Kalpataru Utsav: সেই থেকেই অযাচিত করুণায় মাখা অমর্ত্য আলোর উদ্ভাসের দিকে দৌড়ে চলেছেন ভক্তেরা!

Kalpataru Utsav: এভাবে দৌড়তে দৌড়তে একদিন-না-একদিন তাঁরা পৌঁছবেনই ক্ষমাসুন্দর আশ্চর্য অমল সেই পৃথিবীতে; যেখানে কোনও পাপ থাকবে না, লোভ থাকবে না, মোহ থাকবে না, হিংসা থাকবে না, ধ্বংস থাকবে না, ক্ষয় থাকবে না! অযাচিত করুণায় আশ্লিষ্ট এক-মর্ত্যদিনেই নেমে আসবে অমর্ত্য আলোর সুবিপুল উদ্ভাস। ধন্য হবে ধরাধাম, ধন্য হবে মানুষ, ধন্য হবে মানবজাতি! কবে আসবে সেই মহা-কল্পতরুদিবস?

Edited By: সৌমিত্র সেন | Updated By: Dec 31, 2022, 07:04 PM IST
Kalpataru Utsav: সেই থেকেই অযাচিত করুণায় মাখা অমর্ত্য আলোর উদ্ভাসের দিকে দৌড়ে চলেছেন ভক্তেরা!

সৌমিত্র সেন

জীবনের একেবারে শেষ দিক। খুবই অসুস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ। পুরোদমে চিকিৎসা চলছে তাঁর। চিকিৎসার সুবিধার জন্যই তাঁকে এনে রাখা হয়েছিল কাশীপুর উদ্যানবাটীতে। উদ্যানবাটীর দোতলার একটি ঘরে থাকতেন তিনি। একদিন বিকেল নাগাদ হঠাৎই তিনি তাঁর দোতলার সেই ঘর থেকে নেমে এলেন উদ্যানের একতলায়, বাগানে। সেদিন তাঁর শরীর তুলনায় ভাল ছিল। নীচের বাগানে তখন বেশ কয়েকজন গৃহীভক্ত ছিলেন। যাঁর মধ্যে ছিলেন নট-নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষও। তিনি তো এমনিতেই চারদিকে ঠাকুরের অবতারত্ব সম্পর্কে বলে বেড়াতেন। নিজে যা বিশ্বাস করতেন, তাই বলতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ সেটা জানতেনও। তো, যেন সেই প্রসঙ্গ টেনেই সেদিন শ্রীরামকৃষ্ণ গিরিশের সামনে এসে বললেন, 'হ্যাঁ গো, তুমি যে আমার সম্পর্কে এত কিছু বলে বেড়াও, তা, আমাকে তুমি কী বুঝেছ?' গিরিশ তখন ভাবগদগদকণ্ঠে ঠাকুরের সামনে নতজানু হয়ে বসে বললেন, 'স্বয়ং ব্যাস-বাল্মীকি যাঁর ইয়ত্তা করতে পারেননি, আমি তাঁর কী বলব?' ব্যস! যেই কথাগুলি তিনি বললেন অমনি শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যে ভাব পরিবর্তন হতে শুরু করল। ক্রমশ ভাবসমাধি হল তাঁর। আর সেই ভাবস্থ অবস্থা থেকেই সেদিন তিনি বললেন-- 'তোমাদের আর কী বলব? তোমাদের চৈতন্য হোক!'

আরও পড়ুন: Year Ender 2022: করোনা, খরা, ইউক্রেন, ইরানের আগুন ছুঁয়ে মেসির কাব্য; এ বছরের নানারঙের দিনগুলি...

বিশেষ সেই দিনটি ছিল ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি। সেই হিসেবে ১ জানুয়ারি দিনটি পরবর্তী কালে 'কল্পতরু উৎসব' দিবস হিসেবে পরিচিত হয়। কেন দিনটি 'কল্পতরু উৎসব' হিসেবে পরিচিত হল? কারণ, সেদিন কাশীপুর উদ্যানবাটীতে উপস্থিত ভক্তেরা শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যা চেয়েছিলেন, তা-ই পেয়েছিলেন।

'কল্পতরু' কথাটি এসেছে পুরাণ থেকে। এটি কল্পবৃক্ষ। সমুদ্রমন্থনের সময়ে সমুদ্রগর্ভ থেকে এটি উঠে আসে। বলা হয়, কল্প শেষ হলে আবার সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয় এটি। এজন্যই এর নাম কল্পতরু। এটি হল অভীষ্ট ফলদায়ক বৃক্ষ। এই গাছের তলায় দাঁড়িয়ে কেউ কোনও কিছু প্রার্থনা করলে তিনি অচিরেই তা লাভ করেন। দেবরাজ ইন্দ্রের স্বর্গোদ্যানে নাকি এই গাছ ছিল। এটি ছিল ইন্দ্রলোকের সর্বকামনা-পূরণকারী দেবতরু বিশেষ।

আরও পড়ুন: Nostradamus' Predictions: ২০২৩ সালে নরখাদক হয়ে উঠবে মানুষ, ঘটবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ! চমকে দিচ্ছে নস্ত্রাদামুসের ভবিষ্যদ্বাণী...

সেদিন কাশীপুরে শ্রীরামকৃষ্ণ যেন এইরকমই এক কল্পতরু হয়ে উঠেছিলেন। যিনি তাঁর কাছে সেদিন যা চেয়েছিলেন তিনি সেটাই পেয়েছিলেন। এবং ভক্তবিশ্বাস, প্রতিবছরই ১ জানুয়ারির দিনে শ্রীরামকৃষ্ণ কল্পতরু হন, অলক্ষ্যে থেকে পূর্ণ করেন তাঁর অগণিত ভক্তের কামনা। আর সেই বিশ্বাস থেকেই এদিন বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর এবং কাশীপুর উদ্যানবাটীতে বহু ভক্ত সমবেত হন। যদিও মূল কল্পতরু উৎসব একান্ত ভাবে কাশীপুর উদ্যানবাটীরই ব্যাপার। 

১লা জানুয়ারি কাশীপুর উদ্যানবাটীতে হাজার হাজার ভক্ত এই উৎসব উপলক্ষ্যে হাজির হন। কী পান তাঁরা? কে বলবে ভক্তের মনের কথা? তবে, এককথায় বলা যেতে পারে, তাঁরা চান তাঁদের চৈতন্য উদ্বোধিত হোক। কেননা, কাশীপুরে সমবেত ভক্তকুলকে শ্রীরামকৃষ্ণ সেদিন ‘চৈতন্য হোক’ বলেই আশীর্বাদ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণকে ঘিরে সেদিন সকলে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন, যে যাঁর মতো করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করছিলেন। সকলের অন্তরেই একটা অদ্ভুত পরিবর্তন আসছিল। একটা ট্রান্স আসছিল যেন। অনর্গল ধারায় প্রত্যেকের ভিতরের সমস্ত ভাবরাশি যেন ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসছিল। শ্রীরামকৃষ্ণ সকলকে স্পর্শ করছিলেন আর বলছিলেন-- 'তোমাদের চৈতন্য হোক!'

‘চৈতন্য হোক’ মানে কী? 

আরও পড়ুন: Annual Money Horoscope 2023: নতুন বছরে টাকা আসবে একেবারে ছপ্পর ফাড়কে! জেনে নিন কোন কোন রাশির...

‘চৈতন্য হোক’ মানে, ভক্তের শরীরে-মনে-চিন্তায়-চেতনায় জ্ঞান ও বোধের জাগরণ ঘটুক। নিখাদ ঈশ্বরানুভূতিতে ভরে উঠুক তাঁদের অন্তরাত্মা। অন্তরে জন্ম হোক শুভবোধের। মননে নামুক প্রজ্ঞা। ভক্তের মন ক্রমশ প্রস্তুত হয়ে উঠুক দেবতার কাছে শুধুই জ্ঞান-বৈরাগ্য-ভক্তি-বিশ্বাস চাওয়ার জন্য। 

শোনা যায়, সেদিন কাশীপুর উদ্যানবাটীতে তখন যাঁরা ঠাকুরের একেবারে কাছাকাছি ছিলেন, লক্ষ্য করেছিলেন ঠাকুরের সেই ঐশী ভাবপরিবর্তন, তাঁরা অন্য ভক্তদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে ডাকছিলেন-- 'ওরে তোরা কে কোথায় আছিস, আয়, আয়! দৌড়ে আয়! ঠাকুর আজ কল্পতরু হয়েছেন!'

সেই থেকে দৌড়চ্ছেন ভক্তেরা, দৌড়চ্ছেন বিশ্বাসীরা। দৌড়চ্ছেন শ্রীরামকৃষ্ণের দিকে, দৌড়চ্ছেন ঠাকুরের দিকে! দৌড়চ্ছেন বোধের দিকে, জ্ঞানের দিকে, বৈরাগ্যের দিকে! দৌড়চ্ছেন চৈতন্যের দিকে! দৌড়চ্ছেন আলোর দিকে, অমৃতের দিকে! দৌড়চ্ছেন আনন্দের দিকে! এভাবে দৌড়তে দৌড়তে একদিন-না-একদিন তো তাঁরা পৌঁছবেনই ক্ষমাসুন্দর আশ্চর্য অমল সেই পৃথিবীতে, যেখানে কোনও ক্রোধ থাকবে না, পাপ থাকবে না, লোভ থাকবে না, মোহ থাকবে না, হিংসা থাকবে না, রক্ত থাকবে না, মৃত্যু থাকবে না, ধ্বংস থাকবে না, ক্ষয় থাকবে না! অযাচিত করুণায় আশ্লিষ্ট এক-মর্ত্যদিনেই নেমে আসবে অমর্ত্য আলোর সুবিপুল উদ্ভাস। ধন্য হবে ধরাধাম, ধন্য হবে মানুষ, ধন্য হবে মানবজাতি! কবে আসবে সেই মহা-কল্পতরুদিবসটি? 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) ​

 

.