Valentine Special:এ শহরের বুকে তৈরি হোক এক শাশ্বত প্রেমোরিয়াল
রক্তগোলাপে ছেয়ে গেছে আজ শহরের ফুটপাথ।
সৌমিত্র সেন
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় সহসাই ভরে উঠেছে এই ১৪ ফেব্রুযারির রবিদিবস।
হবে না কেন? শীত-শীত বাতাসের প্রণত ফুলঝুরি আছে বটে স্কাইলাইনে, গলিতে, বড়রাস্তায়, ছাদে, টেরেসে....। তবু এই ১৪ ফেব্রুয়ারি যে বসন্তেরও জন্মদিন! ১ ফাল্গুনের প্রমিত উষ্ণতা কী সুকোমল ভাবেই-না ছড়িয়ে পড়েছে এই আকাশে, ঘাসে-ঘাসে, হিমবাতাসের ক্ষীণ আশ্বাসে।
তবু এ শহরে প্রেমের সেই অজেয় অভিজ্ঞান কই? নেই তো! কবে হবে এ শহরের বুকে এক শাশ্বত প্রেমোরিয়াল! প্রেমস্মরণের অ-মরণ সৌধ!
যবে হয় হোক, আপাতত আজ প্রেম লিখব, প্রেম ভাবব, প্রেম গাইব, প্রেম শুনব। আজ জগতের যত নারীপুরুষের ভারতীয় তথা বাঙালি প্রতিনিধি হয়ে আমরা আমাদের ঈপ্সিত মানুষটির দিকে তাকিয়ে আধো ভাষে আধো আশে আধো বিশ্বাসে বলতে থাকব-- 'আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে'!
না, এখনও ফোটেনি রুদ্রপলাশ, এখনও জাগেনি রক্তপলাশ, এখনও রক্তদিগন্তে ঘুম ভাঙেনি চৈত্রপলাশের। পলাশদিন এখনও ঢের...ঢের দূরে। বসন্ত পূর্ণ যুবতী না হলে সে ফোটে না, ছড়ায় না তার আগুন কুহক বাসন্তী রোদ্দুরে।
তবু প্রেমদিবস মানে ঘোরতর বসন্তই। পলাশের ওম নেই তো কী হয়েছে? রক্তগোলাপের হৃদয়-বিদারী অনুরণনেই যে নিষ্ঠুর ভাবে মথিত দীপিত ক্বণিত রণিত এ দিনের আদিগন্ত প্রেমোচ্চারণ! এই উচ্চারণ থেকে কোনও দিনই রেহাই নেই সেই ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের। ফুলগন্ধব্যথিত স্তিমিত আঁধারের মধ্যেও তাকে তাড়া করে সেই সব আলোধূসরিত স্মৃতি-স্বপ্ন। নজরুলের সেই অমরগীতি যেন রিনরিন করে মনোতন্ত্রীতে-- তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কী কঠিন!
আরও পড়ুন: Kiss Day 2021: টেলি তারকাদের ভাইরাল চুমু
না, ভোলাদিনের লগ্ন নয় আজ। বরং খুঁজে ফেরা এবং খুঁজে নেওয়া চঞ্চল চিত্তের চিত্রিত চৈতন্যেরই চির-উৎসব আজ। সেখানে মগ্নতা আছে। আলো আছে। আছে প্রগাঢ় হৃদয়ের অমল আগুন। অশ্রুও থাকে বইকী! সেই পেয়ে-হারানো এবং হারিয়ে-পাওয়া নক্ষত্রতিথির তীর্থে আজ ভুবনজোড়া প্রেমের আসন পাতা। সেই আসনে বসেই আজ প্রেম মাখব, প্রেম কাঁদব, প্রেম হাসব, প্রেম যুঝব।
আনন্দকে ভেঙে আমরা কী পাই? জোড়াসাঁকোর ঠাকুর লিখেছিলেন-- দু'টি জিনিস পাওয়া যায়, একটি জ্ঞান, অন্যটি প্রেম। জ্ঞানের কথা আজ তোলা থাক। আজ আমরা জীবনের এই ভাঙাপথের রাঙাধুলোয় কেবলই দু'হাতের মুঠোয় নিয়ে ভাঙতে-ভাঙতে যাই সমস্ত রোমহর্ষণকে আনন্দকে, রোমাঞ্চকে; আর কেবলই কুড়োতে থাকি প্রেমকে, সেই অমোঘ অজর অশোক প্রেমকে, যে-প্রেম আমার-তোমার হৃদয়ের চাঁদভাঙা জ্যোৎস্নায় ছড়ায় অমর দ্যুতি। সেই অলৌকিক জ্যোতির সৈকতে আমর্ম নিষ্ণাত আমরা আজ তাই কেবলই প্রেম ভাঙব, প্রেম রাখব, প্রেম গাঁথব, প্রেম জাগব।
প্রেম তো আর সেই ২৬৯ সালের ইতালির রোমনগরীতেই নোঙর ফেলে বসে থাকার বান্দা নয়। সন্ত ভ্যালেন্টাইন নামের খিস্ট্রান পাদ্রি তথা চিকিৎসকও ধর্মপ্রচারের অভিযোগে রোম সম্রাটের রোষে বন্দি হয়েও নেই। কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েটির তুলতুলে হৃদয়কে সাবধানে একপাশে সরিয়ে রেখেই সে নির্জন বন্দরে অন্ধকারে চলে এসেছে। তাই মৃত্যুদণ্ড তাঁকে অমর করেছে।
তবুও মৃত্যু এসেছে তার। কেননা যুগে যুগে সাবধানীরা তার বাঁধ বেঁধেছে, ভীরু সংস্কার তার পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে বোকার মতো। ফ্রান্স সরকার একদা ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে দিনটির উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি, পাকিস্তান-- সর্বত্রই জীবনে জীবন যোগ করতে ব্যর্থ হয়ে নিজের পশরা নিয়ে একাকী ঘুরে বেড়িয়েছে সে পথে-বিপথে। কিন্তু ক্ষণিকের জন্য। কোনও প্রত্যাখ্যানই তাকে চিররুদ্ধ করে রাখতে পারেনি। ভালোবাসার বারান্দায় ঠিক এসে পড়ে এক চিলতে রোদ্দুর। বর্ণিল কার্ড, ফুল আর চকোলেটের তীব্র সংরাগে মুখর হয়ে ওঠে সমস্ত নীরব ভালবাসাবাসি।
সাবধানীরা বাঁধ বাঁধলেও নতুন যুগের নতুন যৌবন তো বারবার তার কূল ভেঙে দেয়। আসে প্রাণের উদ্দামতা, জাগে প্রেমের বন্য জোয়ার। ফুলে-ফুলে ঢেকে যায় সব ম্লান মুখ। আলো ঠিকরে পড়ে। কোথাকার কোন বিবর্ণ পাঁচিলের দাঁতের ফাঁক দিয়ে উঠে-আসা অচেনা অঙ্কুরের মতোই জেগে ওঠে চির-চেনা প্রেম। এটুকু না থাকলে কী করে বাঁচবে সেই সব প্রাণিত জারিত শাণিত মন? জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি সেই কতদিন আগেই তো তাদের জন্য লিখে গিয়েছেন-- আমি আমার জন্য মরে গেছি এবং বেঁচে আছি তোমার কারণে! তোমার কারণে বেঁচে আছি বলেই তো আমার এত আনন্দ, এত প্রেম, এত গান আর এত সুর!
আরও পড়ুন: ভালবাসার সপ্তাহ শুরু, আজ Rose Day, কোন রঙের গোলাপ কী বার্তা দেয় জানেন?