্যবাসীর মনে সফলভাবে আশার জাল বুনেছেন। আর ভোটের বাজারে তারই সুফল তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীরা। এদিন রাজ্যপাল বি এল যোশির কাছে সরকার গড়ার দাবি জানাতে যাওয়ার আগে মিডিয়ার মুখোমুখি হয় অখিলেশ বলেন, ভোটের আগে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করাই হবে তাঁর সরকারের লক্ষ্য। একইসঙ্গে রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন মুলায়ম-পুত্র। সেই সঙ্গে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মায়াবতীর আমলে নির্মীত পার্ক ও মূর্তি ভেঙে প্রতিহিংসার রাজনীতি করবে না তাঁর সরকার।