মুক্ত অর্থনীতির ৩০ বছর পার, আর্থিক বৃদ্ধিতে দরকার আরও একটা বড় সংস্কার
আয়-খরচ-চাহিদা ও বিনিয়োগের চক্রে নির্ভর করে আর্থিক বৃদ্ধি। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারত।
নিজস্ব প্রতিবেদন: দেশের তখন ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণের পরের দিন তৎকালীন পিভি নরসিমার হাতে ফাইল তুলে দিলেন ক্যাবিনেট সচিব নরেশ চন্দ্র। তাতে ছিল দুটি নোট। তার মধ্যে একটি ছিল, চন্দ্রশেখর জমানায় আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কাছে ২৫টি শর্তে আর্থিক ত্রাণ নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল ভারত। ভারতের অর্থব্যবস্থার হাঁড়ির হাল ফাঁস হয়েছিল ১৯৯১ সালের ৮ জুলাই। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল, ভারতের সোনা এয়ারলিফ্ট করতে চলেছে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। মুক্ত অর্থনীতি নানান 'মিথ'। কিন্তু ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে কে তুলেছিলেন? ২৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা শিল্পমন্ত্রী নরসিমা রাও তুলে দিয়েছিলেন লাইসেন্স রাজ। ভিক্টর হুগোকে উদ্ধৃত করে মনমোহন সিং বলেছিলেন,'যে চিন্তাভাবনার উপযুক্ত সময় আসে, তার গতিরোধ করা সমগ্র বিশ্বের কারওর পক্ষে সম্ভব নয়।' এটা স্বেচ্ছায় নয় বরং বিপর্যয়ই পরিবর্তনের জন্য সওয়াল করছে।
১৯৯১ সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৮৩.৮ কোটি। ২০২১ সালে সেটাই ১৩৯ কোটি। ১০ জনের মধ্যে ৪ বা ৫৫ কোটি ভারতীয় জানেই না, ফোন, এলপিজি সংযোগ, এমনকি স্কুটারের জন্য কতগুলি বছর অপেক্ষা করে থাকতে হয়েছে। আধার নির্ভর ব্যবস্থায় কয়েক মিনিটেই খোলা যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অথবা ফোনের সংযোগ। ১৯৯১ সালে সংরক্ষিত সোনা ছিল ৪০০ মার্কিন মুদ্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। সেটাই এখন ২০২১ সালে ৬০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। ৫ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি থেকে ভারত পৌঁছে গিয়েছে ৭ শতাংশে বেশি বৃদ্ধিতে। আর্থিক সংস্কারের পর দেশের জিডিপি বেড়েছে দশগুণ। ২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। মাথাপিছু আয় ৩০৩ মার্কিন ডলার থেকে ২,০০০ ডলার। তবে প্রতিবেশীর চিনের থেকে ভারতের বৃদ্ধি অনেকটাই কম। প্রায় একই সময় মুক্ত অর্থনীতিতে প্রবেশ করে চিন। তবে তাদের জিডিপি বেড়েছে ৩৮৩ বিলিয়ন ডলার থেকে পৌঁছে গিয়েছে ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। মাথা পিছু আয় ৩৩৩ ডলার থেকে পৌঁছে গিয়েছে ১০ হাজার ২০০ ডলার।
আয়-খরচ-চাহিদা ও বিনিয়োগের চক্রে নির্ভর করে আর্থিক বৃদ্ধি। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারত। বিকেন্দ্রীকরণ থাকলেও কেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে সমস্যায় পড়েছে দেশ। জমি সংক্রান্ত আইনকানুন আরও সমস্যা বাড়িয়েছে। প্রতিটি সরকারই অনুমতিপ্রদানের বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেনি। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে ভারত এগিয়েছে। তবে এখনও একটা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৯০টি অনুমতিপত্র লাগে। হোটেল খুলতে কম করে ১০০টি। মানবসম্পদের উন্নয়ন ছাড়া কোনও দেশ এগোতে পারে না। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ভারতের খরচ অনেক কম। শিল্পায়নের জন্য এখনও রাজ্যের উপরে নির্ভর করতে হয়। ফলে অনেকক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়েছে হয়েছে শিল্প সংস্থাগুলিকে। মুক্ত অর্থনীতির ৩০ বছর আরও একটা সংস্কার দরকার। যে সংস্কারের সরকারের ভূমিকা অনেক কম থাকবে। গতিশীল হবে প্রশাসন।
আরও পড়ুন- Prashant-র শলায় বিরোধী বৈঠক ডাকলেন পাওয়ার? তৃতীয় ফ্রন্ট সেকেলে, মত ভোটকৌশলীর