Durga Puja 2022: হাততালি || বিশেষ রচনা ||
শুভ্রজিৎ মৈত্র
হাততালি
শুভ্রজিৎ মৈত্র
ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো। সেই ছোটবেলা থেকে প্রথমে দেশলাই তারপর লাইটার নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি আমার এই ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনাতে আগুন জ্বালাবো বলে। পারিনি, আবর্জনা আরও জমা হয়ে গেলো। নিজের আত্মকথা লিখতে গেলে খালি পরের কথাই লিখে ফেলবো।
হাততালি শুধুই দিয়েই গেছি কোনদিন পাইনি। ফুটবল, ক্রিকেট সবকিছুই খেলতে কতো ভালো লাগতো। কত স্বপ্ন দেখেছি পায়ে বল নিয়ে একে একে অন্যকে কাটিয়ে গোল করছি বা পঞ্চাশ, একশো রান করছি, পারিনি। অন্যদের করতে দেখে হাততালি দিয়েছি।
মাঝারি মানের ছাত্র ছিলাম। প্রতি বছর প্রথম দশজন প্রাইজ পেতো আমি কোনদিন পাইনি। তাদের উপহার পাওয়ার সময় হাততালি দেবার জন্য উপস্থিত থাকতাম। কেউ কেউ ভালোবেসে কি পুরস্কার পেলো দেখতে দিতো।
গান বাজনার অনুষ্ঠানে আমাকে ডেকে নিয়ে যেত কাজ করানোর জন্য। যতক্ষণ পর্দা পরে থাকতো ততক্ষণ মঞ্চে থাকতাম মঞ্চ সাজাবার জন্য। তারপর পর্দা তোলার জন্য মঞ্চ থেকে সরে যেতে হতো। কারোর বুড়ো আঙুলের দিকে তাকিয়ে থেকেছি কখন আবার পর্দা নামাতে হবে। কেউ কোনদিন দেখতে পায়নি। এখানে অনেক সময় না বুঝে হাততালি দিয়েছি। হারমোনিয়াম বয়ে বয়ে বাড়ি ফিরেছি কাঁধে ব্যথা নিয়ে। একদম শেষে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে এই তুই টিফিন পেয়েছিস? অনেক সময় না পেয়েও হ্যাঁ বলেছি।
কোন মিছিলে সামনে হাঁটতে পারিনি। নেতারা হেঁটেছেন, আমরা ভিড় বাড়িয়েছি। গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিয়েছি। মিটিং-এ লিফলেট বিলি করেছি। নেতাদের বক্তৃতা শেষ হলেই বগলে লিফলেট নিয়ে হাততালি দিয়েছি। ছবি তুলেছি। কেউ কোনদিন আমার ছবি তোলেনি।
রাতের পর রাত জেগে মরা মানুষের চোখ তুলেছি যাতে কর্নিয়া জনিত অন্ধ মানুষে দেখতে পায়। চোখ তোলার জন্য একের পর এক ফোন পেয়েছি। কিন্তু কোনদিন কোন সাংবাদিক আমাকে চোখ তোলার অভিজ্ঞতা জানতে চায়নি। যারা তোলেনি তারা বাইট দিয়েছে। আমি হাততালি দিয়েছি।
তিরিশ বছর ধরে বছরে তিন চার বার রক্ত দিয়ে এসেছি কিন্তু গোনা হয়নি। জানিনা কতবার রক্ত দিলাম। কিন্তু প্রায়ই রক্তদানের ক্যাম্পে গিয়ে যারা পঞ্চাশ বা পঁচাত্তর বার রক্ত দিলো তাদের জন্য হাততালি দিয়েছি।
এ জীবনে কাউকে খুশি করতে পারিনি। কেন পারিনি তাও জানিনা। মাথায় অনেক চুল ছিলো তাও রক্ষা করতে পারিনি।
এতদূর ব্যর্থ যে বারবার বলেছি যে ভগবানে বিশ্বাস করিনা তাও জোর করে মাথায় চন্দনের ফোঁটা দিয়ে চলে গেলো এক নব্বই পেরোনো বুড়ি। দোষ এই বন্ধুদের সাথে এক কীর্তনের আসরে গিয়েছি। সেখানেও কীর্তনের গানে হাততালি দিয়েছি।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা