Padma Vibhushan Dilip Mahalanabis: কেন মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ পেলেন দিলীপ মহলানবিশ? জানুন তাঁর অসাধারণ কৃতিত্ব...
Posthumous Padma Vibhushan to Dilip Mahalanabis: শুধু চিকিৎসাক্ষেত্রেই নয়, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে, যুদ্ধের ইতিহাসেও তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এমন একটি মানুষ পদ্মবিভূষণ পাওয়ায় গৌরব বাড়ল বাঙালির।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মরণোত্তর 'পদ্মবিভূষণ' পেলেন দিলীপ মহলানবিশ। প্রসঙ্গত এবার 'পদ্মশ্রী' পেলেন পশ্চিমবঙ্গের তিন কৃতী-- মঙ্গলকান্তি রায়, ধনীরাম টোটো ও প্রীতিকণা গোস্বামী। এঁরা তিনজনেই নিজেদের কাজ দিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন। ক্ষুদ্র জনজাতির মধ্যে পড়ে আলিপুরদুয়ারের টোটো সম্প্রদায়। খুব অল্প সংখ্যক টোটো শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন। এঁদেরই একজন ধনীরাম টোটো। টোটো সম্প্রদায়ের মানুষ যে ভাষা ব্যবহার করেন তার হরফ নির্মাণ করেছেন ধনীরাম। এদিকে প্রাচীন ঐতিহ্যের কাঁথাস্টিচকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ২৪ পরগনার প্রীতিকণা গোস্বামী। আর সারিন্দার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে সারিন্দার জাদুতে মুগ্ধ করতে বহুদিন ধরে সারিন্দা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মঙ্গলকান্তি রায়। কিন্তু মরণোত্তর 'পদ্মবিভূষণ' পাওয়া দিলীপ মহলানাবিশ কে?
আরও পড়ুন: ঘোষিত হল পদ্মসম্মান, দেখে নিন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কারা পুরস্কৃত হলেন...
'ওআরএস ম্যান' নামে পরিচিত দিলীপ। ল্যানসেট জার্নাল তাঁর কাজকে বিশ শতকের 'সম্ভাব্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সংক্রান্ত অগ্রগতি' বলে অভিহিত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁ সীমান্তে কলেরায় আক্রান্ত হাজার হাজার মানুষকে বাঁচানোর নেপথ্যে মূল ভূমিকা ছিল তাঁর। ১৯৭১ সাল থেকে ভারত এবং সারা বিশ্বে অন্তত ৭ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে তাঁর উদ্ভাবিত বস্তুটি। এ হেন বিরল প্রতিভাসম্পন্ন ও বিরল ক্ষমতাসম্পন্ন চিকিৎসক প্রয়াত হয়েছেন গত বছরে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
আরও পড়ুন: প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে বিরল এই তথ্যগুলি কি আপনি জানেন?
১৯৯৪ সালে 'রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সে'র সদস্য নির্বাচিত হন দিলীপ। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোলিন পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে থাইল্যান্ড সরকারের থেকে পেয়েছিলেন প্রিন্স মাহিদোল পুরস্কার। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটিয়ে বিশ্বব্যাপী বিপুল প্রশংসা কুড়োলেও, এই বাঙালি চিকিৎসক নিজের দেশেই স্বীকৃতি পাননি বলে তাঁর নিকট পরিসরে একটা আক্ষেপ ছিলই। মৃত্যুর পরে পদ্ম সম্মান পাওয়ায় তাঁর অনুরাগীদের সেই আক্ষেপটা অন্তত যাবে।
৭১'এর যুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ কলেরা মহামারি হয়েছিল। সেই সময়ে শিবিরে স্যালাইন ফুরিয়ে গিয়েছিল। এদিকে বিকল্প ব্যবস্থা না করলে মরতে হবে অসংখ্য মানুষকে। তখনই এগিয়ে এসেছিলেন দিলীপ মহলানবিশ। জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সহায়তায় ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ওআরএস তৈরি করেছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তথা ক্লিনিক্যাল বিজ্ঞানী এই দিলীপ মহলানাবিশ। চার চা চামচ টেবিল সল্ট, তিন চা চামচ বেকিং সোডা এবং ২০ চা চামচ বাণিজ্যিক গ্লুকোজের মিশ্রণে ওআরএস তৈরি করলেন তিনি। তখনও পর্যন্ত গবেষণাগারের ঘেরাটোপেই ছিল এই ওআরএস। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন ডা. মহলানবিশ। এই ওআরএস ব্যবহারের ফলে দু'প্তাহের মধ্যে তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা শিবিরগুলিতে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ থেকে ৩.৬ শতাংশে নেমে এসেছিল। এরই জেরে ঘুরে গিয়েছিল যুদ্ধের গতি।
অর্থাৎ, শুধু চিকিৎসাক্ষেত্রেই নয়, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে, যুদ্ধের ইতিহাসেও তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এমন একটি মানুষ পদ্মবিভূষণ পাওয়ায় গৌরব বাড়ল বাঙালির।