বিকেলের বড়ন্তি
একটা লাইন টেনে, তার উপর ত্রিভুজ পাহাড়। সামনে কাঁচা হাতের আঁকাবাঁকা ছোট্ট দীঘি। আর তেকোনা পাহাড়ের পেছন থেকে উঁকি দেওয়া লাল টিপ সূর্যটা- ছোট বেলায় আঁকার ক্লাসে এই ছবিটা কম বেশি আমরা সবাই এঁকেছি।
ঈশিতা বন্দোপাধ্যায়
একটা লাইন টেনে, তার উপর ত্রিভুজ পাহাড়। সামনে কাঁচা হাতের আঁকাবাঁকা ছোট্ট দীঘি। আর তেকোনা পাহাড়ের পেছন থেকে উঁকি দেওয়া লাল টিপ সূর্যটা- ছোট বেলায় আঁকার ক্লাসে এই ছবিটা কম বেশি আমরা সবাই এঁকেছি।
পলাশের টানে বসন্তের শুরুতে লাল মাটির দেশে। আসানসোল থেকে ভোর ভোর ট্রেন ধরে জনহীন ছোট্ট স্টেশন মুরাডি। দূরে তখন টিলার আড়ালে আড়মোড়া ভেঙেছে সূর্যটা। বাঁকা পথে রাঙা ধুলো উড়িয়ে সেই আঁকার খাতার পাতায় আবার ফিরে যাওয়া। সেই ছোট্ট বেলার সিনারিটা- শান্ত দীঘিটি পাহাড়ের কোলে। বড়ন্তি। মুরাডি স্টেশন থেকে মিনিট পনেরোর পথ গাড়িতে।
পুরুলিয়ার একরত্তি গ্রাম। বড়ন্তি। ছোট্ট ছোট্ট টিলা আর সাঁওতালদের গ্রাম নিয়ে সাতুরি ব্লক। মুরাডি পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ছোট্ট নদী তারও নাম বড়ন্তি। রামচন্দ্রপুর সেচ প্রকল্পের উদ্যোগে নদীর উপর বাঁধ দিয়ে তৈরী হয়েছে জলাধার। যেটুকু চাষাবাদ হয় এই শুকনো লাল মাটিতে সেটা এই জলাশয়ের কল্যাণে।
তখন বসন্ত। মার্চের শুরু। আকাশে আগুন জ্বেলে এদিক ওদিক ফুটে আছে শিমুল-পলাশ। যে দিকে চোখ যায় ফসলের ক্ষেত গালিচা পেতে রেখেছে। মাঝে মাঝে শিশু শালের আড়াল। আর একটানা পাখির ডাক। পাখি প্রেমিদের অতি পছন্দের বড়ন্তি। শীতের শুরু থেকেই প্রিয় সেই পাখিরা ভিড় করে বড়ন্তির জলাশয়ে।
গ্রামীণ জীবনের স্বাদ পেতে কয়েক পা হেঁটেই জীবনপুর। ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম। তকতকে নিকানো উঠোন আর ছবি আঁকা মাটির দেওয়ালে ভালবাসা মাখামাখি।
বিকেলে বড়ন্তির জলে পড়ন্ত সূর্যের ম্যাজিক আলোর ঝিকিমিকি। এক মুঠো সোনা যেন ছড়িয়ে পড়েছে দীঘির জলে। লাল টুকটুকে সূর্যটা পাহাড়ের পিছনে ঝুপ করে লুকিয়ে পড়ার পড়েও চোখে ঝিলমিল লেগে থাকে অনেকক্ষণ।
যাওয়ার পথঃ কলকাতা থেকে ২৬৪ কিমি। কলকাতা থেকে আসানসোল হয়ে আদ্রা শাখার ন্যারো গেজ রেলে মুরারী স্টেশন। সেকান থেকে আরও ৬ কিমি। ১৫ মিনিট লাগে গাড়িতে।
থাকার হদিশঃ ৭০০-৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মোটামুটি চলনসই থাকার ঠাঁই জুটে যাবে এখানে।