গম কেলেঙ্কারিতে সরানো হল ফুড কন্ট্রোলারকে
অবশেষে গম কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যবস্থা নিল রাজ্য সরকার। সরিয়ে দেওয়া হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফুড কন্ট্রোলার স্বরূপ মণ্ডলকে। তাঁর জায়গায় জেলার নতুন ফুড কন্ট্রোলার হচ্ছেন নিত্যরঞ্জন পোদ্দার। তিনি বীরভূমের ফুড কন্ট্রোলারের দায়িত্বে ছিলেন। এই ঘটনায় খাদ্য দফতরের কোনও ইন্সপেক্টর জড়িত নন বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
অবশেষে গম কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যবস্থা নিল রাজ্য সরকার। সরিয়ে দেওয়া হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফুড কন্ট্রোলার স্বরূপ মণ্ডলকে। তাঁর জায়গায় জেলার নতুন ফুড কন্ট্রোলার হচ্ছেন নিত্যরঞ্জন পোদ্দার। তিনি বীরভূমের ফুড কন্ট্রোলারের দায়িত্বে ছিলেন। এই ঘটনায় খাদ্য দফতরের কোনও ইন্সপেক্টর জড়িত নন বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এফসিআই কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত ফ্লাওয়ার মিল মালিকদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এদিকে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একমাস অন্তর ফুড ইন্সপেক্টরদের বদলি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এখন থেকে খাদ্যপণ্যের প্রতিটি বস্তায় মার্কিং করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। মোট কী পরিমাণ খাদ্যপণ্য গুদাম থেকে বার হল সেবিষয়ে লিখিত তথ্য খাদ্য দফতরকে জানাতে হবে। একইসঙ্গে লগবুক শিট সংরক্ষণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য দফতর।
কলকাতাতে রীতিমতো সক্রিয় খাদ্যশস্য পাচার চক্র। রবিবার গম পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে এই সিদ্ধান্তে আসেন এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের গোয়েন্দারা। শনিবার বাংলাদেশে পাচারের সময় কলকাতা বন্দর এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে গম বাজেয়াপ্ত হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল পাণ্ডারা এখনও অধরা। খাদ্যশস্য পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কলকাতাতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এই চক্র। চক্রে সামিল বিভিন্ন মিল মালিক, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং দালাল বা ফড়েরা। শনিবার বাংলাদেশে পাচারের সময় কলকাতা বন্দর থেকে সাড়ে চার হাজার কুইন্টাল গম বাজেয়াপ্ত করেন এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের গোয়েন্দারা। জানা গেছে, ওই গম তিনটি ময়দা মিলে যাওয়ার কথা ছিল। সেগুলি হল-বজবজ চড়িয়ালের মা তারা ফ্লাওয়ার মিল, জোকার গণপতি ফ্লাওয়ার মিল, এবং বজবজের আরার অ্যাগ্রো ফ্লাওয়ার মিল।
নিয়ম হল, এফসিআই গুদাম থেকে গম কিনবেন মিল মালিকরা। ডেলিভারি অর্ডারে সই করবেন সংশ্লিষ্ট জেলার কন্ট্রোলার। এরপর সেই গম মিলে নিয়ে গিয়ে ভাঙিয়ে আটার প্যাকেট ডিস্ট্রিবিউটারদের হাতে তুলে দেবেন মিল মালিকরা। ডিস্ট্রিবিউটাররা সেই আটা পৌঁছে দেবেন রেশন ডিলারদের কাছে। এরপর অন্ত্যোদয় যোজনার অধীনে রেশন দোকান থেকে সস্তায় সেই আটা পাবেন দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষ। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পেরেছে এক্ষেত্রে ওই তিন মিল মালিক নিজেরা এফসিআই গুদামে না গিয়ে দীপক আগরওয়াল, লোহার সিং এবং দীনেশ আগরওয়াল নামে তিন ব্যক্তিকে অথরাইজড লেটার দিয়ে দেয়। দীপক আগরওয়াল পূর্ব হাওড়ার বাসিন্দা।লোহার সিংয়ের বাড়ি কলকাতার ভবানীপুরে। দীনেশ আগরওয়াল দক্ষিণ কলকাতার হাজরার বাসিন্দা।
এরা প্রত্যেকেই ফড়ে বা দালাল। অথরাইজড লেটারের মাধ্যমে এরা তিনজন এফসিআই গুদাম থেকে গম কিনে সরাসরি এক্সপোর্টারের কাছে বেচে দেয়। এক্সপোর্টার মারফত সেই গম চলে যাচ্ছিল বাংলাদেশে। সম্প্রতি সারা দেশে অনাবৃষ্টির কারণে ধান ও গম রফতানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেইকারণে চোরাই পথেই গম পাচার করা হচ্ছিল। এখনও পর্যন্ত দীপক আগরওয়াল, লোহার সিং এবং দীনেশ আগরওয়ালের নাগাল পায়নি পুলিস। তিন ময়দা মিল কর্তৃপক্ষেরও খোঁজ চলছে। রবিবার বজবজের মা তারা ময়দা মিলে গিয়ে দেখা যায়, শুনশান মিল। রাতারাতি খুলে ফেলা হয়েছে মিলের বোর্ডটিও। পাচার চক্রের সঙ্গে এফসিআইয়ের কেউ জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বন্দর এলাকার বিভিন্ন ডক থেকে অনেকদিন ধরেই খাদ্যশস্য পাচার চলছে বলে জানিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ।