ঠগবাজদের পৃথিবীটায় আর আলাদা করে একটা দিন ঠকানোর জন্য কেন?

Updated By: Apr 1, 2016, 09:53 PM IST
ঠগবাজদের পৃথিবীটায় আর আলাদা করে একটা দিন ঠকানোর জন্য কেন?

স্বরূপ দত্ত

 

আজ ১ এপ্রিল। ভালো করে বললে এপ্রিল ফুল। আমাদের দেশে এই দিনটা বোকা বানানোর দিন। ঠকানোর দিন। অনাবিল একটু হাসির জন্য প্রিয়জনকে বোকা বানানো। আপাতদৃষ্টিতে কিংবা খুব গভীরভাবে খতিয়ে দেখলেও এই এপ্রিল ফুলে কোনও খারাপ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং, ভালোই লাগে। রোজকার জীবনে সারাদিন চাপের মাঝে, প্রিয়জনের থেকে একটু ঠকতে ভালো লাগবে না? তার হাসিটাতেই তো আমার প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এখন ওয়েবসাইটের যুগে এপ্রিল ফুল আরও একটা মাত্রা এনে দিয়েছে। এখন ওয়েবসাইটে নকল খবর দিয়ে মানুষ ঠকানো হয়। খবরের নিচে লেখাও থাকে, এটা শুধুই একটু মজা করার জন্য। তাতে পাঠকরাও মজা পান। যারা এমন খবর দেন, তাঁরাও একটু মজা পান। কিন্তু এমনটা করতে এবার আর মন চাইল না। আগামিদিনেও হয়তো আর কখনও মন চাইবে না।

এপ্রিল ফুল কথাটা হয়ে যাক এবার থেকে 'এপ্রিল রেসপেক্ট' - ১ এপ্রিল, ঠকানোতো বহু বছর ধরে চলল। এবার থেকে এই দিনটায় না হয় আমরা একে অপরকে আর একটু বেশি সম্মান করি। রোজকার জীবনে তো কত লোককেই অসম্মান করে ফেলি আমরা। একটা দিন না হয়, নিজেদের সেই অন্যায়গুলোর অনুতাপে একটু সামনের মানুষকে বেশি সম্মান দিই। প্রশ্ন হল, কেন ঠকাবো না আমরা লোককে? এইজন্যই যে, আজ সমাজটা অনেক বদলে গিয়েছে। যখন থেকে এপ্রিল ফুল করার রেয়াজ শুরু হয়েছিল, সেইসময়কার সমাজ, মানুষের মানসিকতার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সেই সময় মানুষ একটা দিন শুধুই একটু মজা করার জন্য মানুষকে ঠকাতো। আজ প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্তে মানুষ, মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছে। সন্তান ঠকাচ্ছে বাবা-মাকে, আত্মীয় ঠকাচ্ছে তাঁর পরিজনদের। বিক্রেতা ঠকাচ্ছে ক্রেতাকে। ভালোবাসার সম্পর্কে প্রেমিক-প্রেমিকা ঠকাচ্ছে উভয়কে। রাজনৈতিক নেতা ঠকাচ্ছে দেশের মানুষকে। সমাজের যতরকম স্তর আপনি বার করতে পারবেন, এর প্রত্যেক স্তরের কেউ না কেউ কখনও না কখনও অন্যকে অবিরত ঠকিয়ে চলেছে। কখনও ঠকানোর ফলে, ঠকে যাওয়া মানুষটার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কখনও ঠকানোর ফলে ঠকে যাওয়া মানুষটার হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর কলকাতার বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর তো আমজনতাও বলা শুরু করেছে যে, লোক এখন এত ঠকাচ্ছে যে মানুষের জীবনটাও চলে যাচ্ছে।

সত্যিই তো। এখনও পর্যন্ত জানি না, এই ঘটনায় কেউ সত্যি সত্যি ব্রিজ বানানোর সময় ঠকিয়েছিলেন কিনা। যদি সত্যিই কেউ ঠকিয়ে থাকেন, তাহলে তো আজ তাঁর জন্য এতগুলো প্রাণ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। যে ঠকানোতে মানুষের প্রাণ চলে যায়, সেই ঠকানো শব্দটাকেই যে আজ থেকে বড় ঘেন্না লাগছে। একটা মানুষের প্রাণের দামের থেকে বেশি কীভাবে আমার ভালো থাকা হতে পারে! না, ভাবতে পারছি না। এই ঠকানোতে আজ থেকে আর নেই। এটা আমার অঙ্গীকার।

এতদিন তবু বুঝতাম যে, ঠকালে মানুষের মনে কষ্ট হয়। তাই কাউকে ঠকাতে নেই। কিন্তু আজ তো আর রাজু বন গয়া জেন্টলম্যানের মতো সিনেমাতেই শুধু দেখছি না যে, কারও ঠকানোতে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আজ যে চোখের সামনে বারবার দেখতে হচ্ছে ভয়ঙ্কর সিসিটিভি ফুটেজটা। কীভাবে এতগুলো মানুষের দেহটা বিকৃত হয়ে নিথর হয়ে গেল। না, এ পৃথিবীতে কারও নিজের লাভের জন্য নৈতিক শিক্ষাকে ঠকিয়ে অন্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার নেই। এই অন্যায় বন্ধ করতে পারে কেবল মানুষ। আমি, আপনি, আমরা। সবাই। তাই করতে হবে। পৃথিবীর প্রাচীন ঐতিহ্য, উত্‍সব, রীতি নীতিগুলো আজও মেনে চলতে হলে, এই পৃথিবীটাকে মানসিক দিক থেকে সেদিনের মতো রাখাটাও দরকারি ছিল। সেই পৃথিবীটা আজ ঠগবাজদের পৃথিবী হয়ে গিয়েছে। তাহলে আর একটা দিন আলাদা করে ঠকানোর দিন রাখা কেন! না, আমার অঙ্গীকার, আমি কাউকে ঠকাবো না। আপনিও একটা শপথ নিন না আজ থেকে। যদি আমাদের পৃথিবীটা আবার আগের মতো সুন্দর হয়ে যায়।

.