Charak: চড়ক পুজো কী? নববর্ষের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এই পুজো কোন বিপ্লব ঘটাল?
Charak Puja | Charak Samkranti: কথিত আছে, চড়কের দিনেই শিবের বিয়ে হয়েছিল। তা যাই হোক, বঙ্গ লোকসংস্কৃতির অন্যতম এই চড়ক। এই পুজোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় দৈহিক যন্ত্রণা। একে এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ মনে করা হয়। যে-সমাজ মূলত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির অনুগামী, সেই সমাজের প্রেক্ষিতে এই পুজো একটা সামাজিক বিপ্লব।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বঙ্গ লোকসংস্কৃতির অন্যতম এই চড়ক। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পুজোর দিন একটি গাছের থামে আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ বাধা হয়। তাতে দড়ি লাগানো হয়। দাড়ির প্রান্তে একটি বড় বঁড়শি বাঁধা থাকে। ওই বঁড়শিতে মানুষকে গেঁথে ঘোরানো হয়। 'মানুষ' বলতে যাঁরা গাজন সন্ন্যাসী তাঁদেরই। 'গেঁথে' মানে আগে গেঁথেই এটা করা হত, এখন বিষয়টি বেঁধে করা হয়। তাঁরা ধর্মীয় রীতির অনুষঙ্গে এটি স্বেচ্ছায় করে থাকেন। বঁড়শিটি সন্ন্যাসীদের শরীরে দড়ি দিয়ে পিঠ-কোমরের সঙ্গে ভালো ভাবে বেঁধে নেওয়া হয়। এই পুরো বিষয়টির জন্য যে গাছের থামটি ব্যবহার করা হয়, তাকেই 'চড়ক গাছ' বলে। চড়ক শেষ হওয়ার পরে গাছটিকে পুনরায় কোনো পুকুর বা দীঘিতে জলের মধ্যে ডুবিয়ে রেখে দেওয়াই রীতি। পরের বছর চড়ক মেলার সময় আবার সেটাকে তুলে আনা হয়।
আরও পড়ুন: Nil Sasthi Festival: কেন নীলপুজো জানেন? এ পুজোয় ছোটখাটো এই নিয়ম না মানলে খুব অসন্তুষ্ট হন শিব...
কথিত আছে, এই চড়কের দিনেই শিবের বিয়ে হয়েছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিব ঠাকুরের আরাধনা, নৃত্যগীতের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, কৃষ্ণের সঙ্গে শিবের উপাসক বাণরাজার যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মহাদেবের থেকে অমরত্ব লাভ করার জন্য বাণরাজা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে মহাদেবকে তুষ্ট করেন। শিবের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য ভক্তিমূলক নৃত্যগীতও করেন। সেই সূত্রেই চড়কের সময়ে শিবপুজোর শুরু বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: Dhana Yoga: নববর্ষেই মহা ধন যোগ! অকল্পনীয় অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ এই রাশির জাতকদের...
একালে, ১৪৮৫ সালে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামে এক রাজা ছিলেন। তিনিই প্রথম এই চড়ক পুজোর প্রচলন করেন বলে মনে করা হয়। সেই সময় থেকেই শৈব সম্প্রদায়ের মানুষজন এই উৎসব পালন করে আসছেন।
এই পুজোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল দৈহিক যন্ত্রণা। একে এই পুজোর এক বিশেষ অঙ্গ বলে মনে করা হয়। এই পুজোর কিছু বিশেষ প্রথা রয়েছে। যেমন-- জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটা, বঁটি-ছুরি-কাঁটা ইত্যাদির উপর লাফানো বা ঝাঁপানো, আগুনের উপর নাচ, শরীর বাণবিদ্ধ করে চড়কগাছে দোলা ইত্যাদি। সবটার পিছনেই নিজের শরীরকে যন্ত্রণা দিয়ে ভগবানকে তুষ্ট করার ভাবনাটি থাকে।
এই চড়ক পুজোর মধ্যে সামাজিক প্যারাডাইম শিফটের একটা ব্যাপারও নীরবে ঘটে গিয়েছে। এ পুজো কখনও বড়লোকের বাড়ির পুজো ছিল না, ছিল না রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির পুজোও। এটি বরাবর ছিল হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি। অন্য সব পুজোয় ব্রাহ্মণ প্রয়োজন হলেও এই পুজোর ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা। শোনা যায়, চড়ক পুজোর সন্ন্যাসীরা সমাজের তথাকথিত নীচু সম্প্রদায়ের লোক। সেই রীতিই বরাবর মেনে আসা হচ্ছে। এই পুজোয় এখনও কোনও ব্রাহ্মণের প্রয়োজন পড়ে না। সেই হিসেবে যে-সমাজ মূলত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির অনুগামী, সেই সমাজের প্রেক্ষিতে এই পুজো একটা সামাজিক বিপ্লব।