তাপস পালের মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে বির্তকের ঝড়। কদর্য, কুত্সিত মন্তব্য খোলা মঞ্চ থেকে। খুন থেকে ধর্ষণ বাদ যায়নি কোনওটাই। একজন সাংসদ কী খোলামঞ্চ থেকে এমন প্ররোচনা মূলক মন্তব্য করতে পারেন? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। পুলিসের কী এক্ষেত্রে কোনও ভূমিকা নেই? আইনজীবীরা বলছেন এই ধরনের ঘটনায় পুলিস স্বতঃপ্রনোদিত মামলা করতে পারে। ভারতীয় দন্ডবিধির ১১৫ পুলিস আইনের ২৩ ধারায় ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন
প্রশাসনের সাফাই তাপস পালের বিরুদ্ধে থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় তারাও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তৃণমূল সাংসদকে ঘিরে প্রশাসন এই যুক্তি সামনে আনলেও বিগত কয়েকবছরের ঘটনা কিন্তু অন্য কথা বলছে। সামনে এসেছে পুলিসের অতিসক্রিয়তা। যদিও তা ছিল শাসকদলের পক্ষে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলাদিত্য চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রীর সভায় সারের দাম জিজ্ঞাসা করায় পড়েছিল মাওবাদী তকমা। পুলিস স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করে। কার্টুন কান্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্রের ক্ষেত্রেও পুলিসের অতিসক্রিয়তার নজির সামনে এসেছে। অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে পুলিস। হাজতবাসও করতে হয় অধ্যাপককে। কিন্তু তাপস পালের ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব,নিষ্ক্রিয় পুলিস।
তাপস পালের মন্তব্যের পর ব্যবস্থা নিতে পারত পুলিস। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। উল্টে রাজ্যের পুলিসমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, তাপস পালকে কি তিনি মেরে ফেলবেন? কিন্তু সত্যিই কি কিছু করার ছিল না পুলিসের। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে তাপস পালকে গ্রেফতার করতে পারত পুলিস।
মঙ্গলবার পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসবায় জানিয়েছিলেন, তাপস পালের বক্তব্যে গভীরভাবে মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তরফ থেকে পরে মুকুল রায় জানিয়ে দেন, গোটা ঘটনায় অত্যন্ত অনুতপ্ত তাপস পাল চিঠি দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করে এ ধরনের মন্তব্যের পর ক্ষমতা প্রার্থনা করে চিঠিই কী যথেষ্ট? এমন জঘন্য মন্তব্যের পরও তাপস পালের বিরুদ্ধে পুলিস বা সরকার কোনও আইনানুগ ব্যবস্থাই নেবে না? সরকার যে সে পথেই হাঁটতে চলেছে তা স্পষ্ট হয়ে যায় রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আগুনে আরও ঘি ঢেলে দিল। পুলিস যদি তাপস পালের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করতো, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর দলের সাংসদকে মেরে ফেলার মত অলিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে হোত না। কী করতে পারতো পুলিস? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযুক্ত সাংসদের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্যের জন্য পুলিসের হাতে দু-দুটো হাতিয়ার রয়েছে।
**পুলিস আইনের ২৩ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী তাপস পালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা শুরু করা যেত।
**পুলিস আইনের ২৩ নম্বর ধারা বলছে-- ""অপরাধ এড়াতে সাধারণ মানুষের শান্তিকে বিঘ্নিত করছে এমন তথ্য সংগ্রহ করা এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো পুলিসের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য""
অর্থাত্ এই আইনের জোরে এফআইআরের জন্য বসে না থেকে, পুলিস ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে নদিয়ার পুলিস সুপার তা করেননি। প্রশ্ন উঠছে, জনগণের শান্তির প্রশ্ন জড়িত থাকলেও তাপস পালের বক্তব্যের সিডি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে কি পাঠিয়েছে পুলিস?
ভারতীয় দণ্ডবিধির ১১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সরাসরি কেউ কোনও অপরাধ না করলেও যদি অপরাধের প্ররোচনা বা উস্কানি দেন, কোনও রকম অভিযোগ ছাড়াই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিস।
তাপস পালের বিরুদ্ধে এই আইন অনুযায়ীও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাপস পালের বিরুদ্ধে তাঁর দল কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা পরের কথা। কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাপারে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা। শিরোনামে আসার দুদিন পরও তাপস পালের বিরুদ্ধে কেন পুলিস নীরব, সে প্রশ্নের উত্তরের দায়টা কিন্তু চাপছে রাজ্যের পুলিসমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর ওপরই। এক্তিয়ারে থাকলেও তাপস পালের বিরুদ্ধে সত্বঃপ্রনোদিত ব্যাবস্থা নিচ্ছে না পুলিস। যুক্তি, তাপস পালের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে অতীত বলছে অন্য কথা। অম্বিকেশ মহাপাত্র থেকে শিলাদিত্য চৌধুরী। পুলিসের অতিসক্রিয়তার শিকার হয়েছেন তাঁদের মতো অনেকেই।
আইন বলছে তাপস পালকে গ্রেফতার করা যেতে পারে