দামিনীরা...

আজ শুধু নির্ভয়ার দিন নয়। নির্ভয়ার আগেও অকালে ঝরে গিয়েছে অনেক লড়াকু প্রাণ। কেউ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও, কেউ হার মেনেও লড়তে শিখিয়ে গিয়েছেন। কখনও প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দেশ, কখনও নীরবেই শেষ হয়ে গিয়েছে লড়াই। আইনের বদল হয়নি সবক্ষেত্রে। কিন্তু, একটু একটু করে আইন বদলের বীজ বপন করে দিয়েছে সবকটি ঘটনাই। ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্মরণ করছি সেইসব সাহসিনীদেরও।

Updated By: Dec 16, 2013, 06:35 PM IST

আজ শুধু দামিনীর দিন নয়। নির্ভয়ার আগেও অকালে ঝরে গিয়েছে অনেক লড়াকু প্রাণ। কেউ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও, কেউ হার মেনেও লড়তে শিখিয়ে গিয়েছেন। কখনও প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দেশ, কখনও নীরবেই শেষ হয়ে গিয়েছে লড়াই। আইনের বদল হয়নি সবক্ষেত্রে। কিন্তু, একটু একটু করে আইন বদলের বীজ বপন করে দিয়েছে সবকটি ঘটনাই। ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্মরণ করছি সেইসব সাহসিনীদেরও।

১. মথুরা ধর্ষণ কাণ্ড

তারিখ- ২৬ মার্চ, ১৯৭২

মহারাষ্ট্রর চন্দ্রপুর জেলায় দেসাই গঞ্জ থানার চত্বরেই দুজন পুলিসকর্মীর দ্বারা ধর্ষিত হন এক আদিবাসী মহিলা। সেবারও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দেশ। বদল হয়েছিল আইন। ভারতীয় মহিলার অধিকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ রচনা হয়েছিল তখনই।

২. অরুণা শানবাগ

তারিখ- ২৭ নভেম্বর, ১৯৭৩

মহারাষ্ট্রের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতাল। সাফাইকর্মী সোহনলাল বাল্মীকির বিকৃত কামের শিকার হন নার্স অরুণা শানবাগ। হাসপাতালের বেসমেন্টে পোশাক বদলের সময় অরুণাকে কুকুরের চেন দিয়ে বেঁধে ধর্ষণ করে বাল্মীকি। বাধ্য করে অ্যানাল সেক্সেও। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অরুণার মস্তিষ্কে বন্ধ হয়ে যায় অক্সিজেন চলাচল। প্রায় অন্ধ হয়ে যান অরুণা। তারপর থেকে গত ৪০ বছর ভেজিটেটিভ স্টেটে হাসপাতালে রয়েছেন অরুণা। হেনস্থা ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে ১৪ বছরের জেল হয় বাল্মীকির। কিন্তু ধর্ষণের অপরাধ লাগু হয়নি।

৩. গীতা চোপড়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড

তারিখ- ২৯ অগাস্ট, ১৯৭৮

নির্ভয়া কাণ্ডের আগে রাজধানীর ইতিহাসে সবথেকে বড় ঘটনা ছিল গীতা ও সঞ্জয় চোপড়া হত্যাকাণ্ড। ২৬ অগাস্ট ভাইবোন গীতা ও সঞ্জয় হারিয়ে যায়। তিন দিন পর উদ্ধার হয় তাদের দেহ। গীতার মেডিক্যাল রিপোর্ট বলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। অভিযুক্ত জসবীর সিং(বিল্লা) ও কুলজিত্ সিং(রঙ্গা) অপহরণ করে গীতা ও সঞ্জয়কে। পরে প্রমাণ লোপাটের জন্য নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যা। কয়েকমাস পর চলন্ত ট্রেন থেকে ধরা পড়ে বিল্লা, রঙ্গা। ১৯৮২ সালে ফাঁসি হয় অপরাধীদের।

৪. কুয়ান পোশপোরা গণধর্ষণ কাণ্ড

তারিখ- ২৩, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১

কাশ্মীরের প্রত্যন্ত কুপাওয়া জেলার কুয়ান পোশপোরা গ্রামে সেনাবাহিনীর দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন ৫৩ জন মহিলা। তবে সংখ্যা ছিল সরকারি হিসেবে। মানবাধিকার কমিশনের হিসেব বলছে, অন্তত ১০০ জন মহিলা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। সরকারি তদন্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল। পরে মানবাধিকার কমিশেনের চেষ্টায় নড়েচড়ে বসে সরকার। এরপর থেকে কুয়ান পোশপোরা গ্রামে কোনও মেয়েরই বিয়ে দিতে পারেননি অভিভাবকরা। ১৬ বছরের কিশোরীর বিয়ে হয় তিন সন্তানের বাবা পঞ্চাশ বছরের পাত্রের সঙ্গে।

৫. ভাঁবরি দেবী ধর্ষণ কাণ্ড

তারিখ- ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২

রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিবাদী দলিত মহিলা ভাঁবরি দেবী চেয়েছিলেন গ্রামের উন্নয়ন, মহিলাদের উন্নয়ন। বাল্য বিবাহ, ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ভাঁবরিকে সহ্য করতে পারেনি গ্রামের উঁচু জাতের মোড়লরা। নিজের ক্ষেতে স্বামী মোহনলালের সঙ্গে কাজ করছিলেন ভাঁবরি দেবী। তখনই ৫ জন উঁচুজাতের গ্রামবাসী ধর্ষণ করে তাঁকে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন ভাঁবরি। কিন্তু আদালতা জানায়, উচ্চজাতের কোনও পুরুষ কখনই দলিত মহিলাকে ধর্ষণ করতে পারে না। অভিযুক্ত পাঁচ জনের মধ্যে ছিল কাকা-ভাইপো সম্পর্ক, তাই ভাইপোর সামনে কাকা ধর্ষণ করতে পারে না বলেও ফুত্কারে উড়িয়ে দিয়েছিল আদালত। এমনকী, ডাক্তারি পরীক্ষা করতেও লাগিয়ে দিয়েছিল ৫২ ঘণ্টা সময়।

৬. সুরিয়ানেলি ধর্ষণ কাণ্ড

তারিখ- ১৬ জানুয়ারি-২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬

কেরালার মুন্নারে স্কুলের হোস্টেল থেকে পালিয়ে যায় ১৬ বছরের কিশোরী। মাঝপথেই ভেগে যায় প্রেমিক রাজু। অত্যাচারী উষা ও ধর্মরাজনের হাতে পড়েন কিশোরী। এরপর ৪০ দিন ধরে কেরালা ও তামিল নাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পুরুষের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে চলেন ১৬ বছরের কিশোরী। গ্রামে ফিরে আসার পর ঘটনা চেপে রাখতে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে পুলিস। ২০০৫ সালে হাইকোর্ট জানায় কোনও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। সবকটিতেই সম্মতি ছিল কিশোরীর। আট বছর পর নির্ভয়া কাণ্ডের পর ফের সামনে আসে সুনিয়ারেলি ধর্ষণ কাণ্ড। হাইকোর্টকে তিরস্কার সুপ্রিম কোর্টের।

৭. থংজম মনোরমা ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড

তারিখ-১০ জুলাই, ২০০৪

মণিপুরের পিপল'স লিবারেশন আর্মির সদস্য প্রতিবাদী মনোরমাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সেভেনটিনথ আসাম রাইফেলসের প্যারামিলিটরি ইউনিট। পরদিন তার বুলেটে ঝাঁঝরা দেহ উদ্ধার হয়। স্কার্টে পাওয়া যায় বীর্যের উপস্থিতিও। ঘটনার ৫ দিন পর ৩০ জন নগ্ন মধ্যবয়সী মহিলা ইম্ফল থেকে আসাম রাইফেলসের অফিস পর্যন্ত মিছিল করেন। স্লোগান ছিল, ভারতীয় সেনা...আমাদের ধর্ষণ কর...আমরা সকলে মনোরমার মা। ঘটনার প্রতিবাদে লেখিকা এমকে বিনোদিনী নিজের পদ্মশ্রী উপাধি ত্যাগ করেন। গোটা বছর ধরে চলে প্রতিবাদ।

৮. ইমরানা ধর্ষণ কাণ্ড

তারিখ- ৬ জুন, ২০০৫

মুজ্জফরনগরে শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষিত হন ২৮ বছরের ইমরানা। স্থানীয় পঞ্চায়েত রায় দেয়, শ্বশুরের সঙ্গে সহবাস করলে এবার থেকে শ্বশুরকেই স্বামী হিসেবে মানতে হবে। স্বামী তাঁর পুত্রসম!

৯. সোপিয়ান ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড

তারিখ- ২৯-৩০, মে, ২০০৯

জম্মু ও কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলায় ২৯, মে , ২০০৯ নিজেদের ফলের বাগান থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ২২ বছরের নীলোফার ও ১৭ বছরের আসিয়া। পরের দিন ফলের বাগানের এক কিলোমিটার দূরে উদ্ধার হয় দুজনের দেহ। গ্রামবাসীরা দাবি করেন দুজন সিকিউরিটি গার্ডের দ্বারা ধর্ষিতা ও খুন হয়েছেন দুই মহিলা। পুলিস তদন্তে গড়িমসি করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। টানা ৪৭ দিন ধরে কারফিউ ঘোষনা করা হবে। পরে মুখ্যমন্ত্রী ওপর আবদুল্লার নির্দেশে ১ মাসের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে বলা হয় পুলিসকে।

১০. সৌমিয়া ধর্ষণ ও হত্যা কাণ্ড

তারিখ- ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১

চলন্ত ট্রেনের মহিলা কামরায় সৌমিয়াকে আক্রমন করে অভিযুক্ত গোবিন্দচমি। বাধা দিলে ট্রেনের দেয়ালে মাথা ঠুকে, দরজার ফাঁকে আঙুল চিপে সৌমিয়াকে ধাক্কা মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেয় গোবিন্দচামিও। ২০০ মিটার হেঁটে গিয়ে সৌমিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সে। রেললাইনের পাশের জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করা হয় তাঁকে। ৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশূরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় সৌমিয়ার। গোবিন্দচমিকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে ফাস্টট্র্যাক কোর্ট।

.