টুজি কাণ্ডে ১২২টি লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ আদালতের
টুজি মামলায় দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৮ সালে তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী আন্দিমুথু রাজার আমলে 'স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি ভাবে' বিলি করা ১২২টি টুজি লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
টুজি মামলায় দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বড় ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৮ সালে তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী আন্দিমুথু রাজার আমলে 'স্বেচ্ছাচারী ও সাংবিধানিক বিধি বহির্ভূত' ভাবে বিলি করা ১২২টি টুজি লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জি এস সিংভি ও এ কে গাঙ্গুলির বেঞ্চ আজ ওই লাইসেন্সগুলি টেলিকম নিয়ামক সংস্থা 'ট্রাই' নির্দেশিত বিধি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে রায়ে জানিয়েছে। এছাড়াও, টুজি কাণ্ডে বেনিয়মের অভিযোগে ৬টি টেলিকম কোম্পানিকে জরিমানা করেছে আদালত। এর মধ্যে ৩টি সংস্থা, এটিসালাত ডিবি, ইউনিনর এবং টাটা টেলিসার্ভিসেস-কে ৫ কোটি টাকা করে এবং লুপ এবং এসার টেলিকম ও সিস্টেমা শ্যাম'কে ৫০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। তবে এখনই পরিষেবা বন্ধ করতে হবে না সংস্থাগুলিকে। তাদের ৪ মাস সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই সময়ের মধ্যে এমএনপি-র মাধ্যমে অন্য সার্ভিস প্রোভাইডার বেছে নিতে হবে বন্ধ হতে চলা সংস্থার পরিষেবার গ্রাহকদের। ৪ মাস পরে সরকারকে নতুন করে স্পেকট্রাম বন্টনের প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
রায় বেরোনোর পরই ৭ রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছন টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বাল। বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিগোষ্ঠী। যদিও তাতে গরহাজির ছিলেন চিদাম্বরম। এর পর এক সাংবাদিক বৈঠকে টেলিকমমন্ত্রী বলেন, "রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে সরকার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বেনিয়মের জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী নন। স্পেকট্রাম বন্টনে হাত নেই চিদাম্বরমের। এনডিএ আমলে স্পেকট্রাম বন্টন নীতি ঠিক করেছে ট্রাই।" সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ছায়া পড়েছে শেয়ার বাজারে। অভিযুক্ত টেলিকম সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করেছে।
২০০১ সালের দামে ২০০৮ সালে ওই স্পেকট্রাম লাইসেন্স বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজা। বৃহস্পতিবারের এই নির্দেশের ফলে টাটা, ইউনিনর, ভিডিওকন, সোয়ান টেলিকম, আইডিয়া ও লুপ টেলিকম-সহ মোট ১১টি টেলিকম সংস্থার পাওয়া ১২২টি লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার নিম্ন আদালতের উপর ছেড়ে দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। শনিবার দিল্লির পাটিয়ালা হাউসের বিশেষ সিবিআই আদালত এ ব্যাপারে রায় ঘোষণা করবে বলে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি জি এস সিংভি ও এ কে গাঙ্গুলির বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে সাময়িক স্বস্তি পেলেও বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া কার্যত কোনও পথ খোলা থাকবে না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে।
অন্য দিকে ২০০৮ সালের টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবি জানান হলেও দুই বিচারপতির বেঞ্চ এদিন সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তবে, স্পেকট্রাম কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতিপ্রকৃতির উপর সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি) নজরদারী চালাতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, সুপ্রিম কোর্টের ১২২টি লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব টেলিকম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলির পাশাপাশি গ্রাহকদের ওপরও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে স্পেকট্রাম নিলাম হলে বেশি দামে ইউনিফায়েড অ্যাকসেস লাইসেন্স কিনতে হবে টেলিকম কোম্পানিগুলিকে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের কল রেটও বাড়তে পারে।