চরিত্র গঠনের শুরু হল যে ৪ টে জিনিস দিয়ে

Updated By: Apr 14, 2016, 10:06 AM IST
চরিত্র গঠনের শুরু হল যে ৪ টে জিনিস দিয়ে

স্বরূপ দত্ত

 

আজ পয়লা বৈশাখ। মানে, বছরের শুরুর দিন। মানে প্রথম। মানে, সূত্রপাত। মানে মূল। মানে নতুন। এমন দিনে আজ অনেক প্রথম কিছুই মনে আসছে আলোচনা করার জন্য। তবু, তারমধ্যে বেছে নেওয়া আমার আজকের আলোচনার জন্য বেছে নেওয়া প্রথম চারটি বিষয়কে। সেটাও রামায়ণ থেকে। ভাবছেন রামায়ণ থেকে কেন! কারণ, খুব ছেলেবেলা থেকেই জেনেছি আর শিখেছি আমাদের দুটো মহাকাব্য। রামায়ণ আর মহাভারত। আমার ক্ষেত্রে শুরুটা হয়েছিল দুইয়ের মধ্যে রামায়ণ দিয়েই। মনে হয় আপনারও। তাই শুরুর সেই মহাকাব্যর থেকে বেছে নেওয়া চার এমন শুরু, যা চিরকাল মনে দাগ কেটে এসেছে। ভেবে এসেছি যে, এই চার শুরুই আমাদের আধুনিক সভ্যতার চার চারিত্রিক স্তম্ভ হয়ে গিয়েছে আমাদের। তাহলে শুরুর, শুরুটা করেই ফেলি।

১) প্রথম আধুনিক নারী শূর্পনখা - রামায়ণের যুগে তো বটেই, আজকের দিনেও এই সমাজে প্রেমের প্রস্তাব বা বিয়ের প্রস্তাবের সিংহভাগটাই আসে পুরুষের পক্ষ থেকে। নারী যদি প্রেম প্রস্তাব দেয়, তাহলে কেমন যেন সেই নারী অন্যের চোখে 'খেলো' হয়ে যায়। আর সে যুগে তো নারী হাজার পুরুষের মধ্যে মুখ বুজে একবার মুখ তুলে কারও গলায় মালা পড়িয়ে দিলেই হয়ে যেত বিয়ে। শূর্পনখা দেখতে খারাপ ছিলেন। রাক্ষসী যে। কিন্তু বুকের পাটা ছিল। গিয়ে লক্ষণকে বলতে পেরেছিলেন, 'আমায় বিয়ে করবে?' নারী এগিয়ে গেলে পুরুষ তো সেদিন থেকেই শিখে নিয়েছিল, তাঁর নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গ করতে। তাই শূর্পনখার নাক ঘ্যাচাং। কিন্তু ওই প্রেম প্রস্তাব দেওয়াটা ছেলেবেলা থেকেই মনে দাগ কেটেছিল। মনে হয়েছিল, সত্যি প্রথম আধুনিক নারী তিনিই।শূর্পনখা।

২) কৈকেয়ী প্রথম নারী হিসেবে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করলেন স্বামীকে - হুম। দশরথ কবে বলেছিলেন যে, তোমার একটা জিনিস পাওনা আছে। সেই পাওনা যে এমন কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেবেন কৈকেয়ী, তা আর সে যুগে তিনি কীভাবে বুঝবেন! মাঝখান থেকে এই ব্ল্যাকমেল জিনিসটাকে পৃথিবীতে শিখিয়ে গেলেন কৈকেয়ী। হয় আমার কথা রেখে ওটা করো। নাহলেই তোমার দিকে আঙুল তুলব, তোমার কথার দাম নেই বলে। আজকের দিনে যখন কেউ কথা রাখে না-তাই, সাধারণ ঘটনা, সেখানে দশরথ অন্তত দুঃখ পেয়েও নিজের কথা রেখেছিলেন। কী জানি, একটা আফশোস হয়। যদি সেই প্রথম দিন থেকে তিনি কথা না রাখতেন, তাহলে হয়তো আজকের এই ব্ল্যাকমেল ব্যাপারটাই থাকতো না।


৩) ভাইয়ে-ভাইয়ে প্রথম পরিকল্পিত খুন বালিকে করেন সুগ্রীব - তিরটা যিনিই মারুন। সুগ্রীব হলেন আমার চোখে সেই ভাই, যিনি নিজের ভাইকে মারতে উদ্যত হলেন। এবং পরিকল্পনা করলেন। নাটক মঞ্চস্থ করলেন। অস্ত্র হাতে অন্যকে রেখে গেলেন গাছের আড়ালে। সুযোগ বুঝেই তির ছুড়ে দিলেন নিজের ভাইয়ের বুকে। সেই শুরু। যে রোগ থেকে আজও বেরোতে পারল না আমাদের সমাজ। তাই আজকের দিনে যখন এত ভাইয়ে-ভাইয়ে হানাহানি, সুগ্রীবকে তো তার দায় নিতে হবে আজও। জঘন্য কাজটা তো তিনিই শুরু করেছিলেন। হয়তো দোষ ত্রুটি ছিল বালির। কিন্তু তিনি তো সুগ্রীবের ভাই। তাই খুন করাটা উচিত হয়নি।

৪) নারীর বিপদে পুরুষের প্রাণবাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়ার শুরু তো জটায়ুকে দেখেই - সীতাকে 'কিডন্যাপ' করে নিয়ে যাচ্ছেন রাবন। নারী কণ্ঠের চিত্‍কার। বাঁচার আর্তি। শুনতে পেলেন বুড়ো জটায়ু। কিন্তু পুরুষের বয়স বাড়তে পারে। বীরত্ব নয়। সেই কথাটাই যেন নিজের ডানা দুটো হারিয়ে বুঝিয়ে গিয়েছিলেন। শক্তিশালী রাবনের হাত থেকে সীতাকে বাঁচাতে হয়তো তিনি পারেননি। কিন্তু শিখিয়ে গিয়েছিলেন প্রথম পুরুষ হিসেবে নারীর ইজ্জত বাঁচানোটাই পুরুষের প্রথম ধর্ম।

.