কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভোল বদলায় বিরিয়ানি, এক ডজন বিরিয়ানি কথা

পার্সিদের হাত ধরে এদেশে পা রেখেছিল বিরিয়ানি। আফগানিস্তানের সিল্ক রুট নাকি কালিকট বন্দর কোন পথে প্রথম বিরিয়ানি এদেশে আসে তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তবে ধীরে ধীরে দেশের জাতীয় খাবারে পরিনত হয়েছে বিরিয়ানি। নবাব ওয়াজিদ শাহের হাত ধরে বিরিয়ানি আসে কলকাতায়, ঔরঙ্গজেবের হাত ধরে জন্ম হয় হায়দরাবাদি বিরিয়ানির। জাতি, ভাষার বৈচিত্রের মতোই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিরিয়ানিও তাই বৈচিত্রময়। রইল তেমনই এক ডজন বিরিয়ানির কথা।

Updated By: Sep 17, 2015, 01:39 PM IST
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভোল বদলায় বিরিয়ানি, এক ডজন বিরিয়ানি কথা

ওয়েব ডেস্ক: পার্সিদের হাত ধরে এদেশে পা রেখেছিল বিরিয়ানি। আফগানিস্তানের সিল্ক রুট নাকি কালিকট বন্দর কোন পথে প্রথম বিরিয়ানি এদেশে আসে তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। তবে ধীরে ধীরে দেশের জাতীয় খাবারে পরিনত হয়েছে বিরিয়ানি। নবাব ওয়াজিদ শাহের হাত ধরে বিরিয়ানি আসে কলকাতায়, ঔরঙ্গজেবের হাত ধরে জন্ম হয় হায়দরাবাদি বিরিয়ানির। জাতি, ভাষার বৈচিত্রের মতোই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিরিয়ানিও তাই বৈচিত্রময়। রইল তেমনই এক ডজন বিরিয়ানির কথা।

১. অওয়াধি বিরিয়ানি

বিরিয়ানির ইতিহাস ঘাঁটলে অওয়াধি বিরিয়ানিই বোধহয় হবে সবথেকে আদি নাম। লক্ষ্ণৌর অওয়াধি বিরিয়ানির অনুপ্রেরণা নিয়েই সারা ভারতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিরিয়ানি। ঐতিহ্যশালী পুক্কি প্রথা মেনেই রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। মশলার সঙ্গে আধসেদ্ধ করা হয় মাংস, অন্যদিকে দারচিনি, জয়িত্রী ও কেসর সহযোগে সেদ্ধ করা হয় সুগন্ধী বাসমতী চাল। হাঁড়িতে এই চাল ও মাংস পরতে পরতে সাজিয়ে দমে রান্না হয় অওয়াধি বিরিয়ানি। হালকা কমলা রহের চালের মাঝে তুলতুলে নরম মাংসের সুস্বাদু পদ অওয়াধি বিরিয়ানি।

২. হায়দরাবাদি বিরিয়ানি

প্রাচীনত্বের বিচারে অওয়াধি বিরিয়ানি পরেই স্থান হায়দরাবাদি বিরিয়ানি। কচ্ছি বা 'কাঁচা' পদ্ধতিতে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। কাঁচা মাংস, চাল ও মশলা একসঙ্গে হাঁড়িত দিয়ে রান্না হয় এই বিরিয়ানি। প্রচুর মশলা ও শুকনো ফল এই বিরিয়ানির বৈশিষ্ট্য। সবশেষে ওপরে ছড়ানো হয় ভাজা পেঁয়াজ। মূলত ইরানের রন্ধন পদ্ধতি এই কচ্ছি।

৩. কলকাতা বিরিয়ানি

নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ যখন কলকাতায় আসেন সেই সময় বিরিয়ানিতে নরম মাংসের পরিবর্ত হিসেবে চালু করেন আলু। বর্তমানে কলকাতার বিরিয়ানির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই আলু। শুধু আলু নয়, এখন কলকাতার বিরিয়ানি মানেই মাংসের পাশে আলু ও ডিম। জনপ্রিয়তার বিচারে অওয়াধি ও হায়দরাবাদি বিরিয়ানির পরেই স্থান কলকাতা বিরিয়ানির।

৪. থালাসারি বিরিয়ানি ও কোঝিকোড় বিরিয়ানি

কেরল উপকূলের ছোট শহর থালাসারিতে জন্ম থালাসারি বিরিয়ানি। তবে বাসমতী চাল নয়, স্থানীয় জিরাকসল চালে রান্না হয় এই বিরিয়ানি। মাংস ও চাল আলাদা আলাদ ভাবে রান্নার পর ওপরে সাজিয়ে দেওয়া হয় ভাজা পেঁয়াজ, কাজু ও কিসমিস। কেরলে জয়নপ্রিয়তায় থালাসারি বিরিয়ানির পরেই আসে মাপিলা বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানিরই অপর নাম কোঝিকোড় বিরিয়ানি। কালিকট বন্দরে ঘাঁটি গেঁড়ে মাপিলা গোষ্ঠী এই বিরিয়ানির প্রবর্তন করে। শুধু বিরিয়ানি নয়, মাপিলাদের স্বতন্ত্র সব রেসিপি কালিকটের ঐতিহ্য।

৫. দিন্দিগুল থালাপাকাট্টি বিরিয়ানি

তামিল নাড়ুর দিন্দিগুল শহরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে থালাকাপাট্টি বিরিয়ানি ইতিহাস। শ্রীরাগা সাম্বা চাল ও কান্নিভাড়ি মাংসের মেলবন্ধনে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। তবে এই বিরিয়ানি সুখ্যাতি মূলত সুগন্ধীর জন্য।

৬. কল্যাণী বিরিয়ানি

কর্ণাটকের বিদার অঞ্চলের কল্যাণী বিরিয়ানি গরীবের হায়দরাবাদি বিরিয়ানি হিসেবে খ্যাত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে একঘরে হয়ে পড়েন কল্যাণীর নবাবরা। কথিত আছে, মুঘল রাজসভার এক বাবুর্চির হাতে বাস্তবায়িত হয় কল্যাণী বিরিয়ানি। গরুর মাংসের বড় টুকরো, গোটা জিরে, গোটা ধনে ও টমেটো সমৃদ্ধ এই বিরিয়ানির সঙ্গে প্রায় কোনও মিলই নেই মুঘলাই বা হায়দরাবাদি বিরিয়ানির।

৭. অম্বর বিরিয়ানি

তামিলনাড়ুর আকরোট এলাকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই বিরিয়ানি। লম্বা বাসমতী চালের পরিবর্তে এই বিরিয়ানিতে ব্যবহার করা হয় ছোট শ্রীরাগা সাম্বা চাল। পাক্কি পদ্ধতিতে দমে রান্না করা হয় বিরিয়ানি। রসুন, দারচিনি, লবঙ্গ, পুদিনা, লঙ্কা, লেবু সহযোগে এই বিরিয়ানি যেন একেবারেই স্বতন্ত্র। দইয়ে ভেজানো মাংসের স্বাদও যেন অপূর্ব।

৮. ভাটকালি বিরিয়ানি

ম্যাঙ্গালোর উপকূলের ছোট শহর ভাটকলে জন্ম এই বিরিয়ানির। এখানে মাংস, চাল, মশলা সব আলাদা আলাদ ভাবে তৈরি করা হয়। পরিবেশনের মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে একসঙ্গে মেশানো হয় সবকিছু। মশলার মধ্যে থাকে পেঁয়াজ, লঙ্কা ও অন্যান্য মশলা। যার সঙ্গে মেশানো হয় চাল ও মুরগির মাংস। ওপরে সাজানো হয় কারিপাতা।

৯. মেমোনি বিরিয়ানি

গুজরাতে বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন বোহরি, মেমন প্রত্যেকেরই রয়েছে বিরিয়ানি রান্নার স্বতন্ত্র পদ্ধতি। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের সিন্ধি বিরিয়ানির পদ্ধতি মেনে রান্না করা হয় মেমনি বিরিয়ানি। তবে সিন্ধি বিরিয়ানিতে ব্যবহৃত টমেটো বা আলু থাকে না মেমনি বিরিয়ানিতে। থাকে না কেসরও। চালের রঙ এখানে পুরোটাই আসে মশলা থেকেও। স্বাদেও মেমনি বিরিয়ানি বেশ মশলাদার, ঝাল ঝাল।

১০. বেরি বিরিয়ানি

কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় এলাকার বেরি বিরিয়ানির স্বাদ ম্যাঙ্গালোর বিরিয়ানির কাছাকাছি। তবে সারা ভারতের মধ্যে সবথেকে হালকা বোধহয় এই বিরিয়ানিই। ঘি এর গন্ধে মথিত এই বিরিয়ানি রান্নার আগে সারা রাত মশলা মাখিয়ে রাখা হয় চাল, চিকেন, মাটন, বিফ ও চিংড়ি।

১১. তেহরি

মুঘল হেঁসেলে ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের জন্য রান্না হতো তেহরি বিরিয়ানি। সম্পূর্ণ নিরামিষ এই বিরিয়ানিতে মাংসের বদলে ব্যবহার করা হয় আলু। কাশ্মীরের অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড তেহরি।

১২. কামপুরি বিরিয়ানি

অসমের মুসলিম শহর কামপুরের বিরিয়ানি বিখ্যাত রঙের কারণে। প্রথমে মুরগির মাংস গাজর, বিন, আলু, ক্যাপসিকাম ও মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। পরে এই মাংস মেশানো হয় চালের সঙ্গে।

এই তালিকা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন শহরে দেখতে পাওয়া যায় বিরিয়ানির বিবর্তনের বিভিন্ন নিদর্শন। অন্ধ্র বিরিয়ানি, চেট্টিনাড় বিরিয়ানি, বম্বে বিরিয়ানি, হায়দরাবাদের দুধ কি বিরিয়ানি ঠাঁই পাবে সেই তালিকায়।

 

.