সবই করোনাভাইরাস, তবে একেবারে নির্দিষ্ট কিছু গুণাগুণ দিয়ে তার 'স্ট্রেন' বোঝা যায়

প্রত্যেকটির ধরনের একটা নিজস্বতা বা স্বতন্ত্রতা থাকে। সেটাই হয়ে যায় তার ক্ষেত্রে 'স্ট্রেন'।

Updated By: Dec 21, 2020, 03:43 PM IST
সবই করোনাভাইরাস, তবে একেবারে নির্দিষ্ট কিছু গুণাগুণ দিয়ে তার 'স্ট্রেন' বোঝা যায়

সুমন পোদ্দার (ভাইরোলজিস্ট)

ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের 'লেটেস্ট স্ট্রেন' এক ভয়াবহ মাত্রার সংক্রমণ শুরু করেছে সে দেশে। দেশের করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে স্বীকারও করেছে সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানককের মতে, দেশের করোনা পরিস্থিতি এক অবিশ্বাস্য কঠিন পর্যায়ে পৌঁছেছে!

এতদিন তো মানুষ করোনা নিয়ে ঘোরতর বিপর্যস্ত ছিলেন। সাড়া বিশ্বে দারুণ সাড়া পড়ে গিয়েছিল এই অতিমারী নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া নিয়ে। এর মধ্যেই ব্রিটেনে করোনার নতুন স্ট্রেনের হামলা।

মানুষের মনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে,কী এই স্ট্রেন? 

বিষয়টা মানুষ জাতি এবং তার বিভিন্নতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। বোঝার সুবিধার জন্য প্রথমে বলি, আমরা সবাই মানুষ। এ বার যদি মানুষের মধ্যে ভাগ করি, তা হলে আমাদের মধ্যে কেউ ভারতীয়, কেউ পাকিস্তানি, কেউ বাংলাদেশি। এ বার যদি আমরা ভারতীয়দের মধ্যে ভাগ করি, তবে দেখব, কেউ বাঙালি, হিন্দুস্থানি, কেউ মাড়োয়ারি ইত্যাদি। আবার বাঙালির মধ্যে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম ইত্যাদি। এই যে ক্যাটেগরির বিষয়টা 'কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিমে' এসে শেষ হল, এটাকেই মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, মানুষের 'স্ট্রেন'।

এ বার এই ব্যাখ্যাটাকে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাক। প্রথমে বলি, ব্যাকটেরিয়া হোক বা ভাইরাস-- তার নিজস্ব একটা স্পেসিফিক প্রোজেনি থাকবে। তাকে আমরা তার প্রজাতিও বলতে পারি। এই প্রজাতির কিছু নিজস্ব গুণাগুণ থাকবে। যে গুণ তাকে ওই প্রজাতিতেই রাখে, ওখান থেকে বের করে দেয় না। কিন্তু পাশাপাশি, তার জন্য একটা স্বতন্ত্রতাও তৈরি করে দেয়, যা দিয়ে তাকে আমরা চিনতে পারি। সেই হিসেবে সবই তো কোভিড ভাইরাস। তবে প্রত্যেকটির ধরনের একটা নিজস্বতা বা স্বতন্ত্রতা থাকে। সেটাই হয়ে যায় তার ক্ষেত্রে 'স্ট্রেন'। একটু সহজ-সরল ভাবে বিষয়টিকে অন্য এক প্রকারের করোনাভাইরাস বলেও চিহ্নিত করা যায়।

এ বার ব্রিটেনের প্রসঙ্গে আসি। ব্রিটেনের এই নতুন করোনা স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রামক। মানে, এর সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। এর আক্রমণে আক্রান্ত অসুস্থ হবে তবে এই ধরনটির 'কিলিং পাওয়ার' বেশি, সেটা এখনই প্রমাণিত নয়। ফলে অযথা আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই। 

করোনাভাইরাসের নিত্য নতুন ধরন দেখা যায়। সিঙ্গাপুরে যেমন করোনার এমন একটা স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছিল, যেটা অনেক বেশি 'অ্যাগ্রেসিভ' ছিল, অনেক বেশি 'কিলার' ছিল, কিন্তু তার 'ইনফেকটিভিটি' কম ছিল। তাই সেটা সেভাবে ছড়ায়নি। ব্রিটেনের এই নতুন স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রামক। এটা বোঝার আগেই ছড়িয়ে যাবে। 

আসলে এটা মিউটেশনের জন্য ঘটে। সবই করোনা, তবে মিউটেশন হয়ে নতুন করোনা স্ট্রেন তৈরি হয়ে যায়। ধরা যাক, একটা স্ট্রেন 'a'; তা থেকে মিউটেশন হয়ে 'b' স্ট্রেন হতে পারে। আবার এই মিউটেশন থেকে একেবারে আলাদা, একেবারে নতুন কোনও স্ট্রেন 'x'-ও হতে পারে, যাকে 'নভেল স্ট্রেন' বলে। যেমন এ বারে করোনা-২ স্ট্রেন ছিল একেবারে 'নভেল স্ট্রেন'।  

Also Read: আজ সন্ধের পরে থাকুন দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তখোলা কোনও স্থানে; সাক্ষী থাকবেন বিরল মহাজাগতিক ঘটনার!

.